লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে ভুগতে হয়েছিল তাঁকে। এজেন্টের বাড়িতে বার বার হত্যে দিয়েও লাভ হয়নি। নদিয়ার ধুবুলিয়ায় থানায় তাই ওই এজেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা। গ্রেফতার হওয়ার দিন সাতেক পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে গ্রামে ফিরেই ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে তার ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছে ওই এজেন্ট। অভিযোগ, ওই এজেন্ট একা নয়, গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি নির্জন সেগুন বাগানের মধ্যে হাত পা বেঁধে ওই মহিলার উপরে অত্যাচার চালায় ওই এজেন্টের দুই আত্মীয়ও।
অভিযোগ পেয়ে শনিবারই ওই লগ্নি সংস্থার এজেন্ট সুব্রত সরকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অন্য দুই অভিযুক্ত, সুব্রতর কাকা অজিত সরকার এবং জামাইবাবু পলাশ মণ্ডলের খোঁজ পায়নি পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “অভিযুক্তদের মধ্যে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দু’জন পলাতক। তবে তাদের খোঁজ চলেছে।”
ওই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ সুব্রতর মা জয়লক্ষ্মীদেবী। তিনি বলেন, “আমার ছেলের মাধ্যমে একটি লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন ওই মহিলা। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার ছেলে টাকা ফেরত দিতে পারেনি। সেই কারণে আমাদের সবাইকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।”
ওই মহিলার বাড়ি ধুবুলিয়া টিবি হাসপাতাল লাগোয়া গৌরনগরে। রাস্তার পাশে পাটকাটির বেড়া দেওয়া একটি ঘরে স্বামী আর বছর চারেকের ছেলেকে নিয়ে কোনওক্রমে দিন গুজরান তাঁর। স্বামী পেশায় কাঠের মিস্ত্রি। সামান্য আয় থেকেই কিছু টাকা বাঁচিয়ে সঞ্চয়ের আশায় ওই লগ্নি সংস্থায় রেখেছিলেন ওই মহিলা। কিন্তু আচমকা সংস্থাটি বন্ধ হয়ে গেলে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তিনি সুব্রতকে চাপ দিতে থাকেন। দিচ্ছি-দেব করে সে টাকা আর ফেরত দিচ্ছিল না ওই এজেন্ট। অভিযোগ, কিছু দিন আগে, টাকা চাইতে গেলে সুব্রত ও তার পরিবারের লোকজন ওই মহিলাকে ঘরে আটকে রেখে মারধর ও শ্লীলতাহানিও করে। ছিনিয়ে নেয় তাঁর সোনার দুলও।
এ ব্যাপারে গত ১২ জুলাই ধুবুলিয়া থানায় অভিযোগ করেন ওই মহিলা। তার জেরেই পুলিশ সুব্রতকে গ্রেফতার করে। দিন সাতেক পরে জামিনে ছাড়া পেয়েই সে ওই মহিলাকে শাসাতে থাকে। ওই মহিলা বলেন, “দিন কয়েক ধরেই আমাকে শাসাচ্ছিল, জেলে পাঠানোর মজা দেখাচ্ছি, বলে।”
শনিবার ভোরে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি বাগানের পাশে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই মহিলাকে উদ্ধার করে চোখে মুখে জল দিয়ে সুস্থ করার পর পুলিশে খবর দেন। ধুবুলিয়া থানার পুলিশ গিয়ে ওই মহিলার কাছে থেকে অভিযোগ নেন। তিনি ওই তিন জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।
মহিলার অভিযোগ, শুক্রবার রাতে বাড়ির বাইরে মাঠে শৌচকর্ম সারতে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই তাঁর মুখ চেপে ধরে সুব্রত ও তার দুই আত্মীয়। তারপর তাঁকে টানতে টানতে ন’পাড়া পঞ্চায়েতের কাছে একটি সেগুন বাগানে নিয়ে যায়। সেখান তার পরনের কাপড় দিয়ে হাত-পা-মুখ বেঁধে তিন জনে ধর্ষণ করে। ঘটনাস্থলের কাছেই দুই মহিলার চায়ের দোকান। তাঁরা জানান, এ দিন ভোরে দোকান খুলতে গিয়ে গোঁঙানির শব্দ শুনতে পেয়ে গিয়ে দেখি, হাতা-পা-মুখ বাঁধা, প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই মহিলা। |