দীর্ঘদিন ধরে নিকাশি খাল সংস্কার হয়নি। ফলে কচুরিপানা ভরে আছে খালজুড়ে। তা ছাড়া খালের দু’ধারই শুধু নয়, খালের বুকেও তৈরি হয়ে গিয়েছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট। ফলে জল নিকাশির ক্ষমতা হারিয়ে তা এখন নেহাতই একটি মজে যাওয়া নালা। আর এলাকার জল নিকাশির এই দশায় অতিবৃষ্টির ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকা এখনও জলের তলায়। ডুবে আছে চাষের জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট। জল মাড়িয়েই চলছে যাতায়াত।
ফলতার দেবীপুর পঞ্চায়েতের আচান্দা, ঝুমনিয়া, হরিশপুর, বন্দনগর পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর, আমডালি, যাদববাটি এবং ন’পুকুরিয়া প্রভৃতি জল ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের দোস্থপুর মোড় থেকে দিঘির পাড় হয়ে কাঁটাখালি বড় খালে পড়ে। কাঁটাখালি খালটি মিশেছে হুগলি নদীতে। প্রায় ১৫ কিলোমিটার লম্বা ওই খালটি শেষ কবে সংস্কার করেছে সেচ দফতর, তা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধানরাও মনে করতে পারলেন না। ফলে যা হওয়ার, তাই হয়েছে। কোথাও খালে চর পড়ে গভীরতা কমে গিয়েছে। কোথাও কচুরিপানার জঙ্গল তৈরি হয়েছে। আর দীর্ঘদিন খাল সংস্কারের কাজে প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে খালের দু’পাশ এমনকী খালের মাঝেও গজিয়ে উঠেছে দোকান ঘর, বাড়ি। |
এ ভাবে খাল ভরাট করে দোকান বা বাড়ি তৈরি করতে কেউ বাধা দেননি? স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ভোটের কথা ভেবেই এ সব নিয়ে উচ্চবাচ্য করেন না। প্রশাসনকেও জানান না। প্রশাসনও ঝামেলা এড়াতে এ দিকে নজর দেয় না।
নিকাশি খালের এমন শোচনীয় দশার কারণে গত সপ্তাহে দিন কয়েক টানা বৃষ্টির জেরে এখনও জলে টইটম্বুর হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। দেবীপুর পঞ্চায়েতের আচান্দা, ঝুমনিয়া, হরিশপুর, বন্দনগর পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর, আমডালি, যাদববাটি এবং ন’পুকুরিয়া পঞ্চায়েতের নবাসন, মহলা, মাগনা, আশিনা-সহ বেশ কিছু গ্রামের শতাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। গৃহহীন হয়েছেন বেশ কিছু পরিবার। অভিযোগ, গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে আচান্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে ওই ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন শতাধিক মানুষ। শিশুদের জন্য অবশ্য আলাদা খাবারের বন্দোবস্ত হয়নি। বাসিন্দারা চাঁদা তুলে শিবিরে শরনার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন। পর্যাপ্ত খাবার না মেলায় মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
শিবিরে আশ্রয় নেওয়া গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা নন্দরানি দাস, রাখী মণ্ডল, মমতাজ বেওয়ারা বলেন, “জল ঢুকে আমাদের মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ত্রাণ শিবিরে তেমন খাবার মিলছে না।” তাঁরা জানান, সোমবার দুপুরে প্রশাসনের তরফে সামান্য চাল, ডাল, আলু দেওয়া হয়। রান্নার জন্য জ্বালানিরও অভাব রয়েছে। |
স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম হালদার, সুনীল কাঞ্জিরা জানালেন, জল না নামা পর্যন্ত ত্রাণ শিবির চালানোর চেষ্টা করা হবে। ইতিমধ্যেই ফলতার বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ এলাকায় ঘুরে গিয়েছেন। কিন্তু তাতে তাঁদের অবস্থার কোনও বদল ঘটেনি বলে দুর্গতদের দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের গাফিলতিতেই গ্রামবাসীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কেননা, দীর্ঘদিন ধরে খাল বা স্লুইস গেটগুলি সংস্কার করা হয়নি। এ ছাড়া, এলাকাটি নিচু হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে।
ডায়মন্ড হারবার মহকুমা সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার প্রদীপ হালদার বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে জল জমে গিয়েছে। দ্রুত জল নিকাশির জন্য সমস্ত স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।” খাল সংস্কারের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, “এ নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। তা ছাড়া এলাকার সব খাল এই দফতরের আওতায় পড়ে না।”
|