|
|
|
|
শাহরুখ ফ্যানের অমিতাভ দর্শন |
মন্নত মালিকের ফ্যান হয়েও হঠাৎ করে বিগ বি-কে দেখার অ্যাসাইনমেন্ট।
প্রত্যেক মুহূর্তে মিস করছিলেন শাহরুখকে। কিন্তু মুম্বইতে কেবিসি-র প্রেস কনফারেন্সে
সেই বিখ্যাত ব্যারিটোন শোনার পর কী হল? লিখছেন প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত |
অফ ডে-র মাঝরাতে ব্ল্যাকবেরির স্ক্রিন জুড়ে বস-এর নামটা ভেসে উঠলে কার না টেনশন হয়? ছুটির দিনে আবার কীসের জন্য কেস খেলাম? ভাবতে ভাবতে ভয়ে-ভয়ে হ্যালো বলতেই শুনলাম এমন কিছু শব্দ, যেগুলো এই জীবনে আমাকে একটা বাক্যে কেউ বলতে পারে, স্বপ্নেও ভাবিনি। “কেবিসি-র একটা প্রোগ্রাম আছে মুম্বইয়ে, তোমাকে পাঠাচ্ছি।”
কেবিসি! মানে অমিতাভ বচ্চন!!!
প্রচণ্ড উত্তেজনায় ‘ওকে ওকে’ বলে ফোনটা রাখার পরই শুরু নতুন টেনশন। পাঁচ বছরের সাংবাদিক জীবনে শুধু ক্রিকেট মাঠেই গিয়েছি। দু’এক বার ফুটবলের এটা-ওটা। হাফ দশকের অভিজ্ঞতায় সচিন-সৌরভ নিয়ে লেখায় অভ্যস্ত। কিন্তু এন্টারটেনমেন্ট-এর এবিসিডি-ও তো জানি না। লাইটস-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়ায় ডেবিউ-তে উল্টো দিকে আবার বিগ বি! পারব তো? সঙ্গে বড়সড় আক্ষেপও। অমিতাভের বদলে যদি সামনে শাহরুখকে পেতাম!
সোনি টিভির পিআরও-র সঙ্গে কথা বলে তা-ও কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেল। যাক, ব্যাটল-রেডি হওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় আছে। |
|
ওই সাতটা দিন মোটামুটি সব বন্ধুকে ‘আমি অমিতাভ বচ্চনকে মিট করতে যাচ্ছি’ বলে বোর করে, অমিতাভ-কেবিসি-সিদ্ধার্থ বসু নিয়ে যাবতীয় লেখা প্রায় মুখস্থ করে, অমিতাভের উইকিপিডিয়া এন্ট্রির প্রিন্ট-আউটগুলো নতুন কেনা শার্টের সঙ্গে ব্যাগে সযত্নে ভরে ভোরবেলা এয়ারপোর্ট পৌঁছলাম।
এখানে চুপিচুপি একটা কথা বলে রাখা ভাল। আমি কিন্তু অমিতাভের বিশাল বড় ফ্যান নই। অ্যাংগ্রি ইয়াং ম্যান ব্যাপারটা কোনও দিনই বিশেষ পোষায়নি। আর ক্লাস ফাইভে ‘বাজিগর’ দেখার পর থেকে ‘হিরো’ শব্দটার সঙ্গে অন্য একটা নাম সমার্থক হয়ে গিয়েছে। অচেনা ক্রিজে নামার টেনশনের পাশাপাশি তাই ছিল কিং সাইজ কৌতূহল কী আছে অমিতাভের মধ্যে? কীসের টানে এত মানুষ ‘বিগ বি’ বলতে অজ্ঞান? জেন ওয়াই-এর কাছে এই লোকটা কি আদৌ প্রাসঙ্গিক? না কি শাহরুখ-রণবীরদের পৃথিবীতে এই ভদ্রলোক বেমানান?
সাতটার বদলে প্রায় দু’ঘণ্টা পরে শুরু হওয়া প্রোগ্রামের মাঝামাঝি উত্তরের কিছুটা বোধহয় পাওয়া গেল। যখন স্টেজের ব্যাকড্রপ খুলে বেরিয়ে এল প্রায় সাড়ে ছ’ফুটের শরীরটা। শাহরুখের ড্রেসিং সেন্সকে যদি দশে দশ দিই, তা হলে নীল শার্ট, কালো স্যুট (কেবিসির প্রেস রিলিজের পরে দেখলাম এ বার শো-এ অমিতাভের ওয়ার্ডরোব তৈরি করেছেন রোহিত বাল), টকটকে লাল ক্র্যাভ্যাটে অমিতাভকেও তার কম দেওয়া যাবে না।
তবু মনে হচ্ছিল, অমিতাভের জায়গায় এই স্টেজে শাহরুখ থাকলে কী করতেন? অমিতাভ শুরু করলেন বিশুদ্ধ হিন্দিতে, শাহরুখ হয়তো
বেছে নিতেন ‘হিংলিশ’। অমিতাভ যেখানে স্টেজে মিনি কেবিসি-র প্লেয়ারদের বাড়ির বড় জেঠুর মতো বকাঝকা করছিলেন, শাহরুখ নিশ্চয়ই সেখানে বন্ধুর মতো মিশতেন। দর্শকদের দিকে উড়ে যেত মুঠো মুঠো ফ্লাইং কিস।
|
ডেরেক ও’ব্রায়ানের মার্কশিট |
এঁরা প্রত্যেকে খুবই ভাল। কারণ ওঁরা নিজেদের পেশাতেও অত্যন্ত দক্ষ। কুইজটা কিন্তু ওঁদের সহজাত দক্ষতার জায়গা নয়। আমি ওঁদের প্রত্যেককেই অভিনন্দন জানাই, কারণ ওঁরা কুইজ মাস্টারিকে একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। |
|
|
বিষয়বস্তু বোঝার দক্ষতায় |
অমিতাভ: ৫ মিঠুন: ৪ শাহরুখ: ৭ সৌরভ: ৫ |
অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে |
অমিতাভ: ৯ মিঠুন: ৬ শাহরুখ: ৯ সৌরভ: ৫ |
রসবোধে |
অমিতাভ: ৮ মিঠুন: ৭ শাহরুখ: ৯ সৌরভ: ৪ |
স্টেজ-উপস্থিতিতে |
অমিতাভ: ১০ মিঠুন: ৮ শাহরুখ: ৯ সৌরভ: ৮ |
স্বরভঙ্গিতে |
অমিতাভ: ১০ মিঠুন: ৭ শাহরুখ: ৭ সৌরভ: ৭ |
(দশে কে কত) |
|
সে সব এখানে নেই। তা হলে হটসিটে বসল যে মেয়েটা, যাকে শো-এর শেষে জড়িয়ে ধরলেন অমিতাভ, সে এ রকম স্টার-স্ট্রাক মুখচোখ নিয়ে স্টেজ থেকে নামবে কেন? মেয়েটার বয়স আমারই কাছাকাছি হবে। শাহরুখ-জেনারেশনের একটা মেয়ে কী ভাবে অমিতাভের সামনে এ
রকম ভেবলে যায়? ম্যাগনেটিজম কি একেই বলে?
প্রায় চল্লিশ মিনিট অপেক্ষার পর অমিতাভকে এত কাছ থেকে দেখার নার্ভাস আনন্দে যে ক’টা প্রশ্ন করব ভেবে রেখেছিলাম, সবই ভুলে গেলাম। ‘পার্সোন্যালিটি’ শব্দটা প্রচুর শুনেছি। লিখেছি। চোখের সামনে দেখলাম এই প্রথম। “আপনারা প্রিন্ট মিডিয়া থেকে এসেছেন?” দিয়ে শুরু করলেন অমিতাভ। কেবিসি সেভেন-এর নতুন ট্যাগলাইন ‘শিখনা বন্ধ তো জিতনা বন্ধ’-এর সঙ্গে কী ভাবে তাঁর নিজস্ব জীবন দর্শনও মিলে যায়, সেই প্রসঙ্গে যখন ঢুকলেন, ততক্ষণে নোট নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। চোখ বুজে, মন ভরে শুনছি সেই ব্যারিটোন। টিভি বা সিনেমার পর্দায় নয় একদম লাইভ! মুগ্ধতার রেশের মধ্যেই আবিষ্কার করলাম আর একটা জিনিস। দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা আইকন তিনি, তবু কী অসাধারণ বিনয়ী! কই, ক্রিকেট মাঠের হাফ-সেলেবদের মধ্যেও তো এই বিনয়ের ছিটেফোঁটা কোনও দিন চোখে পড়েনি! দেড়খানা ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদেরও দেখেছি বেলাইনের প্রশ্ন শুনে সাংবাদিকদের তাচ্ছিল্য করে পাশ কাটিয়ে যেতে। কিন্তু এঁর নাম অমিতাভ বচ্চন হয়েও, সারা দিন সপ্তকোটি প্রশ্নবাণ সামলেও কী ভাবে রাত দশটায় এত ধৈর্যের সঙ্গে, এত সুন্দর করে, এত ধরে ধরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন?
এই জন্যই কি অমিতাভ এখনও অমিতাভ? এই বিনয়? না কি নিজের মধ্যে ঔদ্ধত্যের এতটুকু বাষ্প জমতে না দেওয়া? একাত্তরতম জন্মদিনের মাসখানেক আগেও নিজেকে ‘ছাত্র’ হিসেবে দেখা? না কি নির্বিকার ভাবে বলে দেওয়া, “আমি আত্মজীবনী কেন লিখব? জীবনে কী এমন করেছি যে আত্মজীবনী লিখতে হবে? আমি আবার সফল নাকি?”
কয়েক ঘণ্টা পরে মুম্বই-কলকাতা ফ্লাইটে বসে আর একটা
প্রশ্ন মাথায় এল। মুম্বইয়ের ওই মায়াবী কয়েকটা ঘণ্টা
কি আমাকে অমিতাভের ফ্যান করে দিল? বাড়ি ফিরে ‘দিওয়ার’-এর টরেন্ট ডাউনলোড করতে করতেও জবাবটা পেলাম না।
লেখাটা লিখতে বসেও প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি কি এখন অমিতাভের ফ্যান? তার চেয়ে বোধহয় বলা ভাল, আজ পর্যন্ত আমি মন্নত-এর মালিকের ফ্যান ছিলাম। খুব কাছ থেকে দেখে বুঝলাম, ঐশ্বর্য রায়ের শ্বশুর কোনও অংশে কম নয়। অরিজিন্যাল ডন কে? উত্তরে একটাই নাম আসেঅমিতাভ বচ্চন।
লক কিয়া যায়! |
কেবিসি এ বার সপ্তকোটি |
• শুরু আজ থেকে। শুক্র থেকে রবি, সন্ধে সাড়ে আটটায় সোনি-তে। তেরো উইকএন্ড। মোট ৩৮ এপিসোড।
• পুরস্কারমূল্য বেড়ে এ বার সাত কোটি টাকা।
•
‘সপ্তকোটি সিন্দুক’-এ থাকবে চারটে প্রশ্ন, যার উত্তর দিতে পারলে অংশগ্রহণকারীরা জিততে পারবেন এক কোটি থেকে তিন কোটি, পাঁচ কোটি এবং শেষ পর্যন্ত সাত কোটি টাকা।
• ফাস্টেস্ট ফিঙ্গার ফার্স্ট-এ থাকবে ‘বেস্ট অব থ্রি’। তিনটে ফাস্টেস্ট ফিঙ্গার ফার্স্ট রাউন্ডের স্কোর মিলিয়ে যিনি সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাবেন, হট সিটে বসবেন তিনি।
•
আরও বেশি লাইফলাইন ফ্লিপ দ্য কোয়েশ্চেন ফিরছে আস্ক দ্য এক্সপার্টের জায়গায়।
• ঝাঁ চকচকে নতুন লাইফলাইন পাওয়ার পপলু যা ব্যবহার করে অলরেডি ব্যবহৃত লাইফলাইন আবার জীবিত করে তোলা যাবে। পাঁচটা লাইফলাইনের মধ্যে মোট চারটে ব্যবহার করা যাবে।
•
যাঁরা হট সিটে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না, তাঁদের জন্য থাকছে ‘প্লে অ্যালং’। সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিতে পারলে এপিসোডের শেষে জিতবেন ।
• ১ লাখ টাকা। ঘরে বসেই জিতুন জ্যাকপট।
• একটা জিনিস শুধু
বদলাচ্ছে না। হটসিটে আপনি বসলে, উল্টো দিকে সেই অমিতাভ বচ্চন! |
|
|
|
|
|
|