কয়েক দিন আগে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির জমা জল থেকে এখনও রেহাই নেই হাওড়ার। সেই জল পেরিয়ে যাতায়াতের নিত্যযন্ত্রণা তো আছেই। এ বার তা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে আন্ত্রিক রোগও। রবিবার রাত পর্যন্ত তিন এবং এগারো নম্বর ওয়ার্ড থেকে আন্ত্রিকে আক্রান্ত ৭০ জনকে সত্যবালা আইডি হাসপাতাল এবং জায়সবাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বেশ কিছু আক্রান্ত মানুষ হাওড়ার বিভিন্ন নার্সিংহোমেও ভর্তি হয়েছেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
হঠাৎ আন্ত্রিক ছড়াল কী ভাবে?
সাম্প্রতিক বৃষ্টির জেরে এখনও হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় কোথাও দু’ফুট, কোথাও বা তিন ফুট জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেই জল কালো হয়ে দূষণ ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমান, বৃষ্টির জমা জলের সঙ্গে নর্দমার জল এবং পানীয় জল মিশে যাওয়াতেই এই বিপত্তি। তিন নম্বর ওয়ার্ডের শিবগোপাল ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা সুমন হাজরা বলেন, “কয়েক দিন ধরেই দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় জল আসছে। বাধ্য হয়েই সেই জল খেতে হচ্ছে আমাদের। মনে হয়, এত দিন ধরে জমে থাকা বৃষ্টির জল আক পানীয় জল মিশে গিয়েছে।”
রাজু রায় নামে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা লেনের এক বাসিন্দার অভিযোগ, এত দিন ধরে জল জমে রয়েছে। কাউন্সিলরকে বারবার বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে পুর দফতরকে। পুরসভার পাইপ নোংরা জলে ডুবে ছিল। পুরসভার পাইপে ফুটো থাকলে সেখান দিয়ে পাইপের মধ্যে নোংরা জল ঢোকা অসম্ভব নয়। কিন্তু পুরসভা ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। যে-ভাবে একের পর এক পাড়া আন্ত্রিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে, তাতে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। পুরসভার তরফে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়নি। জমা জল বার করে দেওয়ারও
ব্যবস্থা হয়নি।
পুরকর্মীদের এলাকায় দেখা যাচ্ছে না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, পুরসভা জমা জল নামানোর কোনও চেষ্টাই করছে না। তার উপরে জঞ্জাল সাফাই বন্ধ। সব মিলিয়েই সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জায়সবাল বলেন, “যে-দু’টি ওয়ার্ডে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সেখানকার কাউন্সিলরেরা আমাদের কিছুই জানাননি। আমি অন্য সূত্রে জানতে পেরে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি। কোথা থেকে এই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, পুরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সেটা দেখতে বলা হয়েছে।”
তিন নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর বাসন্তী মজুমদার যে যথাসময়ে মেয়রকে বিষয়টি জানাননি, তিনি নিজেই তা স্বীকার করে নিয়েছেন। বাসন্তীদেবী বলেন, “ঠিক সময়ে মেয়রকে বিষয়টি জানাতে না-পারায় আমি দুঃখিত। আমি এ দিনই বিষয়টি মেয়কে জানিয়েছি। হাসপাতালে গিয়ে আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোরও ব্যবস্থা করেছি।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস রায় বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, এটা জলবাহিত সংক্রমণ। খবর পাওয়া সঙ্গে সঙ্গেই আমরা প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি। সোমবারেই আক্রান্ত এলাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল পাঠানো হচ্ছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, আন্ত্রিকের বিষয়টি বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালকেও জানিয়ে রাখা হয়েছে। সঙ্কটাপন্ন রোগীদের সেখানেই সরানো হবে। |