নিকাশি নালার দাবিতে বসিরহাটে
রাস্তা কেটে বিক্ষোভ জলবন্দিদের
‘ভোট দিয়ে আমাদের জেতালে আর জমা জলের সম্যসায় পড়তে হবে না। নালা কাটা হবে। গ্রামে জল জমবে না।’ ভোট এলেই রাজনৈতিক দলগুলির নেতানেত্রীদের এমন প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যেত। প্রতি বর্ষায় জমা জলের ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ তাই শুনে আশা করতেন, এ বার বোধহয় শিকে ছিঁড়তে চলেছে। বর্ষায় দিনের পর দিন জমা জলের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন তাঁরা। কিন্তু ভোট মেটার পরেও সেই একই ভোগান্তি। গত কয়েক বছর ধরেই এই অবস্থা চলতে থাকায় এ বার আর বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাধা মানেনি। আর সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটল মঙ্গলবার। বসিরহাটের ১৮, ১৯, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এলাকা থেকে জমা জল বের করে দেওয়ার দাবিতে পাকা রাস্তা কেটে দিয়ে, রাস্তায় গাছের ফেলে বিক্ষোভে সামিল হলেন।
কেটে দেওয়া
হচ্ছে রাস্তা।
জলে অর্ধেক ডুবে যাওয়া
নলকূপ থেকে চলছে জল সংগ্রহ।
এ দিন ভ্যাবলায় তাঁতিপাড়া মোড়ে এই ঘটনায় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ সামাল দিতে মহকুমাশাসকের প্রতিনিধি হিসাবে ঘটনাস্থলে যান ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিত্‌ ঘোষ। পৌঁছে যায় পুলিশও। কিন্তু পুলিশের সামনেই তিনি ঘেরাও হন। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি রাস্তার পাশে জলায় ঠেলে ফেলে দেয়। বিক্ষোভের জেরে বসিরহাট-ন্যাজাট রুটে যান চলাচল ব্যাহত হয়। চারটি স্কুলে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। বিকেল নাগাদ ঘটনাস্থলে যান মহকুমাশাসক এবং এসডিপিও। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাঁদের কোনও কথাই শুনতে চাননি। জল সরাতে নিকাশি নালা তৈরির কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
বসিরহাট পুরসভা এলাকার ১৮,১৯ ও ২০ নম্বর ওর্য়াড এবং পাশের রাজেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের একাংশ মিলিয়ে এলাকায় প্রায় ১০ বাজার মানুষের বাস। প্রতি বছর বর্ষা তাঁদের কাছে আতঙ্ক। জল নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলে জলবন্দি হয়ে দিন কাটাতে হয়। এ বার পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন কয়েক ধরে নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে ভ্যাবলা, তাঁতিপাড়া, মণ্ডলপাড়া, মাঠপাড়া, পঞ্চাননতলা, ঝিনকা, ঘোষপাড়া, সল্টলেকপাড়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা চলে গিয়েছে একহাঁটু জলের তলায়। কোথাও আবার তা কোমর ছাড়িয়ে গিয়েছে। কাজকর্ম থেকে খাওয়াদাওয়া সবই বিপর্যস্ত। স্থানীয় বাসিন্দা রবিন ঘোষ, জ্যোতিপ্রসাদ কুলোভি, গৌরি কর্মকার বলেন, “প্রতি বছর ওই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ভোট এলেই নেতারা এসে নিকাশি নালা তৈরি করে দেওয়ার কথা বলে ভোট চান। ভোটও দিই। কিন্তু তার পরেও আমাদের এমন অবস্থা কেন?” জমা জলের কারণে কাজে কর্মেও বেরোতে পারছেন না অনেকে। অনেক ছাত্রছাত্রীই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে। সবচেয়ে সমস্যা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে কী ভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে তা নিয়েই চিন্তিত বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস সব দলের নেতারাই তাঁদের এই দুর্গতির কথা জানেন। কিন্তু দুর্গতি থেকে রেহাই দিতে কারওকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। তাঁদের আরও অভিযোগ, এলাকার জমা জল বের হওয়ার কোনও রাস্তাই নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মদতে তৈরি মাছ চাষের পুকুর, দোকান, বাড়ি-ঘর তৈরি হওয়ায় জল বের হওয়ার কোনও রাস্তাই নেই। তার ফল ভুগতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁদের দাবি, দখলদারি তুলে, নয়তো বড় রাস্তার পাশে নিকাশি নালা তৈরি করে তার মাধ্যমে জল ফেলতে হবে কাঠাখালি খালে। নিকাশির ব্যবস্থা না হওয়ার জন্য তাঁরা পুরসভাকেও দোষারোপ করেন।
এ দিন বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিত্‌ ঘোষ। এলাকা ঘুরে দেখার সময় কয়েকজন ছাত্রছাত্রী তাঁকে বলেন, “স্যার দেখছেন, রোজ রোজ এ ভাবে জামাকাপড় ভিজিয়ে স্কুলে যাওয়া যায়? তা ছাড়া ঘরের ভিতরে জল। চৌকিতে রান্নাবান্না চলছে। পড়াশোনা করব কেমন করে।” স্বভাবতই হকচকিয়ে যান অভিজিত্‌বাবু। তিনি বলেন, “যা দেখছি তাতে এখানকার মানুষের দুর্গতির সীমা নেই। তবে এই এলাকায় নিকাশি নালা তৈরির জন্য ২০১২ সালে মার্চ মাসে ৮৪ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প বিএডিপি-র দফতরে পাঠানো হয়েছিল। ওই প্রকল্প যাতে দ্রুত অনুমোদন করা হয় তার চেষ্টা চলছে।’’
বসিরহাটের পুরপ্রধান কংগ্রেসের কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, “ওই এলাকায় মাছের ভেড়ি তৈরি করে মাছ চাষ শুরু হওয়ায় জল বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারা ওই সব ভেড়ি তৈরির অনুমতি দিয়েছে তা আমার জানা নেই। যা অবস্থা তাতে রাস্তার পাশ দিয়ে নিকাশি নালা তৈরি না করলে জল বের হওয়ার উপায় নেই। এ জন্য রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হলেও কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ওটা পঞ্চায়েত এলাকা হওয়ায় জল নিকাশির ব্যবস্থা দেখভালের কথা বিডিও-র। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে।”
বসিরহাটের মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “নিকাশি নালা তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই প্রকল্প তৈরি করে তা পাঠানো হয়েছে অনুমোদনের জন্য। সমস্যার কথা জেলাশাসককেও জানানো হয়েছে। জল সরানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দেওয়া হলেও তাঁরা বিক্ষোভ তুলে নেননি। রাত পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান।”

ছবি: নির্মল বসু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.