পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল বাঁকুড়ায়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও দলেরই একগোষ্ঠীর মনোনীত সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া ‘বয়কট’ করলেন অন্য গোষ্ঠীর সদস্যেরা। এমনই ছবি দেখা গেল ইন্দাস, সোনামুখী ও রাইপুর ব্লকে। হিড়বাঁধে নির্বিঘ্নেই বোর্ড গড়ল বামেরা। জেলার এই একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতিই এ বার বামেদের দখলে গিয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের দিন বড়জোড়া ব্লকে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও এ দিন অবশ্য বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নেই কেটেছে।
ইন্দাস পঞ্চায়েত সমিতির ২৯টি আসনের মধ্যে ২০টিতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু, সোমবার বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের প্রতীকে জেতা ১৩ জন-সহ মোট ১৫ জন (বাকি দু’জনের মধ্যে এক জন সিপিএমের, অন্য জন নির্দল) উপস্থিত ছিলেন। এঁরা সকলেই ইন্দাস ব্লক তৃণমূল নেতা রবিউল হোসেনের অনুগামী হিসাবে পরিচিত। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে বাকি সাত জন তৃণমূল সদস্য বোর্ড গঠনে অংশ নেননি। এই সাত জন ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটের গোষ্ঠীর। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রবিউলের মেয়ে ফরিদা খাতুন। গুরুপদবাবুর অভিযোগ, “নিজের মেয়েকে সভাপতি করার জন্য রবিউল সিপিএমের এক সদস্যকে ভাঙিয়ে তৃণমূলে নিয়ে এসে সমিতির বোর্ড গঠন করেছে। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনাই করা হয়নি। তাই অনেক সদস্যই বোর্ড গঠন বয়কট করেছেন।” যদিও রবিউল হোসেনের দাবি, “দলের সিদ্ধান্ত মতোই সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিপিএমের সঙ্গে আঁতাতের কোনও প্রশ্নই আসে না। যে দুই সদস্যের কথা ওরা বলছে, তারা ইতিমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” |
শাসক দলের দ্বন্দ্বের একই ছবি দেখা গিয়েছে রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতিতেও। সেখানে ২৯টি আসনের মধ্যে ২৩টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু, এ দিন বোর্ড গঠনের সময় শাসক দলের ১৪ জন সদস্য হাজির ছিলেন। রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজু সিংহের দাবি, “দলের ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ লোককে সভাপতি ও সহ-সভাপতি করেছেন। তাই দলের নির্বাচিত কিছু সদস্য অপমানিত বোধ করায় বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় হাজির হননি।” জগবন্ধুবাবুর অবশ্য দাবি, “দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরাই সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন করেছেন। যাঁরা আসেননি, তাঁরা ব্যক্তিগত কারণেই অনুপস্থিত ছিলেন।”
সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতিতে অবশ্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি তৃণমূল। ২৫টি আসনের মধ্যে ১২টিতে জয়লাভ করেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলির মধ্যে ১০টিতে সিপিএম এবং ৩টিতে নির্দল তথা বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের প্রার্থীরা জিতেছেন। এ দিন বোর্ড গঠনের সভায় তৃণমূলের নির্বাচিত ১২ জনের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি সকলেই অনুপস্থিত। তাই সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন করেও স্বস্তিতে নেই শাসকদল। পঞ্চায়েত সমিতির নির্দল সদস্য (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বামাচরণ গরাইয়ের বক্তব্য, “দলের মধ্যেই একক ভাবে কেউ বোর্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের সমর্থন কেউ চাননি। তাই আমরা এ দিন বোর্ড গঠনে যাইনি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত মেনেই সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলেরই কেউ গিয়ে থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।” তাঁর সংযোজন, “মানুষ আমাদের সমর্থন করেছেন। জেলার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য।”
জেলার ২২টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে কেবল হিড়বাঁধেই বোর্ড গঠন করতে পেরেছে বামফ্রন্ট। তৃণমূলের গীতা সাহানাকে ৯-৫ ভোটে হারিয়ে এই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন সিপিএমের মোনালি মহান্তি। পঞ্চায়েত গঠনের মতোই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়া পঞ্চায়েত সমিতির ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি বামেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “যেখানে মানুষ আমাদের সমর্থন করেনি, সেখানে আমরা ভোটাভুটিতে অংশ নিইনি।” |