প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের অন্দরেই
নেতারা পঞ্চায়েত সমিতির পদে, সংগঠন দেখবে কে
লের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাই যেখানে পঞ্চায়েত সমিতির পদে, সেখানে সংগঠনের হাল ধরবে কে?
শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাধিপতি নির্বাচন ছিল। ২৯টি সমিতির মধ্যে ২৮টিতেই ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। নির্বাচন-পর্ব মিটতে সর্বত্র শুরু হয় বিজয়োৎসব। চলে আবির খেলা। মিষ্টি বিতরণ। দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা যখন উচ্ছ্বাসে মেতে রয়েছেন, ঠিক তখনই ওই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দলের অন্দরে। বিষয়টি উড়িয়ে দিতে পারছেন না তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও। কিছু ব্লকে দলের সভাপতি, সহ-সভাপতিরাই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি হয়েছেন। তাহলে সংগঠনের কী হবে? তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলছেন, “দু’টি পদই গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হবে। একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।” দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “প্রয়োজনে একটি পদ ছেড়ে দিতে হবে।”
চলছে শপথবাক্য পাঠ। শালবনি পঞ্চায়েত সমিতিতে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
দলীয় সূত্রে খবর, দলের যে সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা পঞ্চায়েত সমিতির পদে বসেছেন, শুরুতে তাঁদের পদ ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হবে। না-ছাড়লে পরবর্তী দিনে দলই এ ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে। সমিতির পদাধিকারদের দলের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
তৃণমূলের তিন জন ব্লক সভাপতি এ বার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হয়েছেন। শুক্রবার নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন উজ্জ্বল দত্ত। উজ্জ্বলবাবু দলেরও নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি। খড়্গপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শক্তি মণ্ডল। শক্তিবাবু তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। অন্য দিকে, শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচন হন নেপাল সিংহ। নেপালবাবুও দলের ব্লক সভাপতির পদে রয়েছেন। গোপীবল্লভপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি হয়েছেন স্বপন পাত্র। স্বপনবাবু দলের ব্লক সভাপতি।
শুধু কী সভাপতি? দলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি, সহ-সভাপতিরাও পঞ্চায়েত সমিতির পদে বসেছেন। যেমন, সমীর ধল। সমীরবাবু তৃণমূলের জামবনি ব্লক কার্যকরী সভাপতি। শুক্রবার তিনিই জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে দলের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন শম্ভু নায়েক।
তিনি চন্দ্রকোনা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। হীরালাল ঘোষ তৃণমূলের চন্দ্রকোনা-২ ব্লক সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন। এদিন তিনিই চন্দ্রকোনা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মহিলা তৃণমূলের সাঁকরাইল ব্লক সভাপতির পদে রয়েছেন মনোরমা পাত্র। মনোরমাদেবী সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। গত পাঁচ বছর ধরে জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা ছিলেন অরুণ মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
শপথবাক্য পাঠের পর নতুন সভাপতিকে নিয়ে উল্লাস।
বস্তুত, এই ছবি দেখা গিয়েছিল পঞ্চায়েতের মনোনয়ন-পর্বেও। কে ছিলেন না প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে? দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি থেকে জেলা কোর কমিটির সদস্য, ব্লক সভাপতি থেকে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি, এমনকী মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রীও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এঁদের অনেকেই জিতেছেন। ফলে, পদের দাবিদারও তাঁরা। মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী উত্তর সিংহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি হতে চলেছেন। ইতিমধ্যে সভাধিপতি হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ জেলা পরিষদে দলের দলনেতা হতে চলেছেন। এই পদের জন্য তাঁর নামও ঘোষণা করা হয়েছে।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো একদা ‘লালদুর্গে’ তৃণমূল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। কিন্তু, এরপর শাসক দলের সাংগঠনিক হাল কী হবে, ব্লকে-ব্লকে কারা সংগঠনের কাজকর্ম দেখভাল করবেন, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। দলের এক জেলা নেতা মানছেন, “দল আর প্রশাসন মিশিয়ে দিলে বড় ভুল হবে। দলের নেতারা যদি পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেন, তাহলে সংগঠন দেখবে কে? এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকেই সংগঠনের কাজকর্ম আর সে ভাবে দেখভাল করতে পারেন না। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলছে।”
এ দিকে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি নির্বাচন ঘিরে শুক্রবার কিছু ঘটনা ঘটেছে। দলীয় সূত্রে খবর, শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি হওয়ার কথা ছিল নিরুপমা মাণ্ডি বাস্কের। দলীয় স্তরে এই সিদ্ধান্তই হয়। কিন্তু, সহ-সভাপতি হন চূড়ামণি মুর্মু। নিরুপমাদেবী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ করেন। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি হতে গেলে হয় তাঁকে চাকরি ছাড়তে হত, না-হলে পাঁচ বছরের জন্য ছুটি নিতে হত। তিনি এই দু’টির কোনটাই করতে রাজি হননি। নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, সহ-সভাপতির পদ তাঁর দরকার নেই। চাকরিটা দরকার। খড়্গপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি হওয়ার কথা ছিল আরতি মুর্মুর। দলীয় স্তরে এই সিদ্ধান্তই হয়। কিন্তু, সহ-সভাপতি হয়েছেন সীতা সরেণ। এই পদটি এসটি মহিলা সংরক্ষিত। আরতিদেবীর এসটি সার্টিফিকেট ছিল না। জামবনি, শালবনি, খড়্গপুর-১ এবং ২ প্রভৃতি ব্লকে সভাপতি, সহ-সভাপতি পদে কে বসবেন, তা নিয়ে আলোচনা চলার সময় দলের অন্দরে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। ওই সূত্রের দাবি, খড়্গপুর-১ এ নবকুমার দাস, খড়্গপুর-২ এ সুশান্ত পাল, শালবনিতে তাপস দাস পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। তবে হননি। বদলে এই তিন জনকে ওই তিন পঞ্চায়েত সমিতির দলনেতা করা হয়েছে। বস্তুত, নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে করতে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। শুক্রবার সকালে জামবনির কয়েকজন নির্বাচিত সদস্যকে নিয়ে ফের বৈঠকে বসেন। আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর নির্দেশ দেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় অবশ্য মতবিরোধের কথা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “মতবিরোধের কোনও ব্যাপার নেই। আমাদের প্রচুর যোগ্য সদস্য রয়েছেন। ফলে, কিছু ক্ষেত্রে একাধিক প্রস্তাব আসে। দলীয় স্তরে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.