মাজরা পোকার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে ধানখেতে। কালনা-১ ব্লকে এমন অভিযোগ জানিয়েছেন বহু চাষিই। মেঘলা আবহাওয়া ও ঝিরঝিরে বৃষ্টির কারণেই এমন হচ্ছে বলে কৃষি দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা মহকুমার পাঁচটি ব্লকের প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে এ বার ৫৭ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে এ বছর আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কালনা-১ ব্লকের সুলতানপুর, ন’পাড়া, ইসবপুর, সিমলা, মধুপুর, বাগনাপাড়া, বেগপুর, কাঁকুড়িয়া এলাকায় শুরু হয়েছে মাজরা পোকার আক্রমণ। সুলতানপুরের ধান চাষি মধু ঘোষ বলেন, “জমিতে গেলেই দেখছি ধান চারার উপর ঘুরছে মাজরা পোকা। কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনও কাজ হচ্ছে না।” বাগনাপাড়ার ধান চাষি গোলক বিহারী মজুমদার বলেন, “এমনিতেই চাষের খরচ বেড়েছে। এর পরে যদি পোকার আক্রমণে ধান গাছ নষ্ট হয় তাহলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
মহকুমা কৃষি কর্তারাও স্বীকার করেছেন ধানচাষের জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণের কথা। কৃষিকর্তারা জানাচ্ছেন, এ বছর মেঘলা আবহাওয়া ও ঝিরঝিরে বৃষ্টি হওয়ার কারণেই মাজরা পোকার বৃদ্ধি। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “পূর্ণাঙ্গ মাজরা পোকা ধান গাছের কোনও ক্ষতি করতে পারে না। ক্ষতি করে মাজরা পোকার লার্ভা। এই লার্ভাগুলি মাজরা গাছের কাণ্ডের ভিতরে ঢুকে গাছের মজ্জা চুষে খায়। এরফলে সেই গাছ শুকিয়ে মরে যায়।” তবে তাঁর দাবি, “ধান গাছে মাজরা আক্রমণের ঘটনা ঘটলেও সেটা বড় আকার নেয়নি। তাই চাষিদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।” |
দফতরের আর এক সহ-কৃষি অধিকর্তা নিলয় কর বলেন, “অনেক সময় চাষিরা আতঙ্কিত হয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে তাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। গড়ে প্রতি বর্গ মিটার জমিতে ১টি মাজরার ডিমের গাদা অথবা শতকরা ৫টি শুকনো মৃতপ্রায় ধান চারা দেখা গেলেই ওষুধ ব্যবহার করা উচিত।” তাঁর সংযোজন, “এ ক্ষেত্রে প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম কারটাপ হাইড্রোক্লোরাইড অথবা ১৫ লিটার ৫ মিলিগ্রাম ইসিডাক্লোর পিড মিশিয়ে ধানচারায় স্প্রে করলে মাজরা পোকার হাত থেকে মুক্তি মিলবে।” |
কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, কীটনাশক প্রয়োগ না করেও মাজরা পোকা দমন করা যায়। তাঁরা জানিয়েছেন, ধানখেতে ফেরোমোন ফাঁদ পাততে হবে। এই ফাঁদ দেখতে ফানেলের মত। যার উপরে থাকে একটি প্লাসটিকের টুপি। নিচে থাকে একটি কেমিক্যাল মেশানো ছোট লাঠি। ওই লাঠি থেকে স্ত্রী মাজরার গন্ধ ছড়ায়। ওই গন্ধে আকৃষ্ঠ হয়ে ছুটে আসে পুরুষ মাজরার দল এবং ধরা পড়ে নিচের জালে। পাশাপাশি রাত্রিবেলা আলোর ফাঁদ পেতেও মাজরা পোকা দমন করা যায়। জমির কাছাকাছি কোথাও আগুন জ্বালালে মাজরা পোকার দল সেখানে ঝাঁপ দিয়ে পুড়ে মরে। কৃষি কর্তাদের মতে, জমিতে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের বেশি প্রয়োগেই মাজরা পোকার আক্রমণ বেশি ঘটে। কৃষি-বিশেষজ্ঞদের আশ্বাস, বীজতলা থেকে চারা তোলার সাত থেকে দশ দিন আগে দানাদার কীটনাশক প্রয়োগ করলে মাজরা পোকা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। |