শিক্ষক দিবসের ‘পাওনা’
ছাত্রদের ‘দুর্ব্যবহার’, পদত্যাগ চান পিজির শিক্ষক-ডাক্তারেরা
শিক্ষক দিবসের ২৪ ঘণ্টা আগে ডাক্তার-ছাত্রদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার ও হেনস্থার অভিযোগ আনলেন শিক্ষক-ডাক্তারেরা। ঘটনাস্থল এসএসকেএম হাসপাতাল তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমইআর)। সেখানকার এমবিবিএস পড়ুয়াদের হস্টেল কমিটিতে যে শিক্ষক-ডাক্তারেরা রয়েছেন, পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ এনেছেন তাঁরাই। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে তাঁদের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই ছাত্রদের কাছ থেকে ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাচ্ছেন না তাঁরা। উপরন্তু তাঁদের এমন কথা ও ভাবভঙ্গি হজম করতে হচ্ছে যা খুবই অবমাননাকর। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পক্ষে ওই দায়িত্বে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
ডাক্তার-পড়ুয়ারা অবশ্য এই অভিযোগে বিশেষ লজ্জিত বা অনুতপ্ত নন। বরং তাঁরা এ ক্ষেত্রেও চাপান-উতোরের পথেই গিয়েছেন। তৃণমূল সমর্থিত ইউনিয়ন দোষ চাপিয়েছে ডিএসও-র উপরে। আর ডিএসও জানিয়েছে, শিক্ষকদের অসম্মানের এই ধারা কলেজে আমদানি করেছে তৃণমূলই। সব মিলিয়ে এসএসকেএম-এর মতো রাজ্যের অন্যতম প্রধান মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
এত দিন জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলতেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। শিক্ষক-ডাক্তারেরাই এ বার অভিযোগকারীর ভূমিকায় আসায় অস্বস্তিতে কর্তৃপক্ষ। আইপিজিএমইআর-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বৃহস্পতিবার বলেন, “আজ শিক্ষক দিবস উপলক্ষে পড়ুয়াদের তরফে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আমি স্পষ্টই বললাম, ‘একদিন ঘটা করে সম্মান না দেখিয়ে সারা বছর ভাল ব্যবহার করো, তা হলেই আমাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে।’ পড়ুয়াদের খারাপ ব্যবহারের জন্য শিক্ষকেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”ঠিক কী চলছে এসএসকেএম-এর হস্টেলে? হাসপাতাল সূত্রের খবর, ঘর ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই সমস্যা চলছে হস্টেলে।
বেশ কয়েক বার হস্টেল কমিটির সদস্যেরা পরিদর্শনে গিয়েছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। হস্টেল নিয়ে কিছু সমস্যায় তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই কমিটিতে হস্টেল কমিটির শিক্ষক-ডাক্তারেরাই ছিলেন। অভিযোগ, তদন্ত চালাতে গিয়ে পড়ুয়াদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের।
এক শিক্ষক-ডাক্তার বলেন, “যে ভঙ্গিতে ছাত্রেরা কথা বলছে, তাতে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ছাত্রদের হাতে মার খেতে হলেও আশ্চর্য হব না। এ ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” কমিটির অন্য এক সদস্য বলেন, “কথায় কথায় আমাদের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ছাত্রেরা। এমন ভাব করছেন যেন পারলে তাঁরা আমাদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেবেন। এর পরে কাজ চালিয়ে গেলে নিজেরাই হয়তো নিজেদের সম্মান করতে পারব না।”
হস্টেল কমিটির শিক্ষক-ডাক্তারেরা এ ভাবে একযোগে পদত্যাগ করতে চাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন কর্তৃপক্ষও। তাঁদের বক্তব্য, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে কেউই এখন আর কমিটিতে থাকতে চাইছেন না। এর পরে কমিটি চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়বে।
কিন্তু পড়ুয়ারা কী বলছেন? তৃণমূল সমর্থিত মেডিক্যাল ছাত্র সংগঠনের তরফে সৌমাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষক-ডাক্তারদের অভিযোগ অসত্য নয়। যে ব্যবহার ওঁরা পাচ্ছেন, তা সত্যিই অপমানজনক। কিন্তু আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই। ডিএসও-র ছাত্রেরা এগুলো করছে। আমরাও এর বিরোধী।”
অন্য দিকে, ডিএসও-র এসএসকেএম ইউনিট সেক্রেটারি কবিউল হক বলেন, “এসএসকেএম-এর হস্টেলে হাজারো সমস্যা। বসবাসের অযোগ্য পরিবেশ। অথচ হস্টেল কমিটি পুরোপুরি নিস্পৃহ। সেই জন্যই কখনও কখনও আমাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু সেটা কাউকে অসম্মান করার জন্য নয়। কমিটিকেও তো দায়িত্ব নিতে হবে। তাঁরা সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেন বলেই এত ঝামেলা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.