দেবদূত ঘোষ ঠাকুর (‘পরিবেশ কি এতটাই হেলাফেলার’, ২৯-৮) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ বিভাগ সম্পর্কে লিখেছেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও অন্য বিভাগগুলি নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্যটাই নষ্ট করে ফেলেছে। তাঁর এই মন্তব্য ও তার পশ্চাদ্বর্তী ধারণা ঠিক নয়।
এই প্রসঙ্গে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৫ সালে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ক পঠনপাঠন চালু হয়। প্রাথমিক অবস্থায় তা সান্ধ্যকালীন কোর্স হলেও ২০০১ সালে তা পূর্ণকালীন কোর্সে পরিণত হয়। এই কোর্সের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হত এবং তার মাল্টিডিসিপ্লিনারি চরিত্রের গুরুত্ব প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনীয় কোর্সটির থেকে কোনও অংশে কম ছিল না। এম ফিল ডিগ্রি সংগ্রহের পর ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচ ডি করছে, অনেকেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষানীতির ফলে এম ফিল ডিগ্রি তার গুরুত্ব হারালে, আমরা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে এম ফিল কোর্স তুলে দিয়ে বর্তমানে চার সেমেস্টার বিশিষ্ট এনভায়রনমেন্টাল বায়োটেকনোলজি কোর্স চালু করি, মূলত বি টেক বায়োটেকনোলজি, সিভিল এবং কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বাস করে যে, মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয় হিসেবে শুনতে অনেক ভাল লাগে, কিন্তু পঠনপাঠনের স্বল্প সময়ের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের সে সম্পর্কে জ্ঞান আহরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর এ বিষয়ে আমরা যে ঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছি, তার প্রমাণ— এনভায়রনমেন্টাল বায়োটেকনোলজি বিষয়ে এম টেক ডিগ্রি অর্জনের পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে বিভিন্ন আই আই টি, আই এস এম (ধানবাদ) বা বেসু-র মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে পিএইচ ডি গবেষণায় রত।
শুধু তা-ই নয়, এখানে আরও বলা দরকার যে, এনভায়রনমেন্টাল বায়োটেকনোলজি বিষয়ে এম টেক করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকেও ছাত্রছাত্রীরা উৎসাহ সহকারে যাদবপুর বিশ্ববিদালয়ে বর্তমানে পঠনরত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমি একক শিক্ষক হিসাবে কোর্সটিকে যথাসাধ্য ভাবে পরিচালনা করে চলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের অনেক স্বনামধন্য শিক্ষকও তাঁদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করেন। এ ছাড়াও স্নাতক স্তরের সব শাখায় পরিবেশ বিজ্ঞান সম্পর্কিত অনলাইন কোর্সও চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন শাখার পরিবেশ বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের মূল্যবান মতামতের ভিত্তিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাসূচি তৈরি করা হয়েছে। এই অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যেমন জ্ঞানের আদানপ্রদান হয়, ঠিক সে রকমই অনেক ছাত্রছাত্রী যে রকম কৃতকার্য হয়, কিছু ছাত্রছাত্রী আবার অকৃতকার্যও হয়। এই অনলাইন কোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (www.setju.ac.in/environmental studies) মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন। এই অনলাইন কোর্সটি দেশ তথা রাজ্যের যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে অনুকরণযোগ্য হতে পারে। তাই আপনাদের প্রকাশিত সংবাদে যে ভাবে পুরো বিষয়টিকে তুলে ধরার মাধ্যমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কেও দোষী সাব্যস্ত করার একটা চেষ্টা হয়েছে, তা ঠিক নয়।
প্রতিবেদনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিন সায়েন্স কোর্সের যে উল্লেখ করা হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। এরই পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগত ভাবে জৈব বৈচিত্র, বায়োপ্লাস্টিক এবং বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ সম্পর্কিত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে কৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশগত বিভিন্ন বিষয়ে এখানে গবেষণারত।
গবেষণা শেষে অনেক ছাত্রছাত্রীই আজ দেশেবিদেশে বিভিন্ন নামী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এ ছাড়াও, ভবিষ্যতে স্নাতকোত্তর স্তরে এনভায়রনমেন্টাল কেমিস্ট্রির কোর্স চালু করার কথা চিন্তা করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এর পরেও কি মনে হয়, স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ বিভাগের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাসূচি মাল্টিডিসিপ্লিনারি চরিত্রের অনুকূল নয়?
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন শিক্ষক হিসাবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি যে, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে পুথিগত শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড হতে পারে না। আমাদের সন্তানদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করার মূল দায়িত্ব আমাদের সবার। সেটা শুরু করা উচিত আমাদের পারিবারিক এবং প্রাথমিক শিক্ষাস্তর থেকেই। এ ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারেরও দায়বদ্ধতা থাকা উচিত।
‘দেখনদারির কিন্তু শেষ নেই’, কথাটা যে ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে তাকে শিক্ষককুলের প্রতি চরম অবমাননা বলেই আমি মনে করি। এ রকম সংবাদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের ‘পরিবেশ বিজ্ঞান’ বিষয়ে শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্টই সহায়ক। |
আনন্দবাজার পত্রিকার ‘আনন্দplus’ বিভাগে প্রকাশিত অদিতি ভাদুড়ির ‘টাচফোনে প্রেম-পুজো’ (২-৯) লেখায় ঠিক পরিচয় কিন্তু ভুল পদবি (বর্ণালী চৌধুরী) সমেত আমার বক্তব্য ছাপা হয়েছে। ২৯ অগস্ট ফোনে যোগাযোগ করে আমার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু যা ছাপা হয়েছে, তা আমার বলা কথা থেকে আলাদা। আমি বলেছিলাম, ‘‘এখন সেলফোন, ফেসবুকের যুগে দুম করে সম্পর্ক হয়, দুম করে ভেঙেও যায়। মাত্র ক’দিনের দেখাশোনায় ফেসবুকে ছেলেমেয়েরা লেখে, ‘ইন আ রিলেশনশিপ’। সম্পর্ক যে একটা অপেক্ষা, সম্পর্ক তৈরি হতে সময় দিতে হয়, এখন তারা এটা বোঝে না। উল্টে আমার বয়/ গার্লফ্রেন্ড আছে এটা যেন একটা স্টেটাস সিম্বল। তবে ব্যতিক্রমও আছে নিশ্চয়ই।” |