সম্পাদকীয় ১...
বৈষম্যের বিষবৃক্ষ
সুষমা সৌন্দর্যের অপর নাম। তাহারই বিপরীত ‘বৈষম্য’। লিঙ্গবৈষম্যের যে বিষবৃক্ষ ভারতের সমাজে গভীর শিকড় গাঁথিয়া, ডালপালা মেলিয়াছে, এই একবিংশ শতকেও তাহার বিষফল ফলিতেছে। শিশুকন্যার শিক্ষা-স্বাস্থ্য-স্বনির্ভরতার বহুতর আয়োজন রাষ্ট্র করিয়াছে, সফল ও স্বনামধন্য মেয়েদের সংখ্যাও দেশে কম নহে। তৎসত্ত্বেও পুরাতন কুপ্রথা, কুযুক্তি আঁকড়াইয়া পরিবারগুলি শিশুকন্যাদের অকালমৃত্যু কামনা করিতেছে। রাজ্যে সদ্যোজাত শিশুদের মধ্যেও বৈষম্য করিতেছেন পিতামাতা। পুত্র হইলে তাহার সঙ্কট কাটাইতে আনা হইতেছে হাসপাতালে, কন্যা হইলে হাসপাতালে আনার কষ্ট করিতে পরিবার রাজি নহে। তাই নবজাতক ইউনিটগুলিতে পুত্রই অধিক, কন্যা কম ভর্তি হইতেছে। কন্যার জীবন বিপন্ন হইলেও তাহাকে রাখা হইতেছে বাড়িতেই। কন্যাশিশুর জীবনের অপেক্ষা তাহার মৃত্যুই অধিক কাম্য এ রাজ্যের পরিবারগুলির কাছে। নানা জেলার নানা হাসপাতালে ধারাবাহিক ভাবে পুত্রকন্যার বৈষম্যের পরিসংখ্যান স্পষ্ট করিয়া দিয়াছে যে, কন্যা-বিদ্বেষ আমাদের সমাজে কত ব্যাপক। অনাদরে, অবহেলায় বহু শিশুকন্যা পাঁচ বৎসর পূর্ণ হইবার পূর্বেই জীবনচক্র শেষ করে, তাই পাঁচ বৎসরের শিশুপুত্রদের তুলনায় কন্যাদের মৃত্যুহার অনেকটাই বেশি। সরকার বিনা খরচে চিকিৎসা দিয়াও ওই শিশুকন্যাদের মৃত্যু প্রতিরোধ করিতে পারিতেছে না। যে দেশে মেয়েরা ‘লক্ষ্মী’ বলিয়া সমাদৃত, সেখানে এই লিঙ্গবৈষম্য যেন বাস্তবিক অলক্ষ্মীর আরাধনা। শ্রীহীন, লক্ষ্মীহীন হইবার এমন ভয়ানক সাধনা আরও কত যুগ চলিবে, কে বলিতে পারে?
সাম্প্রতিক জনগণনাতে কোনও আশার আলো দেখা যায় নাই। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করিয়া বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি দেখাইয়াছেন, দশ বৎসরের ব্যবধানে জনসংখ্যায় ছয় বৎসরের নীচে শিশুকন্যাদের অনুপাত আরও কমিয়াছে। মোট সংখ্যার হিসাবে বিচার করিলেও, ২০০১ সালে শিশুপুত্রের সংখ্যা অপেক্ষা শিশুকন্যা ছিল ২০ লক্ষ কম। ২০১১ সালে তাহা হইয়াছে ৩০ লক্ষ। শহরাঞ্চলে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হইলেও, অবনতি হইয়াছে গ্রামে। ভারতে লিঙ্গবৈষম্যের খাসতালুক এখন তাহার গ্রামগুলি, তাহাই স্পষ্ট হইয়াছে এই বিশ্লেষণে। শহরগুলিতে চিকিৎসা-প্রযুক্তির সাহায্যে গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গনির্ধারণ এবং গর্ভপাতের ঘটনা ঘটিতেছে বেশি। গ্রামে কিন্তু শিশুকন্যা জন্মাইবার পর তাহার অকালমৃত্যুর ঘটনা অধিক বলিয়াই প্রতিপন্ন হইতেছে। ইহার কোনটা বেশি মর্মান্তিক, তাহা বিচার করিবে কে? যাহা বিচারের অপেক্ষা রাখে না তাহা হইল, গত দুই দশকে ভারত ক্রমশ বিশ্বায়িত পুঁজিনির্ভর, মুক্ত অর্থনীতির দেশ হইয়া উঠিলেও, সমাজ পরিকাঠামো ব্যবস্থায় তাহার সাবেকি সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব রহিয়াই গিয়াছে। কোনও ব্যক্তির মেধা, পরিশ্রম, কর্মক্ষমতা, কোনও কিছুই তাহার স্থান নির্ণয় করিতে পারে না। সে যে নারী, কিংবা নিম্নবর্ণ, কিংবা আদিবাসী, সেই পরিচয়েই তাহার মূল্য নির্ধারণ হয়। রাষ্ট্র এই ফাঁদ হইতে সমাজকে বাহির করিবার জন্য বৈষম্যপীড়িত জনগোষ্ঠীগুলির জন্য নানা বাড়তি সুযোগসুবিধা তৈয়ারি করিতেছে। এবং বৈষম্য রোধ করিতে নানা বিধিনিষেধও আনিতেছে। তাহাতে যে কোনও ফল হয় নাই, এমন নহে। একটি গবেষণা দেখাইয়াছে, ভ্রূণের লিঙ্গনির্ধারণ বিরোধী আইন হইবার পর অন্তত এক লক্ষাধিক শিশুকন্যা বাঁচিয়া গিয়াছে। অর্থাৎ আইন ও তাহার সুপ্রয়োগেরও প্রয়োজন আছে। ‘কন্যাশ্রী’র ন্যায় প্রকল্পও শিশুকন্যার প্রাণরক্ষায় কার্যকর হইবে, সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট। কিন্তু পরিবারে শিশুকন্যার সমাদর এবং পুত্রের সহিত সমান যত্নে তাহার লালনপালনের শর্ত কী? মাতার স্নেহ, পিতার সমাদর, সকলই বিষাইয়া দিতে পারে যে বৈষম্যময় বৃক্ষ, কী করিয়া তাহার মূলোৎপাটন হইবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.