শনিবারের নিবন্ধ
অকালবোধন
শৈশবের স্থায়িত্ব কি কমছে? তার সময় ছিনিয়ে নিচ্ছে অকাল যৌবন?
মা-র সঙ্গে মাঝেমধ্যেই শপিং মল-য়ে যায় সাত বছরের ময়ূখ। এক দিন মা-র চোখে পড়ে, দোকানে সাজানো ম্যানিকুইনের বুকে ময়ূখ হাত বোলাচ্ছে! মা-কে দেখেই চমকে হাত সরিয়ে নেয় সে। মা যত না ধাক্কা খান হাত দেওয়ায়, তার থেকে অনেক বেশি ছেলে ধরা পড়ে হাত সরিয়ে নেওয়ায়। বুঝতে পারেন, হাত দেওয়াটা নেহাত কৌতূহলে নয়। ওখানে যে ‘নিষিদ্ধ আকর্ষণ’ রয়েছে সেই বোধ সাত বছরের ছেলের মধ্যে চলে এসেছে!
বাবা আর মেয়ে বাড়িতে পাশাপাশি বসে টেলিভিশনে সিনেমা দেখছে। নায়ক-নায়িকা বেশ ঘনিষ্ঠ। চার বছরের মেয়ে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলে, “দেখো দেখো ছেলেটা এ বার মেয়েটাকে জড়িয়ে গালে পেক করবে। এই রকম জড়িয়ে ধরার পর ছেলেরা পেক করে!”
এই তো সে দিন, রুবি পার্কের সঙ্গীতা ওঁর পাঁচ বছরের মেয়েকে পার্ক স্ট্রিটের স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। কো-এডুকেশন স্কুল। ছুটির সময় গেটের সামনে গাদা গাদা ছেলেমেয়ে। মেয়ে রূপকথার হাত ধরে বেরিয়ে আসছেন এমন সময় ওরই ক্লাসের অর্চিস্মান স্মার্টলি এগিয়ে এল। কেজি-র ছেলের কথা-ই এখনও স্পষ্ট হয়নি। তাতে মোটেই কম্পিত নয় বীরের হৃদয়। আধো গলাতেই সঙ্গীতাকে ডেকে গম্ভীর মুখে সে বলল, “আন্টি আমি রূপকথাকে ‘শাদি’ করব। আমি ওকে আই লাভ ইউ করি!” আকস্মিক এ হেন প্রস্তাবে সঙ্গীতা বাক্রুদ্ধ!
ক্লাসটিচারকে গোপনে ব্যাপারটা জানানো হল। অর্চিস্মানকে ডেকে ম্যাম বোঝানোর চেষ্টা করলেন, “লাভ তো তুমি অনেককেই করতে পারো। বাবা-মাকে, অন্য বন্ধুদের, ভাইবোনকে, পোষা ডগিকে, সব্বাইকে। সবই তো এক।” কিন্তু ছেলে অদম্য। জোর দিয়ে বলল, “তুমি কিচ্ছু জানো না। গার্লফ্রেন্ডকে ‘আই লাভ ইউ’ বলে। তার পর ‘শাদি’ হয়। তার পর পেট ফেটে বেবি বেরোয়।” এ বার ম্যাম ধরাশায়ী।
মনোবিদের কাছে ক্লাস ফাইভের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন অভিভাবকেরা। সে নামী হোস্টেলে থাকে। দশ বছরের ছেলে মনোবিদকে জানাল, সে ‘এম পি’ নিয়ে খেলতে ভালবাসে। সেটা কী বস্তু? ছেলে জানায়, ‘মাই পে**’-কে ছোট করে তারা ওই নামেই ডাকে। তার দ্বিধাহীন বক্তব্য, “এম পি নিয়ে খেললে আমার আরাম লাগে। রাতে বিছানায় শুয়ে আমি তাই খেলি। কিন্তু আমার তিন-চার জন ফ্রেন্ড টর্চ জ্বালিয়ে আমার খেলা দেখে। আমার অসুবিধা হচ্ছে।”
চার থেকে এগারোর কোঠায় থাকা শ্রীমান-শ্রীমতীদের বাবা-মা, আত্মীয়, শিক্ষক কিংবা শিশু-মনোবিদদের অনেকের সঙ্গে গল্প করলেই জানতে পারবেন এই রকম ‘অকাল যৌবন চেতনা’-র কাহিনি। বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ, দেহসচেতনতা বা প্রেমে পড়ার মতো অনুভূতিগুলো নিয়ে এক সময়ে বয়ঃসন্ধি শুরু হত। এখন অন্য রকম হাওয়ায় বয়ঃসন্ধি এগিয়ে এসেছে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে। চোদ্দোর মন তৈরি হয়ে যাচ্ছে আটেই।

কখন চিন্তার কারণ আছে
• যদি শিশুর যৌনকাজ প্রাপ্তবয়স্কদের মতো (ওরাল সেক্স অথবা সঙ্গম) হয়
• যদি বারবার বারণ করা সত্ত্বেও শিশু বারবার একই যৌন আচরণ করে
• যদি ঘন-ঘন শিশুর মুখে যৌন ইঙ্গিতবাহী শব্দ শোনা যায়
•যদি শিশুকে বারণ করলে বা বাধা দিলে শিশু রেগে যায়, প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয় বা মারমুখী হয়ে ওঠে
• যদি শিশুর মধ্যে একমাত্র যৌন বিষয় জানার আগ্রহ দেখা যায়। শিশুর পক্ষে অন্য আকর্ষণীয় জিনিস যেমন ফুটবল খেলা, বাইকে চড়া, গল্প শোনা, ছবি আঁকার মতো ব্যাপারে যদি তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকে
কী করতে হবে
• শিশুকে যৌন আচরণ করতে দেখলে প্রথমে চেঁচামেচি, মারধর না করে ঠান্ডা মাথায় তাকে ভুল-ঠিক বোঝাতে হবে
• কাউন্সেলিং হল সব চেয়ে কার্যকর। কেন সে এই রকম করছে জানতে হবে, কথা ধৈর্য ধরে শুনতে হবে, সময় দিতে হবে
• শিশু কোনও যৌনহেনস্তা ভোগ করছে কি না দেখতে হবে। বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে যাতে তাঁদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় শিশু না-দেখে
• শিশুকে বোঝাতে হবে তার গোপনাঙ্গ একান্ত ভাবে ‘প্রাইভেট পার্টস।’ এখানে হাত দেওয়া যায় না বা কাউকে হাত দিতে দেওয়া যায় না
• বয়সোপযোগী ভাবে অল্প-অল্প করে শিশুকে তার দেহ এবং যৌনতা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে
তথ্য: মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম ও শিশু মনোবিদ হিরণ্ময় সাহা

এখনকার শৈশব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর দুধভাত মার্কা নয়। এই শৈশব অনেক পরিণত, চটপটে। তাদের মানসিক বোধ, চাহিদা এবং তার প্রকাশ অনেক জড়তাহীন, স্পষ্ট। চিকিৎসকেরা বলছেন, অতিরিক্ত মানসিক পরিণতির জন্যই ক্লাস থ্রি-ফোরে এদের অনেকের পিরিয়ড হয়ে যাচ্ছে, সিক্সে উঠতে না উঠতে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে জন্মরহস্য। ক্লাস-টুয়ের এক অকালপক্ক স্কুলবাসে ‘ভিকি ডোনার’ ফিল্মের ‘স্পার্ম তত্ত্ব’ সহপাঠী ও পাঠিনীদের বোঝাতে-বোঝাতে এসেছে শুনে মায়েদের মাথায় যতই টর্পেডো-হানা হোক না কেন, ওই যে বলে না, ‘সত্যেরে লও সহজে’।
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের অনুভূতিতে, “যে চেতনাগুলো আমাদের প্রজন্মে ১৪-১৫ বছরে এসেছে সেগুলো এখনকার শিশুরা ৮-৯ বছরে বুঝে ফেলছে। তার কারণ, আশপাশে এমন অনেক কিছু আছে যা স্টিমুলেশন হিসাবে কাজ করছে। ইন্টারনেটে একটা মাউজ ক্লিক করলে সারা বিশ্ব তার কাছে খোলা। তার ভাল দিক যেমন আছে, তেমন মন্দও আছে। সঙ্গে রয়েছে টেলিভিশনের হরেক চ্যানেল, রয়েছে যথেষ্ট অ্যাডাল্ট ভিডিও গেম।”
নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের। তখন ক্লাস সিক্স-সেভেন হবে। কলকাতা তখনও শপিং মল, কেব্ল টিভি চেনেনি। ‘মিলস অ্যান্ড বুন’-য়ের একটা বই জোগাড় করতেই কালঘাম ছুটে যেত। কিন্তু সেখানেও নায়ক নায়িকার দেখা হল, তারা পরস্পরের হাত ধরল, চুমু খেল, তার পর অন্ধকার! সেই অন্ধকারে যে কী হয়, তা জানার আর উপায় নেই। তাই গোগ্রাসে ইংরাজি ম্যাগাজিনের ‘ব্যক্তিগত’ প্রশ্নোত্তরের পাতা পড়া হত। সেখান থেকেও পুরোটা স্পষ্ট হত না। ক্লাস নাইন-টেনে এক-আধজন বন্ধুর বয়ফ্রেন্ড থাকত। আর এখন সদ্যকিশোরী স্বস্তিকার মেয়ে অক্লেশে বলে, “হ্যাঁ, দে মেট, দে কিসড অ্যান্ড হ্যাড সেক্স। হোয়াটস দ্য বিগ ডিল?”
মনোবিদদের একাংশের মতে, “এরা সত্যিই হতভাগ্য। সময়ের আগে এদের শৈশব হারিয়ে গিয়েছে। আমাদের প্রজন্মের শিশুরা সত্যিই অবোধ ছিল বলে নিষ্কলুষ শৈশব উপভোগ করেছে। তারা ভাগ্যবান।” কিন্তু ফ্রয়েডিয়ান তত্ত্বে শিশু-যৌনতা তো বহু দিন আগেই স্বীকৃতি পেয়েছিল। ফ্রয়েড লিখেছিলেন, জন্মের পর থেকেই নানা আঙ্গিকে শিশু যৌন আনন্দ খোঁজে, তার মধ্যেও যৌনবোধ পুরোমাত্রায় থাকে। তবে সেই বোধ প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে কিছুটা অন্য রকম হয়। তার প্রকাশও হয় আলাদা।
ফ্রয়েডের ‘ওয়েদিপাস তত্ত্ব’ জানিয়েছে, মায়ের প্রতি শিশুপুত্রের আকর্ষণ বা বাবার প্রতি শিশুকন্যার টানের অন্তঃস্থলে লুকিয়ে আছে সেই যৌনটান। সেই টানেই বাবা-মাকে ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখলে যৌনঈর্ষা জাগতে পারে সন্তানের। শিশু মনে অন্তর্নিহিত যৌনতার আরও ব্যাখ্যা করেছিলেন ফ্রয়েড। বলেছিলেন, বুকের দুধ খাওয়া থেকেই শিশুর ‘ওরাল সেক্সুয়ালিটি’-র সূত্রপাত। আঙুল চোষার মধ্যে সেই ‘যৌন সুখ’ ধরে রাখতে চায় অনেকে। পাঁচ-ছয় বছর হওয়ার পর যৌনাঙ্গ নিয়ে খেলতে- খেলতেই ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে অনেকে হস্তমৈথুনের কৌশল রপ্ত করে।
আবার মনোবিদ ও সমাজতাত্ত্বিকদের একটা অংশ ফ্রয়েডের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন। তাঁদের মতে, শিশুদের মধ্যে কখনও কখনও যৌন কৌতূহল বা যৌনচেতনার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। কিন্তু সেটা কখনই পুরোপুরি বড়দের মতো নয়। সবটা যে তারা বোঝে তা-ও নয়। মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম যেমন বলেন, “কিছু শিশু যারা নিজেরা কোনও ধরনের যৌনহেনস্তার শিকার হয়েছে অথবা বাবা-মা, প্রাপ্তবয়স্ক আত্মীয়দের শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হতে দেখেছে বা টেলিভিশনে এমন কিছু দৃশ্য দেখেছে, তারা অনেক সময় অবসাদে বা কৌতূহলবশত সেটা নকল করতে যায়। নিউ আলিপুরের আরেক ইংরাজি মাধ্যম প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা কঙ্কনা আইচ শোনাচ্ছিলেন চার মাস আগের একটি ঘটনার কথা। তাঁদের স্কুলে ক্লাস ফোরের পড়ুয়া ন’বছরের একটি ছেলে। ছুটির সময় এক তলার ফাঁকা একটা ঘরে এক সহপাঠিনীকে জোর করে জড়িয়ে সে ঠোঁট কামড়ে চুমু খেয়েছে। মেয়েটির কাছ থেকে সব জেনে টিচারেরা স্তম্ভিত। ছেলেটির স্বীকারোক্তি, মেয়েদের এই রকম ‘পিওর কিস’ করার কথা উঁচু ক্লাসের দাদাদের কাছে শুনেছে। সিনেমাতেও দেখেছে। সে নিজে খেতে পারে কি না পরখ করছিল।
দমদমের এক ফ্ল্যাটবাড়ি। আট বছরের দেবরূপার সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে খেলতে আসে সমবয়সী প্রিয়দর্শিনী। এক দিন দু’জনের জন্য চাউমিন তৈরি করে মেয়ের ঘরে হঠাৎ ঢুকেছিলেন দেবরূপার মা পৃথা। ঢুকে দেখেন দুই বান্ধবী বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে। শরীরের অর্ধেকটা চাদর দিয়ে ঢাকা। ওরা নাকি ‘বাবা-মা’ খেলছে। ওরা জেনে গিয়েছে, বাবা-মা হতে গেলে পাশাপাশি শুয়ে আদর করতে হয়!

সুচিত্রা ভট্টাচার্য
ক্লাস সেভেনে প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম। যৌনতার ধারণাও তখন অল্প অল্প ছিল। ক্লাস ফাইভ-সিক্সে লুকিয়ে লোলিটা পড়েছি, শরৎচন্দ্র পড়েছি। রোমাঞ্চিত হয়েছি। আমাদের সময় হয়তো প্রকাশটা ছিল না, এখন আছে। আমার পরিচিত চার বছরের বাচ্চাও তার মাকে উপদেশ দেয়, “অমুক ভাবে শাড়িটা পোরো না। তোমার পেটটা বেশি দেখা যাবে!”
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
এখন বাচ্চারা অন্নপ্রাশনের পর থেকেই এত কিছু দেখে আর জানে যে যৌনতার রহস্যময়তা তাদের কাছে থাকে না। আমাদের সময় সেক্সটা ছিল ট্যাবু। এখনকার প্রজন্ম ট্যাবুমুক্ত। ওরা প্রথম থেকেই যৌনতা সম্পর্কে অনেক উদাসীন। ওরা জানে এটা একটা ফিজিক্যাল নিড। ওদের এ ব্যাপারে ছুঁৎমার্গ নেই। এর ভাল-মন্দ অবশ্য দুই দিকই থাকতে পারে।
ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়
রূপকথা পড়ে আমাদের বড় হওয়া। দূরদর্শন তখন সবে এসেছে, তা-ও সব বাড়িতে নয়। এখনকার প্রজন্মের সামনে অনেক অপশন। টিভি, ইন্টারনেট, ফেসবুক সম্পর্কে ক্লাস ফাইভ-সিক্স থেকেই তারা চৌখশ। আমার কাছে এই বয়সের ছেলেমেয়েরা আবৃত্তি শিখতে আসে। তারা দিব্যি প্রেমপত্র আদানপ্রদান করে। ব্লু ফিল্মও দেখে ফেলে অনেকে।
ব্রাত্য বসু
আমাদের সময় নারীদেহের প্রথম ধারণা বলতে ছিল ডায়ানা পামার। অরণ্যদেবের বৌ। তা-ও সেটা সেভেন-এইটে। তার আগে ফোর-ফাইভে মনে তেমন ঢেউ উঠেছে বলে মনে পড়ে না। তবে একটা ‘চোরা সেক্সুয়ালিটি’ ছিল। সেটা কোনও অনুঘটক পেত না বলে বাইরে আসেনি। আজকালকার দিনে টেলিভিশন, ইন্টারনেট সেই অনুঘটকের কাজটা করে দেয়।

সিরিয়াল তো বটেই, ছোটদের কার্টুনেও ভরপুর প্রাপ্তবয়স্কতা। মিকিমাউজের গার্লফ্রেন্ড হয় মিন্নি, ডোনাল্ডের ডেইজি, পপাইয়ের অলিভিয়া। লায়ন কিং-য়ের সিংহ সেখানে নবীনা সিংহীর সঙ্গে লাজুক-লাজুক ভাবে মাথা ঘষতে-ঘষতে প্রেমের গান গায়। বেড়াল অগি-র ভাইয়া গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে গদগদ হয়ে ডেট-য়ে যায়, নদীতে জল আনতে গিয়ে মোগলি-র সঙ্গে রীতিমতো ফ্লার্ট করে গ্রামের বালিকাটি, ‘চলো দিল্লি’ কার্টুন ফিল্মে সুন্দরী পক্ষিণী দেখে উচ্ছ্বসিত পুরুষ তোতা ফুট কাটে ‘হোয়াট আ চিক!’ রিয়্যালিটি শোয়ে সিডাকটিভ গানের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক অঙ্গভঙ্গি-হাভভাব নকল করে নাচতে থাকে বাচ্চারা। বাহবাও পায়।
একটি আট বছরের মেয়েকে তার মা মনোবিদের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। মেয়েকে স্কুলে পাঠানো যাচ্ছে না। তার জেদ, ব্রা পরতে না দিলে আর বিউটি পার্লারে নিয়ে গিয়ে ‘ফুল বডি ওয়্যাক্সিং’ না করিয়ে দিলে সে স্কুলে যাবে না।
কেন এমন বাসনা? ক্লাস ফোরের মেয়ের বক্তব্য, “বার্বি ডলের এই রকম ব্রা রয়েছে। আর বার্বির সারা গায়ে কোনও রোম নেই। আমিও ওই রকম করাবো। তা হলে আমাকে দেখতে সুন্দর লাগবে।”
নীলাঞ্জনা সান্যালের ব্যাখ্যায়, “যে সব বাচ্চার মধ্যে সময়ের আগে এই রকম চেতনা আসছে তাদের ব্যক্তিত্ব যদি পরবর্তী কালে ঠিকঠাক ভাবে বিকশিত হয় তা হলে তারা একে সদর্থক ভাবে কাজে লাগাবে। এই ম্যাচিওরিটির জন্য তাদের নানা রকম যৌনদ্বিধা কেটে যাবে। আর যারা সেটা পারবে না তাদের মধ্যে ক্ষণিক আনন্দ পাওয়ার প্রবণতা বাড়বে এবং তা ইমপালসিভ হয়ে উঠবে।”
শিশুমনোবিদ হিরণ্ময় সাহা-র কাছে সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন শ্রীরামপুরের এক দম্পতি। মেয়েটি মাঝেমাঝেই হস্তমৈথুন করে। বাবা-মা দিশেহারা। আবার বালিগঞ্জের এক দম্পতির ছ’বছরের ছেলে রেগে গেলেই মায়ের স্তন বা যৌনাঙ্গ লক্ষ করে হাতের কাছে যা পায় ছুড়ে মারে। হিরন্ময়বাবু বলেন, “বাচ্চাদের যৌনবোধ নেই বলে ভাবা একেবারে ভুল। আমাদের কাছে এমন কেসও আসে যেখানে ১০-১১ বছরের বাচ্চারা ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেছে। অনেক সময় শিশুদের মনে কোনও ক্ষোভ বা অপ্রাপ্তি থেকেও এই রকম প্রবণতা হতে পারে। আবার কারণ ছাড়া শুধু ‘মানসিক অসুস্থতা’ থেকেও এমন হয়।”
শিশুদের এই ধরনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অল্প কাউন্সেলিং দারুণ ফলদায়ী হয় বলে জানিয়েছেন মনোবিদেরা। হিরণ্ময়বাবুর কথায়, “দরকার শুধু বাবা-মায়ের একটু সচেতনতা। যাঁরা আমাদের কাছে আসেন তাঁরা ভাবেন আমরা ওষুধ দিয়ে ম্যাজিকের মতো সব সারিয়ে দেব। আসলে ওষুধ দিয়ে কিছু হয় না। এখানে দরকার বাচ্চার সঙ্গে অনেক কথা বলা, অনেক সময় দেওয়া। বাচ্চাদের যদি ভুলটা বোঝানো যায় ওরা খুব ভাল বোঝে এবং শুধরে নেয়। কোনও শিশু যদি মায়ের, বন্ধুর বা বোনের বা কোনও আত্মীয়ের শরীরে ঘনঘন হাত দেয় তা হলে প্রথম থেকে তাকে বোঝাতে হবে, এটা করা যায় না। এটা ভুল, এটা অন্যায়। এটা করলে সবাই খারাপ বলবে, কেউ মিশবে না, খেলবে না।
পরলিঙ্গে বা যৌনতায় আকর্ষণ স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম। সেটা যে কোনও বয়সে আসতে পারে। কিন্তু সময়ের আগে সব রহস্য ভেদ হতে নেই। মিলস অ্যান্ড বুন-এর গল্পের ‘কিস’-এর পরে অন্ধকার হয়ে যাওয়ার মতো একটু অজানা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকলেই জীবনের মজাটা থাকে। এটা ছোটদের অনুভব করানোর দায়িত্ব কিন্তু এই সমাজ এড়াতে পারে না।

মডেল: পায়েল সরকার, সোহম বসু রায়চৌধুরী
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
অলঙ্করণ: শেখর রায়


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.