রেশম পোকার গায়ে আলো-হাওয়া লাগলেই পোকার ক্ষতি হয়, এমনই ধারণা ছিল মালদহের চাষিদের। তাই বহু পরিশ্রমে অন্ধকার ঘরে চাষ করতেন রেশম গুটির। এমনকী ঘরের দরজা-জানলায় লাগিয়ে দিতেন পলিথিন, যাতে হাওয়া ঢুকতে না পারে। তাঁরাই এখন খোলা জমিতে পলিথিন টাঙিয়ে রেশম গুটি চাষ করছেন। তাতে যেমন ফলন বেড়েছে কয়েক গুণ, তেমনই সাশ্রয় হচ্ছে শ্রমেও। প্রথাগত চাষের চাইতে শ্রমের প্রয়োজন অনেক কম হওয়ায় বাড়ির মেয়েরা অগ্রণীর ভূমিকা নিচ্ছেন গুটি চাষে, উৎসাহিত হচ্ছে তরুণ প্রজন্মও। সব মিলিয়ে মালদহের রেশম চাষে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। |
এখন মেয়েরাও স্বচ্ছন্দে হাত লাগাচ্ছেন গুটি পালনের কাজে।
মালদহের কালিয়াচকে মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
|
তার প্রভাব পড়েছে রাজ্যের উৎপাদনেও। গত দুই বছরে রাজ্যে রেশম গুটির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। কালিয়াচকের নবীনগরের মতিউর রহমান বলেন, “আগে ২০০ ডিমের চাষ করতে হিমসিম খেতে হত। এখন খোলা আকাশের নীচে তিন খেপে ১২০০ ডিমের চাষ করছি, কিন্তু কোনও খাটনিই মনে হচ্ছে না।” ৪২ মন রেশম গুটি তিন লক্ষ টাকায় বিক্রি করে খুব খুশি মতিউর। ওই গ্রামেরই আফজল শেখ, আশরাফুল হকরা বলেন, খোলা আকাশের নীচে রেশম গুটি চাষে ব্যাপক ফলন আর কম পরিশ্রম দেখে এখন অনেকেই রেশম চাষে ফিরে আসছে।
রেশম গুটি চাষে মালদহ বরাবরই রাজ্যে প্রথম। ২০১২-১৩ সালে রাজ্যে মোট রেশম গুটি উৎপাদন হয়েছিল ১৫,৫০০ মন। সেখানে মালদহেই রেশমগুটি উৎপাদন হয়েছে ১৩,১০০ মন। এর অধিকাংশই অবশ্য চলে যায় ভিনরাজ্যে। দক্ষিণী সিল্ক শাড়ির একটা বড় অংশ তৈরি হয় বাংলারই রেশমে। দেশে রেশমের চাহিদার ১০-১২ শতাংশ মেটায় পশ্চিমবঙ্গ, আর রাজ্যে মোট উৎপাদনের ৭৫-৮০ শতাংশ রেশন গুটি মালদহে উৎপাদন হয়।
কালিয়াচকের শেরশাহি, আলিপুর, বামনগ্রাম, মোসিমপুর, বাখরপুর গ্রামে ঢুকে দেখা গেল, বাড়ির সামনে ছোট্ট জায়গায় বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার উপরে পলিথিন টাঙিয়ে রেশমগুটির চাষ চলছে। পলিথিনের নিচে বাঁশের মাচা করে সেখানেই রেশমগুটির চাষ করছেন মহিলারা। আলিপুর গ্রামের সাবিনা ইয়াসমিন, শবনম কবিরেরা বললেন, “গত এক বছর ধরে নতুন পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে। আগে ঘরে রেশম চাষ করতে ডালা পরিষ্কার করতে হত। তা এখন আর দরকার হচ্ছে না। দিনে তিনবার রেশম গুটির ডালায় তুঁতের পাতা দিচ্ছি আমরাই। সঙ্গে সংসারের কাজ, রান্নাবান্না সবই করছি।” |