|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
দশরথ সিকদার (৩৪) • স্ত্রী (২৫) • ছেলে (৬ মাস)
• মা (৫২) • বাবা (৬০) • বোন (২০)
বেসরকারি সংস্থার কর্মী
• একমাত্র উপার্জনকারী • অফিসে পিএফ, গ্র্যাচুইটি, স্বাস্থ্যবিমা (স্বামী-স্ত্রীর ৫ লক্ষ) রয়েছে
• নিজেদের বাড়ি • ২-৩ বছরের মধ্যে বোনের বিয়ে দিতে চান • ১.৫-২ কাঠা জমি কেনার ইচ্ছে
• সঞ্চয় নিয়ে চিন্তিত • লক্ষ্য, পরিবারের সুরক্ষা • ছেলের পড়াশোনার জন্য সঞ্চয়ে আগ্রহী |
 |
|
|
খরচ (মাসে) |
• সংসার চালাতে: ১৪,১৬৭
• পিএফ:
১,২০০
• জীবন আনন্দ: ৪৬৩
(২১ বছরের, বিমা মূল্য ১ লক্ষ)
• বজাজ অ্যালায়েঞ্জ ইউনিট গেইন প্রোটেক্শন প্লাস ২: ১,০৪২
(বিমা মূল্য ৬০ হাজার, বন্ধের ভাবনা)
|
সম্পদ |
• রিলায়্যান্স লাইফ ইনশিওরেন্স:
৬০,০০০
(বিমা মূল্য ২ লক্ষ, তিন বছর লগ্নি, আপাতত বন্ধ রয়েছে) |
|
|
 |
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
চড়া
মূল্যবৃদ্ধি এবং অস্থির অর্থনীতির এই সময়ে সংসার চালিয়ে সঞ্চয়ের পথ খুঁজে বার করা সত্যিই সমস্যার। তার উপর দশরথ ছ’জনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ফলে তাঁকে একাই সম্পদ গড়ে তোলার ভার নিতে হয়েছে। আজ দেখি সেই পথে তাঁকে কিছুটা এগিয়ে দেওয়া যায় কিনা।
জীবনের সুরক্ষা
শুরু করুন টার্ম পলিসি দিয়ে। একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ার কারণে দশরথের কিছু হলে পুরো পরিবারই সমস্যায় পড়বে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি টার্ম পলিসি করে নিন। এতে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত মেলে না। কিন্তু জীবনের সুরক্ষা পাওয়া যায়। যে কারণে এই পলিসির প্রিমিয়ামও অনেকটাই কম। সাধারণ ভাবে দশরথের জন্য এই বিমার হিসাব হবে
বিমা মূল্য= (বর্তমান বাৎসরিক আয় x ১০০) / গড় রিটার্ন = (২৮,০০০ x ১২ x ১০০) / ৮ = ৪২ লক্ষ টাকা
ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সংস্থার কাছে বিমা করালে আগামী ২৬ বছর ধরে ৪২ লক্ষ টাকা টার্ম পলিসির প্রিমিয়াম পড়বে বছরে প্রায় ৮,০০০ টাকা (মাসে ৬৬৭ টাকা)। অন্য কোনও সূত্র থেকে এই বিমা করলে কিন্তু বেশি প্রিমিয়াম পড়বে।
• অন্য পলিসিগুলির মধ্যে জীবন আনন্দ চালিয়ে যান।
• বাকি দু’টি পলিসিই এখন বন্ধ থাক। তবে আগামী দিনে সুযোগ বুঝে তা তুলে নিতে পারেন।
• বন্ধ রাখা বিমার টাকা কাজে লাগবে অবসর জীবনে। তা হাতে পাওয়ার পর ডাকঘর এমআইএস প্রকল্পে রাখুন। এই খাতে প্রতি মাসে যে সুদ পাবেন, তা ডাকঘরেই রেকারিং ডিপোজিটে রাখুন।
সন্তানের শিক্ষা
দশরথের ছেলের বয়স মাত্র ছ’মাস। কিন্তু তা-ও এখন থেকেই তার পড়াশোনার জন্য লগ্নি শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ। স্নাতক স্তরে এখন পড়ার খরচ যদি ৫ লক্ষ টাকা ধরি, তা হলে ১৮ বছর পর তা দাঁড়াবে ১৪.৩০ লক্ষে (৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)।
হাতে থাকা টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা কোনও ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের (এসআইপি) মাধ্যমে রাখুন। ১৮ বছর পর তা দাঁড়াবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকায় (১০% রিটার্ন ধরে)। তখন সেই টাকা দিয়ে ছেলের পড়াশোনা ছাড়াও দশরথের অবসর জীবনের সম্পদ তৈরি করাও সম্ভব হবে।
বোনের বিয়ে
দশরথ চান আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে বোনের বিয়ে দিতে। বোনের বয়স মাত্র ২০ বছর। তাই ৩ বছর ধরেই আমরা হিসাব করব। লগ্নির জন্য এই সময় যেহেতু তুলনামূলক ভাবে কম, তাই আমার মতে এ জন্য কম ঝুঁকির প্রকল্পে টাকা রাখলেই ভাল হবে।
• মাসে ২,০০০ টাকা ব্যাঙ্কে রেকারিং ডিপোজিটে রাখুন। ৯% সুদ ধরলে প্রায় ৮২,৯২৩ টাকা জমবে।
• ১,০০০ টাকা লগ্নি করুন গোল্ড ইটিএফে। ৮% রিটার্ন ধরে এই খাতে জমবে প্রায় ৪০,৮০৫ টাকা।
মোট জমবে ১,২৩,৭২৮ টাকা। তা দিয়ে কিছুটা হলেও বিয়েতে সোনার গয়না বা অন্য খরচ মেটাতে পারবেন।
জমি কেনা
১.৫ থেকে ২ কাঠার একটি জমি কিনতে চান দশরথ। কিন্তু এই জমি আপনি কী জন্য কিনছেন, তা ঠিক করে রাখতে হবে প্রথম থেকেই। অর্থাৎ শুধুমাত্র লগ্নির জন্য জমি কিনে রাখা, নাকি সেই জমিতে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। কারণ অনেক সময়েই দেখা যায় লগ্নির জন্য জমি বা বাড়ি কিনলেও, পরবর্তী কালে তা বিক্রি করতে মন চায় না। ফলে সে বিষয়ে অবশ্যই ভাল করে ভেবে নিন।
পাশাপাশি এটাও বলতে চাই, অনেকেই নিজের বসত বাড়ি বা ফ্ল্যাটকে সম্পদের মধ্যে ধরেন। একটু ভেবে দেখতে পারেন, আপনি কিন্তু চাইলেই তা বিক্রি করে টাকা হাতে পাবেন না। কারণ তা হলে মাথার উপর থেকে ছাদ সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বরং দ্বিতীয় বাড়ি/ফ্ল্যাট বা জমি কিনলে তাকে সম্পূর্ণ ভাবে আপনার সম্পদের আওতায় ফেলতে পারেন। কারণ প্রয়োজনে তা বিক্রি করে টাকা পেতে পারবেন আপনি।
• এর পর আসি টাকা জোগাড়ের প্রসঙ্গে। এই মুহূর্তে আপনার হাতে জমি কেনার টাকা নেই। তবে এখন থেকে সঞ্চয় শুরু করুন। ডাকঘরে রেকারিং ডিপোজিটে পাঁচ বছরের জন্য মাসে ৩,০০০ টাকা করে রাখুন।
• বোনের বিয়ের পরও রেকারিং বা গোল্ড ইটিএফ বন্ধ করবেন না। সেই টাকা জমি কিনতে কাজে লাগবে।
লক্ষ্যের বাইরে
এ তো গেল দশরথের লক্ষ্যের কথা। এর পরও কিছু পরামর্শ দিতে চাই
• খুব তাড়াতাড়ি আপনি একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলুন। সেখানে আপাতত প্রতি মাসে ১,২০০ টাকা করে রাখুন। আগামী দিনে বেতন বাড়লে এই খাতে লগ্নিও বাড়াতে হবে। পিপিএফের টাকা যেহেতু সম্পূর্ণ করমুক্ত। তাই অবসর জীবনের জন্য বড় তহবিল গড়ে তোলার কাজে তা লাগাতে পারবেন।
• যত দ্রুত সম্ভব বাবা-মার জন্য একটি স্বাস্থ্যবিমা করান।
ছ’জনের সংসার চালিয়ে সঞ্চয় করা চিন্তার তো বটেই। কিন্তু পরিকল্পনা করে এগোতে পারলে লক্ষ্যে পৌঁছতে সমস্যা হবে না। সে জন্য শুভেচ্ছাও রইল আমাদের পক্ষ থেকে। |
|
|
 |
|
|