রাজ্যে শিল্পের প্রসার নেই |
উৎপাদন কমিয়ে দিল এনটিপিসি
নিজস্ব সংবাদদতা • ফরাক্কা |
শিল্প নেই। রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। তাই এনটিপিসি তাদের ফরাক্কা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিতে ব্যধ্য হল। মঙ্গলবার ফরাক্কায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এ কথাই স্পষ্ট করে দিলেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ ডাহাকে।
ফরাক্কায় ৫টি ইউনিটে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। এ বছর জুন মাসে ৫০০ মেগাওয়াটের আরও একটি ইউনিট চালু করা হয়। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে ওই ভরসাতে এনটিপিসি ফরাক্কায় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ২১০০ মেগাওয়াট করে। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার ওড়িশা, সিকিম-সহ কয়েকটি রাজ্যে বিদ্যুৎ যায় এনটিপিসির ফরাক্কা কেন্দ্র থেকে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ বরাদ্দ রয়েছে এনটিপিসি’র। অর্থাৎ প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পায় ফরাক্কা থেকে এ রাজ্য। কিন্তু নতুন ভাবে এ রাজ্যে শিল্প গড়ে না ওঠায় এ রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমশ কমছে। বর্তমানে এনটিপিসি থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ নিচ্ছে মাত্র ৪০০ মেগাওয়াট।
প্রদীপবাবু বলেন, “ফরাক্কা এনটিপিসি ২১০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৯৫ শতাংশের উপর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। যে সব রাজ্যে বিদ্যুৎ পাঠানো হয় তার মধ্যে চাহিদা কমছে পশ্চিমবঙ্গের। তার প্রধান কারণ রাজ্যে নতুন শিল্পের প্রসার সে ভাবে হচ্ছে না। তা ছাড়া সব রাজ্যে বর্ষাও নেমেছে। ফলে বাধ্য হয়েই চাহিদা না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে। |
ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়। |
চাহিদা না থাকায় গত ১২ অগস্ট থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের ইউনিট সংস্কারের জন্য বন্ধ করতে হয়েছে। চালু থাকা ৫টি ইউনিটে বিদ্যুৎ ১৬০০ মেগাওয়াটের জায়গায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১১১৮ মেগাওয়াট থেকে ১১২৫ মেগাওয়াট। তবে চাহিদা বাড়লে ওই উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের।”
তিনি জানান, বছর দেড়েক আগে ইউনিটের ক্ষমতা মত সমস্ত বিদ্যুতই উৎপাদন করা হত। চাহিদ না থাকলে সে বিদ্যুৎ যেমন অপচয় হত তেমনি উৎপাদনের বাড়তি খরচও বইতে হত এনটিপিসিকে। বর্তমানে এনটিপিসি অপচয় রুখতে চাহিদা মতোই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। মাত্র ১৪ শতাংশ বিদ্যুৎ বাড়তি রাখা হয় যাতে জরুরি প্রয়োজনে যে কোনও রাজ্যকে তা দেওয়া যায়। কিন্তু বাড়তি চাহিদা তো নেই, উল্টে চাহিদা কমিয়েছে সব রাজ্যই। তবে পশ্চিমবঙ্গে চাহিদা কমেছে সব চেয়ে বেশি। বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশকে এনটিপিসি প্রতিদিন ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি সাক্ষর করেছে। আসছে মাস থেকে সেই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
কয়লা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সমস্যা চলছে। দৈনিক ৩৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগে ফরাক্কায়। কিন্তু রেলের পরিবহণজনিত সমস্যার কারণে কয়লার যোগান ঠিক মতো হয় না। কয়লার গুনগত মানও খুব খারাপ। পরিবহণ সমস্যার কিছুটা সমাধানের জন্য অক্টোবরে পুজোর আগেই জলপথে হলদিয়া থেকে দৈনিক ৭০০ মেট্রিক টন করে কয়লা ফরাক্কায় আনা হবে। ওই কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেক আমাদানি করা হবে। জলপথে ভারতে কয়লা আনার ব্যবস্থা এই প্রথম। ৪৪৯৪ একর জমি জুড়ে গড়ে ওঠা ফরাক্কা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয় ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি। এক বছরের মধ্যে ২০০ মেগাওয়াটের ৩টি ইউনিট গড়ে তোলা হয়। পরে ৫০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট গড়ে ওঠে।
পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে এই ভরসাতেই এ বছর ১৯ জুন আরও ওকটি ৫০০ মেগাওয়াটের ইউনিট চালু করা হয়। কিন্তু চাহিদা না বাড়ায় হতাশ ফরাক্কা এনটিপিসির কর্তারা। প্রদীপবাবুর কথায়, “বর্তমানে চতুর্থ ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে। মাসখানেক পর সংস্কার করে তা চালু করা হবে। কিন্তু নতুন শিল্প গড়ে না উঠলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে না। সে ক্ষেত্রে বিদুতের উৎপাদন আরও কমাতে বাধ্য হব।” |
|