মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির আসন দু’টি দখল করল কংগ্রেস।
সোমবার ওই দু’টি পদের নির্বাচন হয়। ৭০ আসনের জেলা পরিষদে ৪২টি ভোট পেয়ে সভাধিপতি নির্বাচিত হন কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার। তিনি বহরমপুর বিধানসভা এলাকা থেকে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সভাধিপতি পদে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএমের পূর্ণিমা দাস। তিনি পেয়েছেন ২৭টি ভোট। বাকি এক জন সদস্য তৃণমূলের। তিনি অবশ্য এ দিন ভোট দেননি।
৪২-২৭ ভোটে বামফ্রন্টের কোহিনূর বেগমকে পরাজিত করে সহকারী সভাধিপতি নির্বাচিত হন ফরাক্কার ওবাইদুর রহমান। জেলা পরিষদের কংগ্রেসের পরিষদীয় দল নেতা নির্বাচিত হন হরিহরপাড়া থেকে নির্বাচিত আব্দুল নৌমান মণ্ডল। ৭০ আসনের এই জেলা পরিষদে এ বার কংগ্রেস ৪২টি, বামফ্রন্ট ২৭টি এবং তৃণমূল একটি আসন দখল করেছে।
সভাধিপতি নিবার্চনের পরে শিলাদিত্য বলেন, “২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত জেলা পরিষদ কংগ্রেসের দখলে ছিল। যা কিছু উন্নয়ন ওই পাঁচ বছরেই হয়েছে। এ বার সেই থমকে থাকা উন্নয়নেই গতি আনতে চাই।” প্রসঙ্গত, এ বারে সভাধিপতির আসনটি তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত। |
২০০৮ সালে জেলা পরিষদ দখল করে বামফ্রন্ট। তবে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে তারা কংগ্রেসকে হারিয়েছিল। প্রায় সমান সংখ্যক সদস্য থাকায় গত পাঁচ বছরে জেলা পরিষদে নানা কারণে দু-পক্ষের বিবাদ চলছিল। গত দু-বছর ধরে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল জেলা পরিষদ। থমকে ছিল উন্নয়নও।
তবে, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদকে আর্থিক ভাবে শাসক দল কতটা সাহায্য করবে, নির্বাচিত হওয়ার পরে তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শিলাদিত্য। সে ক্ষেত্রে তাঁর ভরসা কেন্দ্রীয় প্রকল্প। তাঁর কাজের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে পানীয় জল প্রকল্প, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্প ও নদীভাঙন রোধ। তিনি বলেন, “জেলাপরিষেদের বিদায়ী বোর্ড কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা খরচ করতে পারেনি। সেই প্রকল্প রূপায়ণে প্রথমে হাত দেওয়া হবে।”
সদ্য বিজয়ী কংগ্রেসের ৪২ জন জেলা পরিষদ সদস্যকে গত তিন দিন ধরে রাখা হয়েছিল বহরমপুর শহরের একটি হোটেল। প্রয়োজনের থেকে ৬টি বেশি আসন দখল করা সত্ত্বেও কেন তাঁদের তিন দিন ধরে হোটেলে রেখে ভোট ‘রক্ষা’ করতে হল?
কংগ্রেসের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, “আমাদের ভোট বাঁচাতে ওঁদের আটকে রাখা হয়েছিল কে বলল! পাঁচ বছর ধরে যাঁরা এক সঙ্গে কাজ করবেন তাঁদের পরিচিত হওয়ার জন্য এক সঙ্গে ছিলেন।”
গত রবিবার সন্ধ্যায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পক্ষ থেকে হোটেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মহিলা সদস্যদের জন্য রেশমের সাদা শাড়ি ও পুরুষ সদস্যদের জন্য পাজামা-পাঞ্জাবি। সোমবার সকালে সেই পোশাকেই বাসে চেপে তাঁরা হোটেল থেকে জেলা পরিষদের সেমিনার হলে পৌঁছন। সেখানেও জেলা পরিষদ আগলে ছিলেন কংগ্রেসের সাত বিধায়ক। সভাধিপতি ও সহকারি সভাধিপতি নির্বাচনের পর তাঁরা ওই বাসেই ফিরে যান দলের জেলা কার্যালয়ে। সেখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন অধীরবাবু।
৩৬ বছরের যুবক শিলাদিত্য বিজ্ঞানের স্নাতক। কলেজ জীবনে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে তিনি ছাত্র পরিষদের শ্রেণি প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালের ভোটে জিতে তিনি মণীন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেসের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের দলনেতা হন। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি ছিলেন বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।
তবে শিলাদিত্যের বিরুদ্ধে রয়েছে দুই সিপিএম নেতা খুনের অভিযোগ। সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক গোপাল মণ্ডল ও এক্রামুল হক খুনের দু’টি মামলায় এবং জেলাশাসকের বাংলো ভাঙচুরের মামলায় অভিযুক্ত তিনি। জেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত সহকারী সভাধিপতি ওবাইদুর রহমান ফরাক্কা বিধানসভা এলাকা থেকে নির্বাচিত। তিনি পেশায় ধুলিয়ানের নূর
মহম্মদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক। |