শেষ পর্যন্ত জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সমীর ধল-কে জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হলেন নির্বাচিত বিক্ষুব্ধ সদস্যরা। শুক্রবার জামবনি ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগদীশ মাহাতো-সহ পঞ্চায়েত সমিতির আসনে নির্বাচিত ১১ জন বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের মেদিনীপুরে ডেকে পাঠান জেলা নেতৃত্ব। জেলা সভাপতি দীনেন রায় ও অন্যান্য জেলা নেতারা জগদীশবাবুদের জানিয়ে দেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমীরবাবুই সভাপতি হবেন। এ নিয়ে কোনও ক্ষোভ বরদাস্ত করা হবে না। এরপরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নির্বাচিত পাঁচ জন প্রার্থী সমীরবাবুকে সমর্থন করতে সম্মত হন। তবে জগদীশবাবু-সহ বাকি ৬বিক্ষুব্ধ প্রার্থীর মতিগতি নিয়ে নেতৃত্ব কিছুটা সংশয়ে ছিলেন। এ দিন দুপুর ১২ টা নাগাদ জামবনি ব্লক অফিসে সভাপতি নির্বাচনের সময় জগদীশবাবু-সহ ওই ৬ জন অনুপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নির্বাচিত ২০ জন তৃণমূল প্রার্থীর মধ্যে এ দিন সভায় ১৩ জন হাজির ছিলেন। সভাপতি হিসেবে সমীরবাবুর নাম প্রস্তাব করেন তাঁর গোষ্ঠীর নির্বাচিত প্রার্থী জিতেন্দ্রনাথ চৌধুরী। সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন পার্বতী মুর্মু। এদিন সভায় বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর ৫ জন নির্বাচিত প্রার্থী হাজির ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন সমীরবাবু-সহ ৮ জন। ক্ষোভ সামাল দেওয়ার জন্য বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর পার্বতী মুর্মুকে সহ সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সভায় না-যাওয়ার প্রসঙ্গে জগদীশবাবু বলেন, “নির্বাচিত সব প্রার্থীকে সভাপতি নির্বাচনের সভায় যেতে হবে, এমন কোনও নিয়ম নেই। জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।”
এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন ও সভাপতি নির্বাচন ঘিরে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালের আশঙ্কায় জামবনির ব্লক-সদর গিধনিতে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছিল প্রশাসন। তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির ২০টি আসনের সব ক’টিতেই তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হন। তৃণমূলের জামবনি ব্লক সভাপতি জগদীশ মাহাতো চেয়েছিলেন, তাঁর গোষ্ঠীর নির্বাচিত প্রার্থী সুষমা বেরাকে সভাপতি করা হোক। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে নির্বাচিত প্রার্থী তথা তৃণমূলের জামবনি ব্লক কার্যকরী সভাপতি সমীর ধলও সভাপতি হতে চান। তিনি দীনেন রায়ের অনুগামী। তৃণমূলের জামবনি ব্লক সভাপতি জগদীশ মাহাতো ও ব্লক যুব সভাপতি দেবনাথ হাঁসদারা হলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার অনুগামী। জগদীশবাবুরা ১২ জন নির্বাচিত প্রার্থীকে ‘আটক’ করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন সমীরবাবুরা। ওই ১২ জন সদস্যকে ফিরিয়ে আনার জন্য সমীরবাবুরা পাল্টা ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি দেবনাথ হাঁসদাকে আটক করে রাখেন বলে অভিযোগ করেন জগদীশবাবুরা। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, জেলা সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেব-রা উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকেন। এরপর শুক্রবার উভয়পক্ষকে মেদিনীপুরে ডাকে জেলা নেতৃত্ব। তাদের হস্তক্ষেপে সমীরবাবুই সভাপতি হবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। দুর্গেশবাবু বলেন, “সর্বসম্মতিক্রমে সমীরবাবু সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দলের জামবনি ব্লক নেতৃত্বের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।”
|