মিছিলের জন্য জড়ো হওয়া সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিকেলে বর্ধমানের কালনা গেট বাজারের ঘটনা। সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের লোকজনের ছোড়া ইটের ঘায়ে ও মারধরে তাদের পাঁচ জন জখম হয়েছেন। পুলিশ জানায়, দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বেধেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। গুলি ছোড়ার অভিযোগে এক সিপিএম সমর্থককে ধরেছে পুলিশ।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা শহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান আইনূল হক জানান, এ দিন ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বামফ্রন্টের ভোটের প্রচারে মিছিল করার কথা ছিল। পুলিশের কাছে সে ব্যাপারে অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, “এই মিছিলের জন্য এক ভ্যান সশস্ত্র পুলিশ দেওয়ার কথা ছিল বর্ধমান থানার। কিন্তু দেওয়া হয় কয়েক জন লাঠিধারী পুলিশ। সেই সুযোগে মিছিল শুরুর মুখে তৃণমূল বিনা অনুমতিতে এলাকায় একটি মিছিল শুরু করে। সেই মিছিল থেকেই আমাদের দিকে পাথর ছোড়া হয়। শূন্যে গুলিও চালানো হয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, মিছিলের সামনে থাকা লোকজনকে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। |
ঘটনার পরে শহরের বিজয়তোরণ এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ পথ অবরোধ করেন সিপিএমের কর্মীরা। ছিলেন আইনূল হক, সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক তাপস সরকার, প্রাক্তন পুরপিতা পরিষদ সদস্য তড়িৎ ঘোষ, সিটু নেতা জনার্দন রায় ও নজরুল ইসলাম-সহ অনেকে। আইনূল হকের অভিযোগ, “পুলিশের সামনে যে ভাবে তৃণমূল আমাদের আক্রমণ করেছে, তাতে এই শহরে শান্তিতে ভোট হওয়া সম্ভব নয়। আমি নিজের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় প্রতি দিনই আক্রান্ত হচ্ছি। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচার চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ উপযুক্ত নিরাপত্তাও দিচ্ছে না।”
হামলাকারীদের ধরার দাবিতে এর পরে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। তখনই গুলিভরা আগ্নেয়াস্ত্র-সহ এক সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। বর্ধমানের আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ধৃতের নাম বিশ্বজিৎ ওরফে খোকন সেন। আইনূল হকের দাবি, “কেউ এত বোকা নয় যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে নিয়ে যাবে। আসলে পুলিশ তৃণমূলের সুবিধা করতেই নানা ভাবে আমাদের লোকজনকে গ্রেফতার করতে চাইছে। তাতে পুলিশের মুখোশ আরও খুলে যাচ্ছে। মানুষ তা দেখছেন।”
হামলার কথা উড়িয়ে তৃণমূল নেতা অলোক দাসের পাল্টা অভিযোগ, “মিছিলের আগে সিপিএমের এক কর্মী পিস্তল বের করে গুলি চালান। তার জেরে উত্তেজনা দেখা দেয়। সিপিএমের লোকেরাই আমাদের আক্রমণ করেছে। আমাদের কর্মীরা এই গোলামালে জড়িত নন। উল্টে তাঁরাই মার খেয়েছেন।” |
তৃণমূল অনুমতি ছাড়া মিছিল করেছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বর্ধমান থানা সূত্রে জানানো হয়েছে। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “এ দিন কালনা গেটের কাছে সিপিএমের একটি মিছিল বেরোনোর কথা ছিল। মোট ১৪ জন পুলিশকর্মী সেখানে মোতায়েন করা হয়েছিল। দু’পক্ষের মধ্যে প্রথমে বচসা, পরে ইট-পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চার পুলিশকর্মীর মাথায় ইট লাগে। সিপিএমের মিছিল থেকে বিশ্বজিৎ সেন নামে এক ব্যক্তি গুলি চালান। পরে তাঁকে একটি এইট এমএম পিস্তল ও দু’রাউন্ড গুলি-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে।” তিনি জানান, বিশ্বজিৎবাবু পেশায় হোমগার্ড। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তাঁর অফিসের সামনে বেআইনি ভাবে সভা করার জন্য সিপিএমের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। |