নাড়ি ছেঁড়া ধন ফেরত নাড়ি ছিঁড়েই
নাড়ির টান না-হোক। অতৃপ্ত মাতৃত্বের বাঁধন!
পালিতা মেয়েকে তার জন্মদাত্রী মায়ের হাতে তুলে দিতে হল বিচারপতির বিধানে। দিয়েই আদালতে জ্ঞান হারালেন পালিকা মা। সোমবার এক মায়ের সন্তান ফিরে পাওয়ার পাশে অন্য এক মায়ের সব হারানোর সাক্ষী থাকল কলকাতা হাইকোর্ট।
২০১১-র জুনে চুরি যায় নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা লালন শেখ ও সারিকা বিবির শিশুকন্যা। তখন তার বয়স তিন মাস। বহু খোঁজাখুঁজির পরে জানা যায়, লালন ও সারিকার মেয়ে বড় হচ্ছে তাঁদের বাড়ি থেকে দু’টি গ্রাম পরে, দিলীপ পাল ও নয়না পালের কাছে। পুলিশি তদন্ত জানাচ্ছে, জহুরা বিবি নামে গ্রামেরই এক মহিলা জড়িবুটি, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি করতেন। তিনিই শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে পাল দম্পতিকে দেন। তবে এর পিছনে কোনও আর্থিক লেনদেন ছিল কি না, নিশ্চিত ভাবে জানতে পারেনি পুলিশ।
বোধন ও বিসর্জন।
হারানো মেয়ে ফিরল সারিকার কোলে। মেয়ে ফেরত দিয়ে কান্না পালিকা মা নয়নার।
ছবি এবিপি আনন্দের সৌজন্যে।
শিশুর অধিকার নিয়ে মামলা হয়। হয় ডিএনএ পরীক্ষাও। বিজ্ঞানের সেই পরীক্ষা জানায়, শিশুটি লালন-সারিকারই। বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস ও বিচারপতি সুবল বৈদ্যের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন শিশুকন্যাটিকে তার জন্মদাতা বাবা ও জন্মদাত্রী মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। প্রায় আড়াই বছর পরে মেয়েকে কাছে পেয়ে হাসিমুখে আদালত ছাড়েন লালন-সারিকা।
কী করে খোয়া গিয়েছিল শিশুটি?
আদালত সূত্রের খবর, ২০১১-র ৪ জুন রাতে মেয়েকে নিয়ে শুয়ে ছিলেন লালন ও সারিকা। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখেন, শিশুটি নেই। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোনও খোঁজ মেলেনি। তার পরে লালন কোনও ভাবে জানতে পারেন, নিঃসন্তান দিলীপ ও নয়নার বাড়িতে একটি শিশুকে দেখা যাচ্ছে।
পুলিশের তদন্তকারী অফিসার খবর পেয়ে ওই নিঃসন্তান দম্পতিকে জেরা শুরু করেন। পাল দম্পতি জানান, মেয়ে তাঁদেরই। ‘বার্থ সার্টিফিকেট’ দেখিয়ে নয়না ও দিলীপ দাবি করেন, বাড়িতেই ওই মেয়ে হয়েছে নয়নাদেবীর। পুলিশের সন্দেহ যায়নি। আরও তদন্ত চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে, পাল দম্পতি যে-বার্থ সার্টিফিকেট দেখিয়েছেন, সেটি ভুয়ো। তার পরে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, লালন ও সারিকাই শিশুটির আসল বাবা ও মা।
রানাঘাট আদালতে এই মামলার শুনানির সময় লালন ও সারিকা শিশুটিকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানান। বিচারক জানিয়ে দেন, এ ভাবে এক জনের কাছ থেকে অন্য কারও হেফাজতে শিশুটিকে দিতে বলার অধিকার তাঁর নেই। ওই দম্পতি হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস (সশরীরে হাজির করানো) মামলা করেন।
লালন শেখের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল এ দিন আদালতে বলেন, “লালন ও সারিকা যে শিশুটির বাবা ও মা, ডিএনএ পরীক্ষাতেই তা প্রমাণিত। তাই শিশুটি কখনওই অন্য কারও হেফাজতে থাকতে পারে না। শিশুটিকে হারিয়ে এত দিন পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার বাবা-মা।” তিনি জানান, দিলীপ-নয়নার বিরুদ্ধে শিশু চুরির মামলায় চার্জশিটও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই তাঁর আবেদন, এখনই শিশুটিকে তার আসল বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, লালন-সারিকাই যে শিশুটির বাবা-মা, তাতে সন্দেহ নেই। দিলীপ ও নয়না অবৈধ ভাবে এবং অপরাধমূলক কাজ করে শিশুটিকে তাঁদের কাছে রেখে দিয়েছেন। সেটাও আদালত মেনে নিতে পারে না।
তার পরেই আদালতের নির্দেশে প্রায় আড়াই বছর ধরে বড় করে তোলা মেয়েকে তার আসল মা সারিকার কাছে ফিরিয়ে দেন নয়না। অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে আদালত কক্ষেই জ্ঞান হারান তিনি। আত্মীয়েরা বাইরে নিয়ে গিয়ে শুশ্রূষা করে তাঁর জ্ঞান ফেরান।
হারিয়ে পাওয়ার আনন্দ আর পেয়ে হারানোর বেদনায় বিচারালয়ের বাতাস তখন একইসঙ্গে হাল্কা ও ভারী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.