সম্পাদকীয় ১...
বহিরাগত
শেয়ার বাজারের সূচক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নূতন গভর্নরকে অভ্যর্থনা জানাইয়াছে। টাকার দামও উঠিয়া দাঁড়াইতে চেষ্টা করিতেছে, সম্ভবত তাঁহার সম্মানার্থেই। দেশে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে রঘুরাম রাজনকে লইয়া এই ইতিবাচক হাওয়ার একটি কারণ নিঃসন্দেহে তাঁহার বায়োডেটা। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুলের অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক বা মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ-এর প্রাক্তন উপদেষ্টা। ভারতীয় অর্থনীতি নামক অহল্যা উদ্ধারে তাঁহার অপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি এই মুহূর্তে খুব বেশি নাই। তবে, তাঁহার অভিষেকে বাজার সাড়া দিয়াছে মানেই তাঁহার সাফল্য সুনিশ্চিত, এখনই এমন দাবি করা অবিবেচনাপ্রসূত হইবে। তাঁহার পথ দুর্গম, অতি দুর্গম। পাঁচ বৎসর পূর্বেও যাহা বিশ্বমঞ্চে এক নব্য রূপকথা রূপে বিবেচিত হইতেছিল, সেই ভারতীয় অর্থনীতি এই মুহূর্তে ভূতের গল্পে পরিণত হইয়াছে। টাকার দাম বা শেয়ার বাজারের সূচক তাহার মূল সমস্যা নহে— সমস্যা তাহার কাঠামোয়। সেই সমস্যার সমাধান দীর্ঘমেয়াদের প্রশ্ন— রাজন, তাঁহার যাবতীয় দক্ষতা সত্ত্বেও, সেই কাজ করিতে পারিবেন কি না, তাহা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু, ভারতের সমস্যার সমাধানে তিনিই যোগ্যতম ব্যক্তি, বাজারের এই বিশ্বাসটি তাঁহাকে সাহায্য করিবে।
সকাল দেখিয়া দিনের পূর্বাভাস করিবার বিপদ আছে— বহু ক্ষেত্রেই নিতান্ত বেকুব বনিতে হয়। কাজেই, ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত হইয়া রঘুরাম রাজন যে ভাষণটি দিলেন, তাহার রূপরেখাটি কত দূর বাস্তবায়িত হইবে, সেই অনুমান না করাই বিধেয়। কিন্তু তাঁহার ভাষণটি ব্যতিক্রমী, অতি অ-ভারতীয়সুলভ। যাহা চলিয়া আসিতেছে, তাহাতেই অবিচলিত থাকা ভারতীয় অভ্যাস। সেই অভ্যাস অনুসারে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে আসীন হইবার পর সেই প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে, তাহার অতীত সম্বন্ধে কিছু গোলা গোলা ভাল কথা, ‘দেখিতে হইবে, ভাবিতে হইবে’ জাতীয় অনিশ্চিত মন্তব্যই ভাষণের সিংহভাগ জুড়িয়া থাকিবার ‘নিয়ম’। রাজন সেই পথ মাড়ান নাই। তিনি কী করিতে চাহেন, সেই কথাটি তিনি প্রথম ভাষণেই স্পষ্ট জানাইয়া দিয়াছেন। গতে বাধা কর্তব্যের কথা নহে, রাজনের প্রস্তাবিত পথটি সংস্কারের পথ। তিনি প্রয়োজনীয় ‘হোম ওয়ার্ক’ করিয়াই মাঠে নামিয়াছেন। পূর্ব-প্রস্তুতি এবং ভাবনার পরিচ্ছন্নতা ও সেই ভাবনাকে স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করিবার সাহস— এই দুইটি গুণই ভারতীয় চরিত্রে বিরল। স্পষ্টতই, রাজন তাঁহার নূতন দায়িত্ব লইয়া ভাবিয়াছেন।
তাঁহার ভাবনার ধরনটি আমলাতন্ত্রের পরিচিত ছকের বাহিরে। রাজনকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর করিবার সিদ্ধান্তের সর্বাপেক্ষা ইতিবাচক দিকটি হইল, তিনি আমলাতন্ত্রের অন্দরমহলের লোক নহেন। ফলে, তাঁহার দৃষ্টিকোণ পৃথক, ভারতের প্রেক্ষিতে নূতন। তিনি কোনও সমস্যাকে যে ভাবে দেখিবেন, এবং যে ভাবে তাহার সমাধানের পথ খুঁজিবেন, তাহা ‘ঘরের লোক’-এর পক্ষে সম্ভব হয় না— তাঁহাদের দেখার চোখ ঘরের নিয়মে বাঁধা বলিয়াই। ভারতের অভিজ্ঞতা বলিতেছে, ‘ঘরের লোক’রা যে বিপদ বাধান, ‘বাহিরের লোক’ আসিয়া তাহা হইতে উদ্ধারের পথ দেখান। মনমোহন সিংহকে, তাঁহার ১৯৯১ সালের অবতারে, ভুলিলে চলিবে না। রাজনীতি তাঁহার ময়দান ছিল না। সেই কারণেই তিনি আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটিবার সাহস করিতে পারিয়াছিলেন। আর এক উদাহরণ সাম পিত্রোদা— ভারতের টেলিকমিউনিকেশন বিপ্লবের জনক। পশ্চিমবঙ্গেও উদাহরণ আছেন— জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভার এক কালের বিদ্যুৎমন্ত্রী শঙ্কর সেন। এই খ্যাতনামা শিক্ষক আক্ষরিক অর্থেই এই রাজ্যকে অন্ধকার হইতে উদ্ধার করিয়াছিলেন। রঘুরাম রাজন পারিবেন কি না, তাহা ভবিষ্যৎ বলিবে। কিন্তু, পারিলে এখন তিনিই পারিবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.