পূর্বে সভাপতি নির্বাচন নিয়েও কোন্দল তৃণমূলে
নগণের আস্থা আছে। নিজেদের মধ্যে মিলমিশ নেই। সোমবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন ঘিরেও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল পূর্ব মেদিনীপুরে। জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২৪টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসকদল ক্ষমতা দখল করলেও অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটল ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতিতে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল অবশ্য বলেন, ‘‘জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতিতেই এদিন সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদের নির্বাচন হয়েছে নির্বিঘ্নে। কোথাও থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি।”
পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ৪০। তার মধ্যে বামেদের ১৮, তৃণমূলের ২০ ও কংগ্রেসের দু’জন রয়েছেন। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসেনি বামেরা। বাকি ২২ জন নবনির্বাচিত সদস্য শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তৃণমূলের চার জন ও কংগ্রেসের এক জন সভাপতি নির্বাচনের সময় ছিলেন না। অভিযোগ, মতবিরোধ হওয়ায় তৃণমূলের চার সদস্যকে তাড়িয়ে দিয়েছেন দলের লোকেরাই। শেষমেশ তৃণমূলের ১৬ জন ও কংগ্রেসের এক সদস্যের উপস্থিতিতে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন লিপিকা হাজরা, সহ-সভাপতি হন সুজিত রায়। লিপিকাদেবী ও সুজিতবাবু পাঁশকুড়ায় তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমানের গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অন্য দিকে, যাঁরা ছিলেন না সেই সময়, তাঁরা বিরোধী গোষ্ঠী দলের ব্লক সভাপতি দীপ্তিকুমার জানা ও জইদুল খানের অনুগামী হিসেবে পরিচিত।
এগরা ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে সদ্য নির্বাচিত সভাপতি, সহ-সভাপতি।—নিজস্ব চিত্র।
হরিশচন্দ্র প্রামাণিক, বিনোদ মুর্মু, শেখ মোবারক, পিয়ালী প্রধান নামে ওই চার জনকে শপথ নেওয়ার আগেই বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন বের করে দেন বলে অভিযোগ। পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা তথা দলের রাজ্য সম্পাদক জইদুল খানের অভিযোগ, ‘‘দলের ওই চার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যকে দলেরই একাংশ জোর করে তাড়িয়ে দেয়। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।”
দলীয় কোন্দলের কথা অবশ্য মানতে চাননি তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। আনিসুরের বক্তব্য, “জইদুলরা ব্যক্তিগত স্বার্থেই চেয়েছিলেন দলের ওই সদস্যদের সমর্থনে সিপিএমের সভাপতি নির্বাচিত হোক। কিন্তু সিপিএম সদস্যরা হাজির না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তখন ওই চার সদস্য বেরিয়ে যান”
এ দিকে পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির ১৮ জন বামফ্রন্ট সদস্যের কেউই উপস্থিত না থাকার কারণ হিসাবে তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই দুষছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘এদিন সকাল সাড়ে ৯ টা নাগাদ তৃণমূলের ৪০-৫০ জন লাঠিধারী সমর্থক আমাদের জোনাল অফিসের সামনে দিয়ে পরপর দু’বার মিছিল করে হুমকি দিয়ে যায়। পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আমাদের সদস্যরা জোনাল অফিসের সামনে গাড়িতে ওঠার সময় তৃণমূলের বেশ কিছু লোকজন এসে জোর করে টেনে নামিয়ে দেয় ও গাড়ির চাবি খুলে নিয়ে চলে যায়। নিরাপত্তার অভাবের কারণেই আমাদের সদস্যরা পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে যেতে পারেননি। পুলিশ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” এই প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “আগাম অভিযোগ পাওয়ার কারণে এ দিন পাঁশকুড়ায় র্যাফ-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের আসতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে প্রশাসন-পুলিশের কাছে অভিযোগ আসেনি।” পটাশপুর ২ ব্লকেও সভাপতি নিয়ে অসন্তোষ ছিল দলে। এমনকী এক জন পঞ্চায়েত সদস্য আসেননি সভায়। তবে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটেই চন্দন সাউ সভাপতি ও ফণীভূষণ বেরা সহ-সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন।
এ দিন কাঁথি মহকুমার আটটি ব্লকের মধ্যে একমাত্র দেশপ্রাণ ব্লকে সভাপতি হিসেবে তরুণ জানা পুনর্নিবার্চিত হন। সহ-সভাপতি হিসাবে কাঁথি ১ ব্লকের শশাঙ্ক জানা রয়ে গিয়েছেন পুরনো পদে। বাকি সব নতুন মুখ। গণ্ডগোলের খবর নেই। জেলার একমাত্র সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি সুতাহাটায় অবশ্য এ দিন বোর্ড গঠন হয় মোটের উপর নির্বিঘ্নেই। সভাপতি ও সহ-সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন শেখ নূর আলম ও কেতকী ঘোষ। বোর্ড গঠনের পরে সুতাহাটায় মিছিল করে সিপিএম। নেতৃত্ব দেন হলদিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুদর্শন মান্না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.