সেই তিতলি দিয়ে শুরু হয়েছিল। তার পর বরফি, কেয়ার অব স্যর, পরিণীতা একের পর এক চলচ্চিত্রে দেখলাম উত্তরবঙ্গের পাহাড়, অনেক মানুষকে রিলেট করে দিল কুয়াশা, ট্রয় ট্রেন, চা বাগান, কনভেন্ট স্কুলগুলো। ট্যুরিস্টদের বারো মাস উৎসবে পাহাড় এক দিন সত্যি সত্যি মুচকি হেসে উঠে ছিল। আমাদের বাইশের শ্রাবণ কবি নাম দিলেন ঘুম। বাঙালির ম্যাজিক রিয়ালিজম তাই বার বার দার্জিলিঙের ডাকবাক্সে চিঠি হয়ে উড়ে গেছে। তিস্তা রঙ্গিত, বাতাসিয়া লুপ পেরিয়ে অনেক মেমোরি সাদা কালো থেকে কালার হয়েছে কালে কালে। কিন্তু দেশ ভাগের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যাদের নেই, তাদের সামনে রাজ্য ভাগের আন্দোলন, আগুন, বনধ, নোএন্ট্রি বোর্ড, সুইসাইড নতুন করে একটা প্রেক্ষিত তৈরি করে দিচ্ছে। দেশ ভাগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি যে দুটো রাজ্যে পড়েছিল তার মধ্যে থেকে গেছে বাংলা আর পঞ্জাব। সে সময় এই রাজ্য দুটোকে ভোঁতা ছুরি দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কাটা হল। ফলশ্রুতি সবার জানা। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। এর মধ্যে কাণ্ডজ্ঞানহীন দুটো যুদ্ধে সামিল হয়েছে ভারত। বিপক্ষ পাকিস্তান। তেমনই এক সময় নেহেরুর অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাদ্রাজ থেকে তামিলভাষী অঞ্চলগুলো নিয়ে গড়ে উঠল অন্ধ্রপ্রদেশ। আজ ২৯ তম রাজ্যর পথে আবার তেলঙ্গানা। এ তো শুধু ভাঙা নয়। কে বলতে পারে তেলঙ্গানাও ভবিষ্যতে আবারও টুকরো হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না! সুতরাং হোমোজেনাস শব্দ ধীরে ধীরে অর্থ হারিয়ে ফেলছে। এই সব প্রস্তুতিহীন বিপ্লবে একে একে জ্বলেছে বাংলো, পুলিশফাঁড়ি, মানুষ। গণতন্ত্র ফেল করলে প্রথম প্রভাব পড়ে রাজনীতিতে। পাহাড়ের নামী স্কুলে কোনও নেপালি ছেলেমেয়ে পড়তে পারে না। আমাদের বাংলার প্রশাসনিক-সামরিক নিয়োগে কেন প্রত্যন্ত পাহাড়িয়া মানুষের কোন প্রবেশ কেনা নেই? মাকাইবাড়ি টি তবুও ওদের হাতের লালিত্যে আজও আমাদের ওষ্ঠে প্রেম জাগায়। আমরা মনে রাখিনি। টাইগার হিল দেখে শুধু শাটার টিপে চলেছি। চকবাজার থেকে ফারের শীত পোশাকে শরীর ঢেকেছি। কিন্তু আড়ালে কত মানুষ কাতর শীতে মুখ লুকিয়েছেন। স্নো-ফলেও আঠারো বছর শক্ত করে ধরেছে স্টিয়ারিং। আর আমরা দিব্যি ড্রইং রুমে সমালোচনা করেছি ওদের ‘ইললিগ্যাল ইস্যু’ নিয়ে। সমতলের ছত্তীসগঢ়, পাহাড়ের সিকিম ছোটো হয়েও সুখে আছে, অন্য দিকে ঝাড়খণ্ড নাগাল্যান্ডে প্রতিদিন অশান্তি। সুতরাং রাজ্য মানেই চিরসুখ নয়। তাই সত্যি সত্যি যিনি বাংলাকে ভাঙতে চান, তিনি সামনে আসুন। আজ সমুখ সমর খুব দরকারি। দার্জিলিং বাংলার গোল্ডেন ক্রাউন। কিন্তু সেই মুকুট আজ খুলে ফেলতে চাইছে কেউ। কেন? অসাম্য, গরিবি, সুযোগ-সুবিধে কম থাকলেও পৃথক রাজ্য পরম পাওয়া হতে পারে না। খুব চাইছি ফিরে এসো ওগো সুসময়। কার্শিয়াঙের কনভেন্টে মধুসূদন পাঠ্য। ধীরে ধীরে ভানুভক্তের মূর্তির মতোই ওঁর লেখা সমতলে প্রাসঙ্গিক হোক, খুব চাইছি।
গোর্খাল্যান্ডের মাঝেই সব সঞ্জীবনী তা মানি না। তবে কেন নাগাল্যান্ডে এমনতর এক অশান্তির বাতাবরণ। এই সমস্যা রাজ্য-কেন্দ্র দিয়ে স্পেসিফাই করা যাবে না। এই মেঘে আজ প্রত্যেক বাঙালির মন আশঙ্কিত। ওঁরা বাংলা ছাড়বেন না। আমরা ওদের সংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত হয়ে আচ্ছন্ন হব এক টেবিলে। কেননা এখনও বহু বাঙালি শিকড়ের যান পাবনা, চিটাগাঙে। পূর্বপুরুষের ভিটে ভাগ হয়ে অন্য দেশে গেলেও ভালবাসা সীমানা মানে না। অনেক হয়েছে। আর নয়। আসুন বাংলা জুড়ে অখণ্ড উৎসবের যাপনে ক্যালেন্ডারে একটা লালদাগ খুঁজতে সম্মত হই।
সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট
|