সম্পাদকীয় ২...
সাবধান
লিকাতার নীচে মাটি কী প্রকার? বিশেষজ্ঞদের মতে ইহা কর্দমবহুল। ফলে বৃষ্টির জল তেমন করিয়া মাটির তলায় সঞ্চিত হইতে পারে না। তাই মহানগরের মাটির নীচের জলভাণ্ডার এই কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণেও ‘সুজলা’ হইয়া উঠিতে পারে নাই। কর্দমের পরিবর্তে যদি মাটিতে বালির ভাগ অধিক হইত, তাহা হইলে জল সঞ্চিত থাকিত। বহু কাল পরের এমন ঘনঘোর বর্ষা নিতান্ত নিষ্ফলে অসঞ্চয়ে ভাসিয়া যাইত না। প্রশ্ন হইল, কলিকাতার ভূগর্ভস্থ জল তাহা হইলে কোথা হইতে আসে? বিশেষজ্ঞদের মত, ইহা বহুলাংশে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের। যেমন, এ জল নদিয়ার, শান্তিপুরের। অর্থাৎ, কলিকাতাবাসী যে জল মাটির তলা হইতে ক্রমাগতই যথেচ্ছ পরিমাণে ক্ষয় করেন, তাহা মোটেই তাঁহাদের মহানগরের জল নয়, অপরের জল। পরের জলসম্পদেই কলিকাতাবাসীর এই তুমুল পোদ্দারি। পুকুরের পর পুকুর বুজাইয়া আকাশ-আঁচড়া বহুতল গড়িয়া উঠিতেছে আর সেই বহুতলবাসীরা ইচ্ছা মতো ভূগর্ভস্থ জল ব্যয় করিতেছেন। যদি এমন হইত যে, ভূগর্ভ কর্দমাক্ত বলিয়া অপরের জল কলিকাতাবাসী নিরুপায় কুণ্ঠায় ব্যবহার করিতেছেন, তাহা হইলেও কথা ছিল। কিন্তু কুণ্ঠা আবার কী? বঙ্গভূমে দখল করিয়া খাইবার অধিকার তো কেবল খাস কলিকাতার!
কলিকাতার মাটির স্বভাব যাহাই হউক না কেন, কলিকাতার মানুষের স্বভাব সেই একই প্রকার রহিয়াছে। শরৎচন্দ্রের ভাষায় খাস কলিকাতার লোকেরা ‘ভয়ংকর’। তাহারা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষদের ব্যবহার করে, বঞ্চনা করে। কলিকাতা হইতে কেহ বঙ্গদেশের অন্যত্র গমন করিলে, পারিলে সেখানকার মানুষজনের ঘাড়ে বসিয়া খায়। শরৎচন্দ্রের নতুনদা যেমন, কলিকাতার লোক ঠিক তেমনই। নিজের স্বার্থটি ছাড়া আর কিছু বুঝিবার প্রয়োজন তাহাদের নাই। সেই উনিশ শতকে গ্রাম কলিকাতা যখন অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী হইয়া উঠিল, তখন হইতেই এই দাদাগিরি চলিতেছে। কেবল কলিকাতা খাইবে, কলিকাতা পরিবে। পশ্চিমবঙ্গের আর সব ফালতু। কলিকাতা কেবল খাঁটি। বাকি প্রান্ত, কলিকাতা কেন্দ্র।
এই স্বার্থপর দাদাগিরি এক অসুস্থ মানসিকতাবিশেষ। কিছুতেই যাইতে চাহে না। তবে যে যত বড়ই দাদা হউক না কেন, প্রকৃতির হাত হইতে কাহারও রক্ষা নাই। প্রকৃতি যখন উত্তাল হইয়া উঠে, তখন সে সব অসাম্য দূর করিয়া দেয়। তাহার কাছে কে বা রাজা কে বা পেয়াদা! সকলেই সমান। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁহার স্মৃতির রেখা নামের দিনলিপিতে অনাগত কালের কলিকাতার চিত্র অঙ্কন করিয়াছিলেন। কেমন সে চিত্র? নগর আর নাই। মূঢ় প্রাকৃতিক সম্পদনাশা বাস্তুতন্ত্রের সামঞ্জস্য ধ্বংসকারী ভবিষ্যৎ শহর তখন আর কোথায়! পরিবর্তে তাহার উপর দিয়া প্রবাহিত হইতেছে অসীম অনন্ত জলধারা। জলের তলায় নগরী হারাইয়া গিয়াছে। প্রকৃতির অমোঘ প্রতিশোধ নামিয়া আসিয়াছে। ইহা নিছক ভাববাদী কল্পনা নহে। কলিকাতাবাসী যদি এমন ভাবে প্রকৃতির ধন বিনষ্ট করিয়া চলে, তাহা হইলে কিন্তু নিজেরাও রেহাই পাইবে না। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জল কলিকাতা টানিয়া লইয়া নিজেরা দিনের পর দিন বাঁচিয়া থাকিবে, তা হইবার জো নাই। জল ফুরাইবে, ভাঁড়ারে টান পড়িবে, আর্সেনিক দূষণ ছড়াইবে। সুতরাং সাবধান। মানুষকে দাপটে চুপ করানো যায়, প্রকৃতি কাহারও দাস নহে। বর্ষা আপাতত থামিয়াছে। রাজপথ পুনরায় কল্লোলিত। কিন্তু নিজেকে দেখিবার সময় আসিয়াছে, ভাবিবারও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.