অনেকের মতো আমিও ঘুমোচ্ছিলাম। আচমকাই আমাদের বিমানটা নাগরদোলার মতো ঘুরতে শুরু করে দিল। কখনও মাথা নীচে, পা উপরে। আবার কখনও ঘূর্ণির মতো পাক খেতে থাকল বিমান। আতঙ্কে এবং আঘাতে তখন আর্তনাদ করছেন দিশাহারা যাত্রীরা।...
এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা এয়ারবাস ৩৮০-র যাত্রী বিক্রম সিংহের। দক্ষিণ কলকাতার হরিশ মুখার্জি রোডের বাসিন্দা বিক্রম শুক্রবার ফোনে এই রোমহর্ষক বৃত্তান্ত শুনিয়েছেন তাঁর দাদা রাজীবকে। মাঝ-আকাশে এই প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল বিশ্বের সব চেয়ে বড় বিমান এয়ারবাস ৩৮০। শুক্রবার সকালে ব্যাঙ্কক থেকে উড়ে হংকং পৌঁছনোর আগেই ঝড়ের মুখে পড়ে বিমানটি। লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিমানের বসার জায়গা। ওই উড়ানে কলকাতারও বেশ কয়েক জন যাত্রী ছিলেন। বিক্রম তাঁদেরই এক জন।
ব্যবসার কাজে বৃহস্পতিবার রাতে তাই বিমান সংস্থার উড়ানে কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক যান বিক্রম। ব্যাঙ্ককের স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ বিশাল বিমানটি ৫০০ জন যাত্রী নিয়ে রওনা হয় হংকংয়ের দিকে। এ দিন দুপুরে হংকং থেকে ফোনে দাদা রাজীবকে বিক্রম জানান, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আর তখনই বাইরে ঝড়ের তাণ্ডব আর ভিতরে আতঙ্কের আর্তনাদ শুরু হয়ে যায়! অনেকেই তড়িঘড়ি সিট-বেল্ট লাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বহু যাত্রীই বেল্ট বাঁধার সুযোগ পাননি। অনেকের সিট-বেল্ট ছিঁড়েও যায়। এমনকী আসনের পাশে যে-হাতল থাকে, ভেঙে যায় তা-ও। বিক্রমের আসনের হাতলও ভেঙে গিয়েছে।
দাদাকে ফোনে বিক্রম জানান, বিমানের ভিতরে তখন ভয়ানক এক তাণ্ডব শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেক যাত্রী আসন ছেড়ে উড়ে গিয়ে পড়েন অন্যত্র। মনে হয়, কোনও অদৃশ্য শক্তি যেন যাত্রীদের নিয়ে লোফালুফি খেলছে। ভেঙে যায় কেবিনের উপরে মালপত্র রাখার জায়গা। চোট লাগে বিক্রমের। তবে তা বেশি নয়। দাদাকে আশ্বস্ত করে তিনি জানান, হংকং বিমানবন্দরে শুশ্রূষা মিলেছে। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেন তাঁকে। তার পর থেকে বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, গুরুতর আহত হন ওই বিমানের ২০ জন যাত্রী এবং এক জন বিমানসেবিকা। বিমানের ভিতরে ছিটকে পড়ে অনেকের গলার হাড়ও ভেঙে গিয়েছে। হংকংয়ে নামার একটু আগেই ঝঞ্ঝার মুখে পড়ে বিমানটি। হংকংয়ের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা নাগাদ বিমানটি নামে সেখানে। দমকল ও অ্যাম্বুল্যান্সের কর্মীরা যাত্রীদের নামিয়ে আনতে শুরু করেন।
এ দিনই সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হংকং এয়ারের একটি বিমান ফুকেট থেকে হংকংয়ে নামার সময় একই ভাবে দুর্যোগের মুখে পড়েছিল। ওই বিমানের ছ’জন যাত্রী আহত হয়েছেন। |