রোগ ছড়াচ্ছে শিলিগুড়ি শহরে, দোষারোপ পুরসভাকে
ডেঙ্গিতে মৃত্যু লিম্বু বস্তিতে
ডেঙ্গি পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে শিলিগুড়িতে। বৃহস্পতিবার মাটিগাড়ার উত্তরায়ণ-এর এক নার্সিংহোমে ডেঙ্গি আক্রান্ত এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তার নাম রশ্মি মাঝি (১৬)। বাড়ি ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের লিম্বু বস্তিতে। বাবা তারা মাঝি গাড়ির চালক। মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ডেঙ্গি আক্রান্ত অবস্থায় গত মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। চিকিৎসকরা নার্সিংহোমে ভর্তির জন্য পরিবারের লোকদের পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ মৃতের পরিজনরা। পাশাপশি নার্সিংহোমে মোটা টাকা বিল নিয়ে তারা অভিযোগ তুলেছেন। এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব মৃতের বাড়িতে গেলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান মৃতের আত্মীয় এবং মহিলাদের একাংশ। পুরসভার বিরোধী বামেরা এই পরিস্থিতির জন্য সরকার এবং পুর কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতার পরিবারের লোকদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ জন্য পুর কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন মন্ত্রী। শুক্রবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য শিলিগুড়ি আসছেন বলে মন্ত্রী জানান।
লিম্বু বস্তিতে সিপিএম কাউন্সিলার দিলীপ সিংহের সঙ্গে কথা বলছেন
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
মৃতের মা কল্পনা মাঝি অভিযোগ করেন, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও তারা ঠিক মতো দেখতে চাননি। বাইরে থেকে বেশি টাকা দিয়ে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে আনতে বাধ্য করেছেন চিকিৎসকরা। মেয়ের পরিস্থিতি ভাল নেই বলে তারা রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে বলেন।” মাটিগাড়ার যে নার্সিংহোমে বুধবার দুপুরে রশ্মিকে ভর্তি করানো হয়েছিল এক দিনেই সেখানে প্রায় ৮৭ হাজার টাকা বিল করা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে নার্সিংহোমের সামনেও মৃতের আত্মীয় এবং পড়শিরা ভিড় করে অভিযোগ জানান। পাড়ার লোকেরা চাঁদা তুলে ৭৩ হাজার টাকা জোগাড় করে মৃতদেহ নিয়ে আসেন। নার্সিংহোমের দায়িত্বে থাকা রুমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমাদের কেউ অভিযোগ জানাননি। বরং চেষ্টা করেও রোগী বাঁচানো যায়নি বলে আমরাই রোগীর পরিবারকে ছাড় দিয়েছি।” বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশা মারার তেল স্প্রে করা বা ধোঁয়া দেওয়া হয় না। নিকাশি পরিস্থিতি ভয়াবহ। কিছু ঘটলে নেতা মন্ত্রী ছুটি আসেন। কিন্তু তার আগে ব্যবস্থা নিতে কাউকেই দেখা যায় না। মন্ত্রী তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন পরিস্থিতির কথা তাদেরও জানা ছিল না। এ দিন তা নজরে আসার পর এ বার তারা দেখবেন।
ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুর কর্তৃপক্ষ এই দিন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। আজ, শুক্রবার থেকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে তাঁরা জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসায় আলাদা ক্লিনিক চালু করছেন। জ্বর নিয়ে কেউ গেলে সেখানে রক্ত পরীক্ষা করা হবে। ডেঙ্গি সন্দেহ হলে রক্ত পরীক্ষার জন্য সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। তা ছাড়া পুরসভার যে এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি সেই সমস্ত এলাকায় শিবির করে রোগী দেখার, রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরকে। পুরসভাকেও সমস্ত কিছু আগে থেকে জানাতে বলা হয়েছে।” শীঘ্রই শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে নার্সিংহোম এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ১ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। নার্সিংহোমগুলি থেকে যাতে সঠিক তথ্য প্রতিদিন জানানো হয় সে জন্য বলা হবে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। নার্সিংহোম গুলিতে ভর্তি রয়েছেন ৪ জন। তাদের ১২ জনই শিলিগুড়ি পুর এলাকার বাসিন্দা। ২ জন মাটিগাড়ার বাসিন্দা। শিলিগুড়ি পুরসভা ৪২-৪৪ নম্বর ওয়ার্ড, ৫, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ৩১ থেকে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রচুর বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত। ডেঙ্গি নিয়ে সন্দেহভাজন রোগীর সংখ্যা শতাধিক বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলের কাউন্সিলররা। বাম কাউন্সিলর দিলীপ সিংহের দাবি, শুধু তাঁর ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ ডেঙ্গি রোগী আছেন।
বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “পরিস্থিতি যা তাতে ডেঙ্গি মহামারির আকার নিতে পারে। শহরে জ্বর নিয়ে অন্তত শতাধিক মানুষ বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অনেকেই ডেঙ্গি আক্রান্ত। সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে।” তাঁদের অভিযোগ, প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য দফতর তথ্য গোপন করতে চাইছে। তারা দায় এড়াতে চাইছেন। পুরসভাকে সঠিক সময়ে তারা বিষয়গুলি জানাননি কেন তা নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কংগ্রেস কাউন্সিলররাও। তা নিয়ে বৈঠকের মধ্যেই হইচই শুরু হয়। তৃণমূলের কাউন্সিলররা পরিস্থিতির জন্য পুরসভাকেই দায়ী করেছেন। তৃণমূল কাউন্সিলরদের তরফে কৃষ্ণ পাল বলেন, “এই পরিস্থিতির জন্য পুরসভা দায়ী। বাসিন্দাদের থেকে কর নিয়েও তাঁরা কাজ করছেন না। তার জন্য পুলিশে অভিযোগ জানাব।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.