জায়গা দখল নিয়ে তুমুল কাজিয়া ন্যাশনালের দুই বিভাগের
জায়গা নিয়ে ধুন্ধুমার লড়াই বেঁধেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই বিভাগের মধ্যে। যুযুধান দুই পক্ষ চক্ষু বিভাগ ও অসুস্থ সদ্যোজাতদের ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)।
চক্ষু বিভাগের অভিযোগ, গত এপ্রিলে তাদের বিভাগের একটা বড় অংশ দখল করে এসএনসিইউ চালু হওয়ায় ৫৯টি শয্যা বাদ দিতে হয়েছে। ছিল ৯৫ শয্যা, হয়েছে ৩৬! এতে রোগীরা যেমন অসুবিধায় পড়েছেন, তেমনই ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’ থেকে চক্ষু সার্জারিতে স্নাতকোত্তর (এমএস)-এর তিনটি আসন পাওয়া আটকে যাচ্ছে। এসএনসিইউ কর্তৃপক্ষের পাল্টা জবাব, চক্ষু বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করানোর রোগী কম। তাদের জন্য ৩৬টি শয্যাই যথেষ্ট। বরং এসএনসিইউ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাতে সদ্যোজাতের জীবন রক্ষা করা যায়। বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য, চিঠি-পাল্টা চিঠিতে টানাপোড়েন কমার বদলে ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
এ রাজ্যে কম-বেশি প্রায় সব সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে জায়গার অভাব একটা বড় সমস্যা। ন্যাশনালে সেই সমস্যা এখন চরমে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই স্বীকার করছেন, ন্যাশনালে জায়গা নিয়ে ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলা শুরু হয়েছে। সেটা কী রকম?
ন্যাশনাল থেকে মনোরোগ বিভাগের উঠে যাওয়ার কথা ছিল পাভলভ হাসপাতালে। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও সেই স্থানান্তর কোনও অজ্ঞাত কারণে এখনও হয়নি। মনোরোগ বিভাগ উঠে গেলে সেই জায়গায় স্কুল অফ নার্সিং উঠে যেত, আর স্কুল অফ নার্সিংয়ের জায়গায় চলে যেত অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগ।
তারাও এখন চক্ষু বিভাগের অন্য একটা অংশ দখল করে রয়েছে। অ্যানাস্থেশিয়া অন্যত্র উঠে গেলে চক্ষু বিভাগের অনেকটা খালি হয়ে যেত। তখন আর অত শয্যা বাদ দিতে হত না। প্রশ্ন উঠেছে, এসএনসিইউয়ের ২৬টি শয্যা চালু করার জন্য চোখের ৫৯ শয্যা বাদ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত। চক্ষু বিভাগের প্রধান জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, “বারবার চক্ষু বিভাগের উপর কোপ পড়ছে। রোগীরা অস্ত্রোপচার করে থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। আমরা বেশির ভাগ অস্ত্রোপচারের পরে দিনের-দিন রোগী ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি। এতে তাঁদের চোখে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।” শুধু তা-ই নয়, জ্যোতির্ময়বাবু জানিয়েছেন, মাসখানেক আগে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ন্যাশনালে চোখের সার্জারিতে স্নাতকোত্তরের আরও তিনটি আসন মঞ্জুর করেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের এই আকালে এটা বিরাট প্রাপ্তি। কিন্তু এর জন্য হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে অন্তত ৬০টি শয্যা থাকার দরকার। তাঁর কথায়, “আমাদের শয্যা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একের পর এক চিঠি লিখছি স্বাস্থ্য দফতরে। শেষ চিঠি লিখেছি ২৬ অগস্ট। এখনও পর্যন্ত কোনও লাভ হয়নি।”
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরে চক্ষু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী অবশ্য বলেন, “আমি এতে মাথা ঘামাব না। হাসপাতালের দুই বিভাগের সমস্যা তারাই মেটাক।”
রাজ্যে এসএনসিইউ পরিষেবার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়ার ঢঙে বলেন, “ও সব বাজে কথা। কোনও শয্যা-টয্যা বাদ যায়নি। এসএনসিইউ অনেক জরুরি ব্যাপার।”
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কিন্তু এই লড়াইয়ে এসএনসিইউ-এরই পক্ষ নিয়েছেন। তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা দেখাতে চেয়েছেন, চক্ষু বিভাগে মোটেই বেশি রোগী আসেন না। তাঁদের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চক্ষু বিভাগে গড়ে ২৫ জন ভর্তি ছিলেন, মার্চ মাসে ভর্তি ছিলেন গড়ে ৩১ জন, মার্চে গড়ে ২২ ও এপ্রিলে গড়ে ২১ জন। সেই হিসেব অনুযায়ীই তাদের ৩৬টি শয্যা দেওয়া হয়েছে। আর চক্ষু বিভাগের পাল্টা উত্তর, রোগী উত্তরোত্তর বাড়ছে। এখন মুখরক্ষায় ২০১১-১২ সালের পরিসংখ্যান দেখিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের যুক্তি খাড়া করতে চাইছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.