অপহরণকারীর আড়তে হদিস অস্ত্র কারখানার
কেউটে নয়, কেঁচো খুঁড়তে এ একেবারে অজগর!
ছিল একটা অপহরণের মামলা। অভিযুক্তকে ধরতে গিয়েছিল পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাদের ডেরায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ল আস্ত একটা অস্ত্র কারখানা!
যেমন তেমন কারখানা নয় কিন্তু। সোনারপুরের এই আস্তানায় খাস মুঙ্গের থেকে দক্ষ শ্রমিক এনে আগ্নেয়াস্ত্র বানানো হয়। তার জন্য বসানো হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। পাইপগান থেকে শুরু করে নাইন এমএম পিস্তল, এমনকী কার্তুজও তৈরি করা সেখানে। তৈরির পর ওই সব অস্ত্র চালান হয়ে যায় বিভিন্ন জেলায়। এ দিন ১০টি নাইন এমএম পিস্তল ও ১৫টি ওয়ান শটার পাইপগান উদ্ধার করেছেন পুলিশকর্মীরা। মিলেছে প্রায় ৪০ রাউন্ড কার্তুজ। গ্রেফতার করা হয়েছে মোট তিন দুষ্কৃতীকে।
বৃহস্পতিবার ভোরের এই ঘটনাটি জানাজানি হতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী ডাকেন তদন্তকারী দলটির নেতা, সোনারপুর থানার আইসি প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁদের দলকে পাঁচ হাজার টাকা ইনামও দেন এসপি।
উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র
কী করে হদিস মিলল অস্ত্র কারখানার? পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৮ জুলাই রাতে রামকুমার ঝা নামের সোনারপুরের এক গাড়ি ব্যবসায়ী অপহৃত হন। একটি টাটা সুমো গাড়িতে তাঁকে তুলে নেয় তিন যুবক। গাড়িতে তোলার পর তাঁর মুখ ও চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। মিনিট দশেক গাড়ি চলার পর তাঁকে একটি দোতলা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশকে রামকুমার জানিয়েছেন, মুক্তিপণ বাবদ তাঁর পরিবারের কাছে ফোন করে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল ওই যুবকেরা। দিন তিনেক পর আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে তখনকার মতো মুক্তি পান রামকুমার। বাকি টাকা কয়েক দিন পরে দেবেন বলে তিনি অপহরণকারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রামকুমারের অভিযোগ, তার পর থেকে বাকি টাকার জন্য মাঝেমধ্যেই শাসানি দিচ্ছিল ওই তিন যুবক। শাসানির চোটে ভয় পেয়ে বাড়ি ছেড়ে কলকাতার ঠাকুরপুকুরে একটি ভাড়াবাড়িতে সপরিবার চলে যান রামকুমার। কয়েক দিনের মধ্যে সেখানেও হাজির হয় দুষ্কৃতীরা। রামকুমার, তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে খুনের হুমকি দেয় তারা। এর পরই বুধবার সন্ধ্যায় সোনারপুর থানায় এসে সব জানান রামকুমার। তাঁর বিবরণ অনুযায়ী ওই তিন দুষ্কৃতীর ছবিও আঁকা হয়।  পুলিশ সূত্রের খবর, ছবি দেখে জানা যায় ওই তিন দুষ্কৃতীর নাম জ্ঞানসাগর শর্মা, কালীকান্ত ঝা এবং মনোজ শর্মা। তাদের মোবাইলের সূত্র ধরে সোনারপুরের রেনিয়া এলাকায় তাদের ডেরা চিহ্নিত করা হয়। এর পরেই সোনারপুর থানার আইসি প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পাঁচ পুলিশকর্মীর একটি দল বৃহস্পতিবার ভোরে জ্ঞানসাগর শর্মার বাড়িতে হানা দেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের দেখেই দোতলার ছাদের অ্যাসবেস্টস ভেঙে পাশের পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে পালানোর চেষ্টা করে জ্ঞানসাগর। পুলিশকর্মীরাও ঝাঁপ দেন পুকুরে। ধরা হয় জ্ঞানসাগরকে। তার পরে ধরা পড়ে কালীকান্ত ও মনোজ। পুলিশ জানায়, জ্ঞানসাগরের বাড়িতে তল্লাশির সময়ই একটি লোহার ট্রাঙ্ক থেকে ১৩টি পাইপগান উদ্ধার হয়।
অস্ত্র-সহ তিন জনকে ধরেই অভিযান সফল ভেবে খুশি হয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। জানতেন না তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও বড় চমক। পুলিশ জানায়, জ্ঞানসাগরের বাড়ির লাগোয়া ঘর দেখে প্রথমে তাঁদের মনে হয়েছিল, সেটি একটি লোহার গ্রিল তৈরির কারখানা। দরজা খুলে কারখানায় ঢুকে চোখ ছানাবড়া। ছোট ওই ঘরের এক দিকে থরে থরে সাজানো নাইন এমএম পিস্তল, ওয়ান শটার, বাক্স ভর্তি নানা মাপের কার্তুজ। রয়েছে বড়সড় লেদ মেশিনের মতো দেখতে একটি যন্ত্র। জেরায় দুষ্কৃতীরা জানায়, মুঙ্গের থেকে শ্রমিক এনে ওই যন্ত্রে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হয়। অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় কাঁচামালও আনা হয় সেখান থেকেই। জেরায় জানা যায়, ওই দুষ্কৃতীদের এক জনের আদি বাড়ি মুঙ্গেরে। অন্য দু’জনও আদতে বিহারের বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, বছর দেড়েক ধরে ওই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওই কারবার চালাচ্ছে জ্ঞানসাগর। এই কারবারের পাশাপাশি ‘পার্টটাইম’ কাজ হিসাবে তারা শুরু করেছিল অপহরণ-ব্যবসাও। ধৃতরা জানিয়েছে, এক-একটি নাইনএমএম পিস্তল তারা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। হাজার তিনেক টাকায় বিক্রি করা হয় ওয়ান শটার ও সাড়ে-তিনশো থেকে চারশোয় এক একটি কার্তুজ। আসানসোল, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় বহু অস্ত্র তারা বিক্রি করেছে বলে নিজেরাই জানিয়েছে। তাদের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী আরও কিছু অস্ত্র কারবারির খোঁজ করছে পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.