গ্রামের চেনা ঠিকানায় ফেরার সুযোগ পেলেন চাপড়ার হাতিশালা গ্রামের ঘরছাড়ারা।
সিপিএম করার ‘অপরাধে’ ঘর-ছাড়া প্রায় পাঁচশো গ্রামবাসী সোমবার দুপুরে নদিয়া জেলা পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে ব্যাগ, সুটকেস, বিছানাপত্তর, বই-খাতা-সহ পড়ুয়ারা শেষতক তাঁদের পুরনো আস্তানায় ফিরলেন বটে, তবে মুখ-চোখে লেপ্টে থাকা আতঙ্ক মোছেনি।
কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক সব্যসাচী সরকার বলেন, ‘‘সর্বদলীয় বৈঠকে সহমতের ভিত্তিতেই গ্রাম ছাড়াদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় এরপরে তাঁদের আর গ্রামে থাকতে কোনও অসুবিধা হবে না।’’ তবে প্রশাসনের কর্তাদের এই আশায় খুব যে ভরসা পাচ্ছেন হাতিশালার মানুষজন এমনটা হলফ করে বলা যায় না। তাঁদের অনেকেরই মুখে তাই, “দেখি কী হয়!”
জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, ‘‘গ্রামে শান্তি বজায় রাখতে আমাদের যা যা করণীয় তা সবটাই করা হয়েছে।’’ আর দেড় মাস পর বাড়ি ফিরে সিপিএম সমর্থক সাহিদ মোল্লা বলছেন, ‘‘গ্রামে তো ঢুকলাম, কিন্তু শান্তিতে থাকতে পারব তো!”
৯ জুলাই সকালে হাতিশালা গ্রামে বাড়ির সামনে খুন হয়েছিলেন তৃণমূলকর্মী মিঠু ঘোষ। প্রাক-নির্বাচনের গণ্ডগোলের জেরে দু’পক্ষের বোমাবাজির সময়ে গ্রামে নিজের বাড়ির সামনেই বোমায় আহত হয়ে মারা গিয়েছিলেন এক তৃণমূল কর্মী। অভিযোগের আঙুল উঠেছিল স্থানীয় সিপিএমের দিকে। তার জেরে গ্রামের বহু বাড়িতে শুরু হয়েছিল লুঠপাট। সেই রাতেই বেশ কয়েক জন সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছিল শাসক দলের সমর্থকেরা। পরের দিন থেকেই গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছিলেন হাতিশালার মানুষজন।
তাঁদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন আশপাশের গ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। দিন পনেরো ধরে এ ভাবেই কার্যত ‘ভবঘুরে’ জীবন কাটানোর পরে ঘর-ছাড়া ওই গ্রামবাসীদের দায়িত্ব নিয়েছিল সিপিএম। দলীয় ভাবে তাদের প্রতি দিন দিনে-রাতে পাত পেড়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল দলগত ভাবে। হাতিশালা গ্রামের পাশেই নতুনগ্রামে গড়ে উঠেছিল সেই অস্থায়ী শিবির। এরপর ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরাতে উদ্যোগী হয় জেলা প্রশাসন। জেলা ও ব্লক স্তরের সর্বদলীয় বৈঠকের পর শনিবার হাতিশালা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেন বিডিও রিনা ঘোষ। ঠিক হয় সোমবারই ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরানো হবে। সেইমতো এ দিন পুলিশের উপস্থিতিতে ঘরছাড়ারা ঘরে ফেরেন।
প্রথমে দল বেঁধে ঢুকতে চাইলে গন্ডগোলের আশঙ্কায় তাদের আটকে দেওয়া হয়। পরে বিচ্ছিন্নভাবে তাঁরা গ্রামে ঢোকেন। নিহত মিঠু ঘোষের বাড়ির সামনে স্থানীয় এক সিপিএমের নেতার গ্রামে ঢোকা নিয়ে আপত্তি জানায় বেশ কয়েক জন তৃণমূল সমর্থক। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা চাপড়ার প্রাক্তন বিধায়ক সামশুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘অবশেষে আমাদের কর্মী সমর্থকরা গ্রামে ঢুকতে পারছেন। এটা খুবই খুশির ঘটনা।’’
জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘মানুষকে ঘরে ঢুকতে না দেওয়ার সংস্কৃতি সিপিএমের। আমাদের দল এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা সবরকমভাবে সামিল থাকব।’’ তবে তিনি জানিয়ে দেন, যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে পুলিশকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। |