বিপন্ন প্রজাতির আমুর বাজ রক্ষায় সক্রিয় নাগা গ্রামবাসীরা
খাবারের জন্য ভেট হিসাবে পাওয়া বিপন্ন প্রাণী চিড়িয়াখানায় জমা দিয়ে নাগাল্যান্ডের বিধায়করা আগেই নজির সৃষ্টি করেছিলেন। সেই পথেই পা মেলালেন নাগাল্যান্ডের গ্রামবাসীরাও। ওখা জেলার তিনটি গ্রাম, বিপন্ন প্রজাতির ‘আমুর ফ্যালকন’ সংরক্ষণে ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল।
আমুর বাজপাখি, বাজ প্রজাতির মধ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের, পতঙ্গভুক পাখি। সারা ডানায়, দেহে বুটিদার নকশা কাটা এই পাখির প্রধান বধ্যভূমি হিসেবে ‘নাম কিনেছে’ নাগাল্যান্ড। যার জেরে, ‘বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল’-এর ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ‘আইইউসিএন’-এর বিপন্ন পাখির ‘লাল তালিকা’য় ঠাঁই পেয়েছে আমুর বাজ। এরা সাইবেরিয়া ও দক্ষিণ চিনে জন্মায়। শীত কাটাতে পাড়ি দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা অবধি। এই যাত্রাপথেই, নাগাল্যান্ডে প্রতিবছর লক্ষাধিক ‘আমুর ফ্যালকন’ হত্যা করা হয় বলে আন্তর্জাতিক পক্ষী বিশেষজ্ঞদের দাবি। দীর্ঘ যাত্রাপথে নাগাল্যান্ডের দয়াং উপত্যকায় আমুরের দল বিশ্রামের জন্য নামে। তখনই শুরু হয় নির্বিচার হত্যা। শীতের সময় আমুরকে গুলি করে মারা ও খাওয়ার ঘটনা নাগাল্যান্ডে কার্যত উৎসবের আকার নেয়। গত বছর নাগাল্যান্ডের এই ঘটনা সামনে আসায় গোটা বিশ্বে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। তারপরেই ডব্লিউটিআই ও ‘ন্যাচারাল নাগাস’ মিলে একটি ‘র্যাপিড অ্যাকসন ফোর্স’ তৈরি করে।
আমুর বাজ। —নিজস্ব চিত্র
ওখা জেলায় সর্বাধিক আমুর মারা হয়। আমুরের দল গাছে বিশ্রাম নিতে নামে। আগে থেকেই গাছে জাল পেতে রাখা হয়। রাতে বা ভোরের দিকে সেই ফাঁদে আটকে যায় পাখিরা। পশুপ্রেমীদের লাগাতার প্রচারের পরে ওখা জেলার পাংটি, আসা ও সুংগ্রো গ্রামের বাসিন্দারা নির্বিচারে পাখি হত্যার কুফল বুঝতে পেরে স্থানীয় একটি পশুপ্রেমী সংগঠন, নাগাল্যান্ড বন দফতর ও ডব্লিউটিআইয়ের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। আমুর সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত স্টিভ ওদুয়ো বলেন, “আমরা প্রত্যেকটি গ্রামে ঘুরে ঘুরে পাখি মারার বিরুদ্ধে প্রচার চালাই। বহু জনচেতনামূলক সভা হয়। গ্রামের মাথাদের বোঝানো হয়। কিন্তু শিকার নাগা ঐতিহ্যের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে রয়েছে, যে রাতারাতি তা বদলে ফেলা সম্ভব হচ্ছিল না। তবু তার মধ্যেই তিনটি গ্রাম যে পাখি হত্যার মন্দ দিকটি অনুভব করে আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, সেটাই আপাতত বড় সাফল্য। আশা করি অন্যরাও এই তিনটি গ্রামকে অনুসরণ করবে।”
কী রয়েছে চুক্তিতে?
আমুর শিকার করলে শিকারিকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অবধি জরিমানা করবে গ্রাম সভা। তিনটি গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পাখিদের আশ্রয়স্থলগুলির উপরে নজর রাখবে। পাখি শিকার বন্ধের পাশাপাশি, অবৈজ্ঞানিক ঝুম চাষও বন্ধ করবেন গ্রামবাসীরা। গ্রামে গ্রামে চলবে সচেতনতা সভা। শিকার রোধে গ্রামের নিজস্ব আইন কড়া করা হবে।
তিনটি গ্রামের গ্রামপ্রধানরাই মনে করেন, উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে শিকার রোধ সম্ভব নয়। আসা গ্রামের প্রধান, সাংসুও সিকিরি বলেন, “বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আমাদের কাছে কিন্তু সত্যিই নতুন ধারণা। এতদিন কেবল তাদের হত্যা করার কথাই ভেবে এসেছি। আমরা মন থেকে এই সংরক্ষণ কাজে সাহায্য করব।” ডব্লিউটিআইয়ের তরফে সুনীল কেইরং বলেন, “গ্রামবাসীরা পাখি মারতেন পেটের জন্য। বিকল্প ব্যবস্থা না হলে শিকার বন্ধ করা সম্ভব
ছিল না। আমরা গ্রামে আপাতত ৩০টি পরিবারকে নিয়ে একটি পোলট্রি গড়ে তুলেছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.