|
|
|
|
জলমগ্ন ঘাটালে বন্ধ বহু অঙ্গনওয়াড়ি |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
ডুবেছে ঘর-বাড়ি। উনুন জ্বালার উপায় নেই। অগত্যা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঘাটাল মহকুমার বহু অঙ্গনওয়াড়ি। যে কেন্দ্রগুলির নিজস্ব ভবন নেই, তারা পড়েছে আরও সমস্যায়। গ্রামের আটচালা বা গাছের তলায় ইট পেতে এত দিন রান্নাবান্না হত। এক হাঁটু জলে তার উপায় নেই। ফলে খাবার পাচ্ছেন না ওই সব এলাকার দুঃস্থ প্রসূতি ও শিশুরা। দিনের পর দিন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকলেও সংশ্লিষ্ট দফতর বা প্রশাসনের হুঁশ নেই। ঘাটালের মতো নিচু জায়গায়, যেখানে ফি বছরই বন্যা হয়, সেখানে এই দিনগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনও ভাবনাচিন্তাই হয়নি প্রশাসনের তরফে।
টানা বৃষ্টি আর ব্যারাজের ছাড়া জলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যায় কিছু দিন আগে। সেই সময় অধিকাংশ এলাকাতেই স্কুল-কলেজ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়েছিল। পরে জল সরতে দাসপুর-২, চন্দ্রকোনা-১ ও ২ ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি খোলে। কিন্তু দাসপুর-১ ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েত ও ঘাটাল পুরসভা সহ ব্লকের দশটি পঞ্চায়েত এখনও জলমগ্ন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘাটাল ব্লকের ১০৮ ও দাসপুর-১ ব্লকের ৪০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ। ঘাটালের দেওয়ানচক ১ পঞ্চায়েতের প্রসূতি শুক্লা দাস বলেন, “বন্যার জন্য রোজগার বন্ধ। এমনিতেই সংসারে টান। তার উপরে অঙ্গনওয়াড়ি বন্ধ। চালু থাকলে অন্তত এক বেলার খাবার সময়ে পেতাম।” মনসুকার প্রসূতি মায়া বেরা বলেন, “ঘরে চাল-ডাল সবই বাড়ন্ত। কোনও রকমে চালাচ্ছি। এই সময় খালি পেটে থাকতে নেই জানি। কিন্তু ভরপেট খাবার জুটবে কোথা থেকে? অঙ্গনওয়াড়িতে রান্না যদি না-ই হয়, চাল-ডালগুলো তো বিলি করতে পারে।” দাসপুর-১ ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক স্বর্ণেন্দু মণ্ডল অবশ্য স্পষ্টই জানিয়ে দেন, সরকারি নির্দেশ ছাড়া এই ভাবে প্রকল্পের চাল বিলি করা যায় না। তিনি বলেন, “যাতে এই সময় কেন্দ্রগুলি বন্ধ না হয়, তার জন্য চেষ্ট করছি। একান্তই খোলা রাখতে না পারলে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।”
জানা গিয়েছে, ঘাটালের যে ১০৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ, তার মধ্যে প্রায় ৮০টির নিজস্ব ভবন নেই। মান্দারপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী বন্দনা পণ্ডিত অসহায় গলায় বলেন, “গ্রামের আটচালায় আমাদের রান্না হয়। সব জলের তলায়। দিন পনেরো হল রান্না বন্ধ। কিন্তু অন্য কোনও উপায়ও তো নেই।”
জেলা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, শীঘ্রই সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ির ভবন তৈরি করে দেওয়া হবে। টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভবন থাকলেও তো জল ঢুকে যায়। মোহনপুরের বধূ অর্পিতা কোলের পরামর্শ, “ঘাটালে অধিকাংশ বাড়িই একটু উঁচুতে। যাতে জল না ঢোকে তার জন্য এই ব্যবস্থা। অঙ্গনওয়াড়ি ভবনগুলিও যদি একটু উঁচু করে তৈরি হয়, সহজে জল ঢুকবে না।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রকল্প আধিকারিক অসিতবরণ মণ্ডলের আশ্বাস, “ইতিমধ্যে যেখানে ভবনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে, হয়তো কিছু করা যাবে না। তবে, নতুন ভবনগুলি পিলার দিয়ে একটু উঁচু করে বানানোর ভাবনাচিন্তা আমরা অবশ্যই করব।”
|
অঙ্গনওয়াড়ি কোথায়-কত |
ঘাটাল |
৩৩২ |
চন্দ্রকোনা-১ |
২১৪ |
চন্দ্রকোনা-২ |
১৭৮ |
দাসপুর-১ |
২৬০ |
দাসপুর-২ |
১৭৪ |
|
|
|
|
|
|