মেয়ে পাচার নতুন কিছু নয়। অভাবের তাড়নায় গ্রামগঞ্জ থেকে বহু মেয়েই শহরে অর্থ রোজগারের আশ্বাসে আড়কাঠিদের চক্রান্তে যৌনপল্লিতে গিয়ে ওঠে। (‘কাজ জোটেনি, ঠাঁই মেলেনি, বধূ ফিরতে চান যৌনপল্লিতেই’, ২৬-৮) সেখানে বহু অত্যাচার সহ্য করে তাঁরা পড়ে থাকেন। মাঝে মাঝে পুলিশের তৎপরতায় তাঁদের উদ্ধার সম্ভব হয়। ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের বাড়িতে, তাঁদের গ্রামে।
তার পর? কী হয় তাঁদের? তাঁরা কি সত্যিই ফিরে যেতে পারেন তাঁদের পুরনো জীবনে, যেখানে মা, বাবা, ভাই, বোন কিংবা স্বামী, সন্তান আছে? বাসন্তীর ওই গৃহবধূটির অসুস্থ স্বামী, দু’টি সন্তান, অভাবের তাড়নায় কাজের খোঁজ করছিলেন। তার পর দু’টি ছেলের পাল্লায় পড়ে পুণের বেশ্যালয়ে এসে পৌঁছন ওই গৃহবধূ। সেখানে তাঁর অসহনীয় যন্ত্রণার মধ্যে দু’বছর কাটে। তার পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। |
কিন্তু, তিনি কোথায় ফিরবেন? শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে নেওয়া হল না। মায়ের অভাবের সংসারে তিনি বোঝা। এর থেকে সেই নরকই তো ভাল ছিল। সেখানে অন্তত পেট ভরে খেতে পেতেন। তাই তিনি আবার সেখানেই ফিরে যেতে চান। এ ভাবেই অনেক উদ্ধার করা মেয়েই আবার ফিরে গিয়েছে যন্ত্রণার নরকে, শুধুমাত্র পেটের দায়ে।
সরকারি সাহায্যের হাত কি আর একটু লম্বা হতে পারে না, যাতে এই সব মেয়ের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান হয়? নারী কল্যাণ মন্ত্রী বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা তাঁকে কোনও হোমে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। এ তো সাময়িক ব্যবস্থা! শুধু দুটো ভাতকাপড়ের জন্যে এই মেয়েরা আবার অন্ধকারে তলিয়ে যাবেন? যেতে দেওয়া হবে? এই মেয়েরা যাতে সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেন, তার জন্য প্রশাসনকেই তৎপর হতে হবে। তাঁদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করতে পারলে এই সব ‘উজ্জ্বল উদ্ধার’ যে হতাশায় ম্লান হয়ে যাবে। মনীষা ভট্টাচার্য। কলকাতা-১৯ |