সাফ হয়েও ফের হকারের দখলে গেল রাস্তা
মোটে সপ্তাহ দু’য়েক আগেই ‘সাফ’ করা হয়েছিল রাস্তাটা।
নইলে তো রাস্তা বলতে ঝিঙে, আলু, ঢেঁড়শের ডালার সারি। ঠেলা ভ্যানে পটল, আদা, কচু। দু’দিকে সব্জির পশরা, মাঝে রিকশাভ্যানের যাতায়াত। ভিড় কাটিয়ে, গুঁতো খেয়ে স্টেশনে পৌঁছনোর আগেই ট্রেন চলে যায়। কাটোয়ার স্টেশন রোডের যাত্রীদের এই হল অভিজ্ঞতা।
পূর্ব রেলের বি বি লুপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পুরবোধি মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “রোজই রিকশা, ভ্যান ও সব্জি বিক্রেতাদের কাটাতে হয়, অনেকটা ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ফুটবল নিয়ে এগোনোর মতো। ট্রেন মিস-ও হয়ে যায়।” শহরের মানুষের ক্ষোভের আঁচ টের পেয়ে কাটোয়া স্টেশন বাজার চৌরাস্তা থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত চলমান সব্জি বাজার ‘সাফ’ করেছিল কাটোয়া পুর-প্রশাসন। অগস্ট মাসের মাঝামাঝি চলছিল সেই অভিযান। এলাকার সাধারণ মানুষই বিক্ষোভ দেখিয়েছিল হকার তোলার জন্য।
মহকুমা প্রশাসন এবং পুরসভা একটা বৈঠক করে কয়েকটি প্রধান রাস্তা থেকে ভ্যানের হকারদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশি অভিযান শুরু হতে তার লাগোয়া স্টেশন বাজার চৌরাস্তা থেকে স্টেশন পর্যন্ত রাস্তাটি থেকেও উধাও হয় হকাররা। ফলে স্বস্তি পেয়েছিলেন রেলের নিত্যযাত্রীরা। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই পুকুরের পানার মতোই ফের সব্জির ডালা ফিরে এসেছে রাস্তার দু’ধারে। দলে-দলে হকারের বিকিকিনি, যত্রতত্র রিকশার ঢল।
কাটোয়া স্টেশন রোড দখল করেই অবাধে সব্জির কারবার। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
কাটোয়া থেকে ট্রেন ধরেন বেশ কয়েক জন স্কুলশিক্ষিকা। তাঁদর আক্ষেপ, “পুর-প্রশাসন হকারদের সরার নির্দেশ দেওয়ার পরে স্টেশন রোড পুরো সুনসান হয়ে গিয়েছিল। ঠেলাঠেলি-গুঁতোগুঁতি নেই। এখন আবার যে কে সেই! রাস্তায় ভিড় থাকবে জেনে সময়ের আগেই বাড়ি থেকে বেরোতে হয়।”
পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন কাটোয়া। বর্ধমান জেলার কাটোয়া-কালনা মহকুমার বাসিন্দারা তো বটেই, নদিয়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের একটি বিশাল অংশের মানুষও এর উপরে নির্ভরশীল। পূর্ব রেলের বি বি লুপ লাইনের উপর দিয়ে প্রতিদিন কামরূপ, তিস্তা-তোর্সা সহ একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে। চলে কামাখ্যা-পুরী, দিঘা-জলপাইগুড়ির ট্রেন। কাটোয়া থেকে হাওড়া, ব্যান্ডেল ও আজিমগঞ্জ যাওয়ার লোকাল তো আছেই।
কাটোয়া শহর থেকে স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা মূলত দু’টি। বর্ধমান-কাটোয়া রোডের স্টেশন বাজার চৌরাস্তা থেকে মালগুদামের পাশ দিয়ে স্টেশন যাওয়া যায়। অন্যটি হল গোয়েঙ্কা মোড় থেকে সার্কাস ময়দান হয়ে নজরুল-মূর্তির পাশ দিয়ে সোজা স্টেশন রোড। এখন দুই রাস্তাতেই ফের বাজার বসতে শুরু করেছে।
চৌরাস্তা থেকে স্টেশন যাওয়ার বারো ফুট চওড়া রাস্তাটির বেশ কিছু অংশের হাল এমনিতেই বেশ খারাপ। পিচের আস্তরণ উঠে বড়-বড় পাথর দেখা দিয়েছে। রাস্তার এক ধারে রেল কোয়ার্টারের দিকে রিকশার সারি। তার পাশের পাঁচিল-দেওয়া জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়ে সব্জি থেকে মুরগি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রয়েছে সেলুনও। আর সার্কাস ময়দানের দিকে রাস্তার উপরেই বাজার। তার দখলদারির এলাকাও বাড়ছে দিন-দিন। স্টেশন রোডে মালগুদামের মুখে যত্রতত্র রিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট হচ্ছে যখন-তখন।
এত লোকের অসুবিধা সত্ত্বেও কী করে রাস্তা জুড়ে হকারদের এমন বাড়বাড়ন্ত? নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে এলাকার অনেকেরই ধারণা, স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই হকারদের কাছ থেকে ‘তোলা’ নিয়ে তাঁদের দোকানের সামনে বসতে দেন। এবং সেই ধারণা যে অমূলক নয়, তা কিছু হকারও একান্তে স্বীকার করছেন। সেই সঙ্গে তুলছেন তাঁদের ‘অসহায়তা’র কথাও। অগ্রদ্বীপের হরিমোহন ভাওয়াল যেমন বলেন, “রাস্তার পাশে হকারি ছাড়া করবই বা কী? পেট চলবে কী করে?”
হকারদের থেকে ‘তোলা’ আদায়ের বিষয়টি ব্যবসায়ী সমিতিরও নজরে রয়েছে, জানালেন কাটোয়া মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র বিদ্যুৎ নন্দী। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি জানি। আগামী সপ্তাহেই স্টেশন রোড ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। তোলাবাজি, টাকা নিয়ে হকার বসানো সম্পূর্ণ বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছি।”
কাটোয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুরেশ রানো বলেন, “স্টেশন রোড মূলত কাটোয়া স্টেশন কর্তৃপক্ষের আওতায়। তাঁরা যদি ওই রাস্তা যানজট মুক্ত করতে চান, তবেই আমরা হকার উচ্ছেদের অভিযানে যেতে পারব।” কী বলছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ? স্টেশনের এক কর্তা বলেন, “স্টেশন রোড দখল মুক্ত করার জন্য আমরা জিআরপি, আরপিএফ, পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসব।” কাটোয়া পুরসভার পুরপ্রধান শুভ্রা রায় বলেন, “শহরকে যানজট মুক্ত করা গিয়েছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষ তাদের রাস্তা যানজট মুক্ত করতে উদ্যোগী হলে আমরা সহযোগিতা করব।”
সদিচ্ছা সব পক্ষেই। এখন কাজের কাজ কী হয়, তারই সাক্ষ্য দেবে কাটোয়া স্টেশন রোড।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.