সম্পাদকীয় ২...
নিরুপায়
ফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ব্যস্তসমস্ত হইয়া ইসলামাবাদ ছুটিয়া গেলেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সহিত সখ্য গড়িতে। সম্ভবত কিঞ্চিৎ বিলম্বে হইলেও তিনি উপলব্ধি করিয়াছেন, ইহা না করিয়া তাঁহার উপায় নাই। চলতি বছরের শেষ নাগাদ নেটোর অর্ধেক বাহিনী ঘরে ফিরিবে আর আগামী বছর এক লক্ষ মার্কিন-নেটো বাহিনীর সকল ‘যোদ্ধা’ই স্বদেশাভিমুখে। প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যেই শুরু হইয়াছে, আফগান পুলিশের হস্তে জননিরাপত্তার ভার পর্যায়ক্রমে ন্যস্তও হইতেছে। তালিবানের কাছে ইহা সুবর্ণসুযোগ। একের পর এক তালিবানি হামলা আফগান পুলিশ, নেটোর সমরঘাঁটি কিংবা চলমান রসদ-কনভয়ের উপর আছড়াইয়া পড়িতেছে। প্রমাণ করিতেছে, ৩ লক্ষ ৫২ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান পুলিশ তালিবান ফিদাইন ও জঙ্গিদের মহড়া লইতে সম্পূর্ণ অপারগ। প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বুঝিয়া গিয়াছেন, নেটো-মার্কিন বাহিনীর অপসারণ তৎক্ষণাৎ কাবুল হইতে তাঁহাকে উৎখাত করিবে। তিনি তাই পাকিস্তানের সাহায্যপ্রার্থী।
পাকিস্তান কেন? কারণ একমাত্র পাকিস্তানই তালিবানের অন্তত একাংশের উপর প্রভাব জারি রাখিয়াছে। বহুজাতিক বাহিনীর বিদায় কাবুলের শক্তিকেন্দ্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি করিবে, তাহা যে তালিবানই ভরাট করিতে চলিয়াছে, নিশ্চিত। ঘটনা ইহাই যে, তালিবান কমান্ডারদের উপর এখনও পাক বাহিনী ও আই এস আইয়ের যেটুকু নিয়ন্ত্রণ আছে, তাহা কাজে লাগাইয়া নওয়াজ শরিফের সরকার আফগানিস্তানকে আপন প্রভাব-বলয়ে রাখিতে প্রাণপণ প্রচেষ্টা করিবে। শরিফের সামনেও সমস্যা আছে। তালিবানের উপর পাক নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক নয়, সামরিক। সেনাধ্যক্ষ আসফাক পারভেজ কায়ানির অবসরগ্রহণের লগ্ন আসন্ন, এই অবস্থায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পরিস্থিতির দোহাই দিয়া কায়ানি স্বপদে বহাল থাকার জিদ ধরিতে পারেন। অন্য দিকে তালিবান তো পাকিস্তানের গণতন্ত্রের কাছেও একটি নেতিবাচক, ধ্বংসাত্মক বিপদ। নিয়মিত পাক তালিবান ও অন্যান্য জেহাদি জঙ্গিদের ফিদাইন হামলায় সামরিক ঘাঁটি হইতে সরকারি দফতর আক্রান্ত হইতেছে, নিরস্ত্র নাগরিকরা নিহত হইতেছেন। এই জেহাদিরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অন্তর্ঘাত করিতেছে। ইহাদের প্রশ্রয় দেওয়ার অর্থ পাকিস্তানেরই সর্বনাশ ডাকিয়া আনা।
নওয়াজ শরিফ তাহা বিলক্ষণ জানেন। তবে তাঁহারও হাত-পা বাঁধা। অভিজ্ঞতায় তিনি জানেন, গণতন্ত্রের সীমান্ত প্রসারিত করার বেশি চেষ্টা করিলে সেনাবাহিনীর কর্তাদের চক্ষুশূল হইয়া তাঁহাকে আগের মতো বিদায় লইতে হইতে পারে। তাঁহার একমাত্র ভরসা তালিবানের অভ্যন্তরীণ বিভাজন, রসিদ দোস্তাম কিংবা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের মতো যুদ্ধসর্দারদের তীব্র পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, যাহা দেশকে নৈরাজ্যে নিমজ্জিত করিবে। ইহা সম্ভবত কারজাইয়েরও ভরসা। এই সম্ভাব্য অরাজকতা তাঁহার সরকারকে দম ফেলার এবং গুছাইয়া লওয়ার বাড়তি সময় দিতে পারে। নওয়াজ শরিফের সহিত তিনি সম্ভবত সেই সব বিষয়েই মতবিনিময় করিতে গিয়াছিলেন। এই চিত্রনাট্যে ভারতের ভূমিকা ঈষৎ অনিশ্চিত। তালিবান-বিরোধী এবং কারজাই-সমর্থক বলিয়া গণ্য নয়াদিল্লির প্রতি তালিবান কী মনোভাব পোষণ করে, ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালাইয়াই তাহার প্রমাণ দিয়াছে। তথাপি আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক বিকাশে সহযোগিতার হাত প্রসারিত না রাখিয়া দিল্লির উপায় নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.