চেন্নাইয়ে পরীক্ষার অন্য উদ্দেশ্য দেখছে বানতলা
চামড়া রফতানির আগে পরীক্ষাগারে তার মান যাচাই সম্প্রতি বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক। এই নিয়মের সুযোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চামড়ার নমুনা পরীক্ষার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে চেন্নাইয়ে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বানতলা চর্মনগরীর ট্যানারি মালিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, চেন্নাই থেকে পরীক্ষার ফল আসতে দেরি হয়ে যাওয়ায় বিদেশের গ্রাহকদের কাছে তাঁরা সময়সীমা অনুযায়ী চামড়া রফতানি করতে পারছেন না। অনেকে তাই দেশের বাজারেই সেই চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ট্যানারি মালিকদের দাবি, গোটা প্রক্রিয়াটির উপরে প্রভাব রয়েছে এক শ্রেণির চর্ম ব্যবসায়ীর। পশ্চিমবঙ্গের চামড়ার কদর ইতালিতে পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু সেই চামড়া এখন যাতে বিদেশে কম গিয়ে দেশের বাজারেই বেশি বিক্রি হয়, তার জন্য চেন্নাই ও কানপুরের ওই চর্ম ব্যবসায়ীরা উঠেপড়ে লেগেছেন। কারণ তাঁদের লক্ষ্য হল, ওই চামড়া কিনে জিনিসপত্র তৈরি করে রফতানি ও মুনাফা।
সমস্যাটা ঠিক কোথায় হচ্ছে?
ট্যানারি শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা জানালেন, রফতানিযোগ্য চামড়া মূলত দু’রকম। অর্ধেক প্রক্রিয়াজাত (সেমি প্রসেস্ড) এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত (ফিনিশড)। জুতো, ব্যাগ, বেল্ট, জ্যাকেটের মতো জিনিস তৈরিতে ব্যবহার হয় অর্ধেক প্রক্রিয়াজাত চামড়া। ইদানীং দেশের চর্মশিল্পে কাঁচা চামড়ার জোগান ব্যাপক ভাবে কমে যাচ্ছিল। জোগানে টান পড়ায় কয়েক বছরে দেশের বাজারে সব ধরনের চামড়ার দামই বেড়ে গিয়েছিল প্রায় ২৫%। কারণ খুঁজতে গিয়ে কেন্দ্র বিভিন্ন মহল থেকেই অভিযোগ পায় যে, অর্ধেক প্রক্রিয়াজাত চামড়াতেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত চামড়ার সিলমোহর বসিয়ে রফতানি করা হচ্ছে। কারণ বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেলের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত চামড়া রফতানিতে কোনও কর দিতে হয় না। কিন্তু অর্ধেক প্রক্রিয়াজাতের ক্ষেত্রে রফতানিতে ৬০% কর দিতে হয়। ফলে চর্মশিল্পে কাঁচা চামড়ার জোগান কমার পাশাপাশি এর ফলে প্রচুর পরিমাণে রাজস্বও হারাচ্ছিল অর্থ মন্ত্রক।
সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রক জানায়, রফতানিযোগ্য যে কোনও চামড়ার মান পরীক্ষা করে দেখবে কেন্দ্রীয় চর্ম গবেষণা কেন্দ্র (সেন্ট্রাল লেদার রিসার্চ ইন্সটিটিউট বা সিএলআরআই)। গবেষণাগারে পরীক্ষা করে তারাই জানাবে কোন চামড়া কী চরিত্রের।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, চামড়া সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে না অর্ধেক তা চট করে ধরা যায় না। একমাত্র গবেষণাগারে পরীক্ষা করেই বোঝা সম্ভব। এত দিন শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা বন্দরে গিয়ে চামড়ার মান দেখে ছাড়পত্র দিয়ে দিতেন। সন্দেহ হলে তবেই গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হতো। কিন্তু গোটা ব্যাপারটাই হতো খুবই গয়ংগচ্ছ ভাবে। তাই গোড়াতেই সিএলআরআই-এ পরীক্ষার নির্দেশ জারি হয়েছে।
এই গবেষণা কেন্দ্রের দু’টি শাখা রয়েছে কলকাতা ও চেন্নাইয়ে। বানতলার ট্যানারি মালিকদের দাবি, পূর্বাঞ্চল থেকে রফতানিযোগ্য চামড়ার মান পরীক্ষা হওয়ার কথা কলকাতা কেন্দ্র থেকেই। কিন্তু তা পাঠানো হচ্ছে চেন্নাইয়ে। ফলে পরীক্ষার ফলাফল আসতে সময় লেগে যাচ্ছে ১৫-২০ দিন। আর তার জেরে নির্দিষ্ট সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে চামড়া পাঠাতে পারছেন না। উন্নতমানের চামড়া ডাঁই হয়ে জমছে গুদামে। বাধ্য হয়ে অনেকে দেশের বাজারেই তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রসঙ্গত, পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি থেকে চলতি আর্থিক বছরের (২০১৩-’১৪) প্রথম তিন মাসে রফতানি কমেছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৩%।
ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, শুধু চেন্নাইয়েই চামড়ার নমুনা পরীক্ষা করা হবে, কেন্দ্র এমন কোনও কথা বলেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা চর্ম রফতানি পর্ষদের (কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টস) নির্দেশেই এ রাজ্যের চামড়া পরীক্ষার জন্য যাচ্ছে চেন্নাইয়ে। এবং সেখান থেকেও অনেক সময়েই পরীক্ষার ফলাফলের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে না। ‘ক্যালকাটা লেদার কমপ্লেক্স ট্যানারিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক নাদিম সারওয়ারের অভিযোগ, “যা কিছু করা হচ্ছে তা চেন্নাই ও কানপুরের চর্মশিল্প মহলের প্রভাবে। এটা চলতে থাকলে আমরা আদালতে যাব।”
সিএলআরআই-এর কলকাতা শাখার অন্যতম কর্তা দীপঙ্কর চৌধুরীর কথায়, “কলকাতা, চেন্নাই এবং মুুম্বই বন্দর থেকে চামড়া রফতানি হয়। কাজের সুবিধের জন্য পর্ষদ এক জায়গা (চেন্নাই) থেকেই নমুনা পরীক্ষার কথা বলেছে। ” তিনি অবশ্য জানাচ্ছেন, কোনও ট্যানারি মালিক তাঁদের কাছে চামড়ার নমুনা দিলে কলকাতাতেই তা পরীক্ষা করে শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। চর্ম রফতানি পর্ষদের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার চেয়ারম্যান তপন নন্দীর বক্তব্য, “যে কোনও রফতানিকারক সংস্থা ‘বন্ড’ দিয়ে তাদের পণ্য রফতানি করতে পারে। সে নিয়ম রয়েছে।”
বানতলার নাফিস ট্যানিং ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মালিক জিয়া নাফিস বলেন, “এ রাজ্যের গরু, মোষ, ছাগলের চামড়া দেশের অন্য যে কোনও রাজ্যের তুলনায় উন্নতমানের। এখানকার চামড়ার চেহারা, স্থায়িত্বও অনেক বেশি। যে কারণে ইউরোপের বাজারে বাংলার চামড়ার কদর অনেক বেশি। রফতানিও বাড়ছিল প্রতি বছর।”
কিন্তু এখন? চর্মশিল্প মহলের খবর, চলতি আর্থিক বছরের (২০১৩-’১৪) প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) পূর্বাঞ্চল থেকে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার দামের চামড়া রফতানি হয়েছিল। অথচ গত অর্থবর্ষে অঙ্কটা ছিল ১ কোটি ৮২ লক্ষ ডলারেরও কিছু বেশি। এ বার কোন পথে হাঁটবে বানতলা? সেটাই এখন দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.