এমন আকাল এর আগে আসেনি, যাত্রাপাড়ায় এখন এটাই হাহুতাশ।
প্রথমে সারদা কেলেঙ্কারি, তার পর পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে টালবাহানা। এ বার যোগ হল কামদুনি-আতঙ্ক আর পারমিশন ফি-এর বোঝা। সব মিলিয়ে চিৎপুরে নায়েকের দেখা নেই। বায়নার হাল শোচনীয়।
এ বছরের মতো এত খারাপ অবস্থা যাত্রাপাড়ায় কখনও আসেনি, দাবি করলেন রূপমঞ্জরী অপেরার সুবীর চট্টোপাধ্যায়। সারদা কেলেঙ্কারির জেরে গ্রামবাংলায় এ বার পরিস্থিতি অশান্ত ছিল। তার পর গেল পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েন। ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নায়েকরা আসতে পারেননি। রথের দিন থেকে বায়না নেওয়ার যে ঢল শুরু হয়, চিৎপুর এ বার তা দেখেনি। আশা ছিল, ভোট মিটে গেলে অবস্থা বদলাবে। কিন্তু সুবীরবাবুরা বলছেন, সারদা-কাণ্ড থিতিয়ে পড়েছে। পঞ্চায়েত ভোট শেষ হয়েছে।
কিন্তু গ্রাম থেকে নায়েকরা এখনও তেমন একটা আসছেন না। কেন? “নায়েকরা ফোনে জানাচ্ছেন কেউ-ই বাড়ির মহিলাদের রাতে যাত্রা দেখতে পাঠাতে চাইছেন না। বিশেষ করে কামদুনির ঘটনার পর।” সুবীরবাবুর আক্ষেপ, “প্রায় আড়াই লাখ মানুষ জড়িত যাত্রার সঙ্গে। বায়নার যদি এমন হাল হয়, তা হলে পেটে গামছা বেঁধে বসে থাকতে হবে।”
ঠিক এতটা না হলেও শঙ্কার কথা চেপে রাখেননি চিৎপুরের অনেক প্রযোজকই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক বললেন, “পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রথের দিন বুকিং হয়নি বললেই চলে। এখন নায়েকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শুনতে পাচ্ছি, কামদুনির ঘটনার পর গ্রামের মহিলারা রাতে বাড়ি বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না।” ফলে পুজোর আগে-পরে দু’চারটি ছাড়া পালার বায়নাই হয়নি।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বর্ধিত পারমিশন ফি। দু’বছর আগেও একটা শো-এর অনুমতি বা পারমিশন নিতে সরকারকে দিতে হত ১৪৫০ টাকা। সেটা এক লাফে বাড়িয়ে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকাও। মুক্তমঞ্জরী অপেরার নেপাল সরকার জানালেন, “এত টাকা দিয়ে পারমিশন নিয়ে ন্যূনতম লাভ রাখতে হলে যে টাকায় টিকিট বিক্রি করতে হবে, তা গ্রামের মানুষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই বায়না আসছে কম।” দু’একটি পালা বাদ দিলে তাই চিৎপুরে এখন রীতিমতো উদ্বেগের আবহ। অনেকে তাও মনকে সান্ত্বনা দিয়ে আশা করছেন, নায়েকরা গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন নিয়ে ব্যস্ত। পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করার পর নিশ্চয়ই বায়না আসতে শুরু করবে।
এরই মধ্যে দু’তিনটি দলের অবস্থা একটু ভাল। ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার কারবার নিয়ে পালা করছে দু’টি দল। বায়নার অবস্থা ভালই বলে জানিয়েছেন তাঁদের এক জন, কলকাতা অপেরার প্রযোজক-পরিচালক সমীর সেন। একই বিষয় নিয়ে আর একটি পালায় অভিনয় করছেন ইন্দ্রাণী হালদার। প্রযোজক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ১৭-১৮টি শো বুকিং হয়ে গিয়েছে। তাঁর আশা, পুজোর আগে সংখ্যাটা ৪০-৪৫ হবে। |