সম্পাদকীয় ১...
সমে ফিরিবার উদ্যোগ
কটি গণতন্ত্রের সামর্থ্য শুধু মাত্র তাহার নীতি, প্রতিষ্ঠান এবং পদ্ধতির উপর নির্ভর করে না। নীতি যাঁহারা প্রণয়ন বা রূপায়ণ করেন, প্রতিষ্ঠান যাঁহারা পরিচালনা করেন এবং পদ্ধতি যাঁহারা অনুসরণ করেন, তাঁহাদের আচরণের উপরেও নির্ভর করে। সংসদের কার্যকরতা সাংসদদের উপর কতখানি নির্ভরশীল, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আচরণ দ্বারা শাসনতন্ত্রের সাফল্য ও ব্যর্থতা কী অনুপাতে নির্ধারিত হয়, তাহার বিস্তর নিদর্শন এ দেশে অহরহ রচিত ও চর্চিত হইতেছে। বিচারবিভাগের সম্পর্কে অনুরূপ আলোচনা তুলনায় কম হয়। তাহার কারণও আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে বিচারবিভাগের স্থান চরিত্রে কিছুটা স্বতন্ত্র, আইনসভা এবং তাহার নিকট দায়বদ্ধ শাসনবিভাগের তুলনায় আদালত সমাজ হইতে দূরবর্তী থাকিবে, তাহা স্বাভাবিক, ন্যায্যতার দেবীর দুই চোখ বাঁধা থাকিবার রূপকল্পে সেই দূরত্বের ধারণাও নিহিত। কিন্তু তাহার অর্থ এই নয় যে, বিচারবিভাগের পরিচালকদের যথাযথ আচরণের প্রশ্নটি কম গুরুত্বপূর্ণ। বরং এই বিভাগের স্বতন্ত্র ভূমিকার কারণেই সেই প্রশ্নের অধিকতর গুরুত্ব। কিন্তু আচরণ আবার নীতি, প্রতিষ্ঠান এবং পদ্ধতির উপরে নির্ভর করে। আচরণের সংশোধনের জন্য সেগুলির পরিবর্তন আবশ্যক হইতে পারে। বিচারপতিদের নিয়োগ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ সংসদে চলিতেছে, তাহা এই প্রেক্ষিতেই তাৎপর্যপূর্ণ।
এই উদ্যোগের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি স্মরণীয়। সত্তরের দশকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী ‘দায়বদ্ধ বিচারবিভাগ’ নির্মাণে তৎপর হইয়াছিলেন। বিভিন্ন আদালতে বিচারপতি নিয়োগ, বদলি বা পদোন্নতির প্রক্রিয়াটিকে এই উদ্দেশ্য সাধনে (অপ)ব্যবহার করা হয়। তাহার পরিণামে বিচারবিভাগের উপর শাসক দল বা দলনেতার প্রভাব বিস্তৃত হয়। অবশেষে ১৯৯৩ সালে এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি নিয়োগের সমগ্র প্রক্রিয়াটি বিচারবিভাগের নিজস্ব এক্তিয়ারে সীমিত করিয়া দেন। তাহার পর হইতে এই ক্ষেত্রে সরকার তথা জনপ্রতিনিধিদের কোনও ভূমিকা নাই। একটি অসুখ নিরাময় করিতে গিয়া যে ঔষধ প্রয়োগ করা হয়, তাহা নূতন অসুখের সৃষ্টি করিয়াছে— প্রচলিত চিকিৎসায় এমন অহরহ হইয়া থাকে। বিচারপতিরাই বিচারপতি নিয়োগ করেন, এই বন্দোবস্তেরও ক্ষতিকর পরিণামের অভিযোগ উঠিয়াছে বারংবার। যে কোনও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এমন ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ অস্বাস্থ্যকর হইতে পারে। এক দিকে, নিয়োগের দায়িত্বে যাঁহারা আছেন, পদপ্রার্থীদের মধ্যে তাঁহাদের অনুরাগভাজন হইবার বাসনা জাগ্রত হইতে পারে। অন্য দিকে, অন্য কেহ ‘আমাদের’ কেশাগ্র স্পর্শ করিতে পারিবে না— এই ধারণা নিরপেক্ষ ন্যায়নিষ্ঠার অনুকূল নহে।
এই প্রেক্ষিতেই আইন সংশোধন করিয়া বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার, বিরোধী দল এবং বৃহত্তর সমাজকে অধিকার ও দায়িত্ব অর্পণের উদ্যোগ। লক্ষণীয়, এই উদ্যোগে শাসক পক্ষের সহিত বিরোধী পক্ষও সমান আগ্রহী। আইন মন্ত্রী কপিল সিব্বলের পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি আইন সংশোধনের পক্ষে সমৃদ্ধ সওয়াল করিয়াছেন। দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠিয়া শিক্ষিত ও দায়িত্বশীল বিতর্কে নেতৃত্ব দানের এমন দৃষ্টান্ত সমকালীন ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে সুলভ নহে। ইহাকে বিচারপতিদের পক্ষশাতনের জন্য রাজনীতিকদের তৎপরতা বলিয়া মনে করিলে ভুল হইবে। ইহা ভারতীয় শাসনতন্ত্রের অন্তর্নিহিত ভারসাম্য ফিরাইবার একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। এই উদ্যোগ গণতন্ত্রের পক্ষে জরুরি, বিচারবিভাগের মর্যাদার পক্ষেও জরুরি। নিয়োগ পদ্ধতি সংশোধিত হইলেই সব সমস্যা মিটিয়া যাইবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নাই। নীতি, প্রতিষ্ঠান এবং পদ্ধতির পাশাপাশি আচরণও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাহা পরের প্রশ্ন। আপাতত ভারতীয় সংসদ তাহার একটি মৌলিক দায়িত্ব পালনে তৎপর হইয়াছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.