বেনজির-হত্যায় চার্জ গঠন মুশারফের বিরুদ্ধে
বিরোধী নেত্রী বেনজির ভুট্টোকে খুনের অভিযোগে চার্জ গঠন হল পারভেজ মুশারফের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার ৬৬ বছর পর যেখানে অধিকাংশ সময়েই ক্ষমতার রাশ ছিল সেনার হাতে, সেই সেনাবাহিনীরই প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু হওয়ার ঘটনা পাকিস্তানের ইতিহাসে একেবারেই বিরল। অপরাধ প্রমাণিত হলে মুশারফের ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে।
রাস্তার দু’ধারে সশস্ত্র পুলিশ। এমনকী আশপাশের বাড়ির মাথা থেকেও বন্দুক হাতে নজর রাখছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এ হেন আঁটোসাটো নিরাপত্তার মধ্যেই রাওয়ালপিন্ডির বিশেষ সন্ত্রাস দমন আদালতে এ দিন নিয়ে আসা হয় পারভেজ মুশারফকে। ঘটনাচক্রে যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হল, তার কাছেই এক নির্বাচনী সভায় খুন হয়েছিলেন বেনজির ভুট্টো। আদালতে বিচারপতি হাবিবুর রহমান প্রাক্তন এই সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি পড়ে শোনান। খুন, খুনের চক্রান্ত ও তাতে সাহায্য করা মূলত এই তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
যদিও আদালতে দাঁড়িয়েই সবক’টি অভিযোগ অস্বীকার করেন পারভেজ। তাঁর দল ‘অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ’-এর মুখপাত্র আসিয়া ইশাকের অভিযোগ, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার তাঁদের নেতা। আগামী ২৭ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
বহু বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর ২০০৭-এর অক্টোবরে পাকিস্তানে ফিরে আসেন বেনজির ভুট্টো। সে বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে নির্বাচনী প্রচার সেরে গাড়িতে ওঠার মুখে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন ভুট্টো। সে সময় পাক প্রেসিডেন্টের পদে আসীন ছিলেন মুশারফ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো খুনে তালিবান জঙ্গিদের দিকেই সে সময় অভিযোগের আঙুল তুলেছিল তৎকালীন প্রশাসন। ২০১০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের এক তদন্ত কমিটি অবশ্য তাদের রিপোর্টে জানায়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল মুশারফ সরকার। তা ছাড়া, খুন হতে পারেন এই
আশঙ্কা থেকে মার্কিন সাংবাদিক মার্ক সিগালকে ২০০৮ এ ই-মেল পাঠিয়েছিলেন ভুট্টো নিজেই। সম্ভাব্য খুনির তালিকায় নাম ছিল মুশারফের। বেনজির হত্যা মামলায় প্রথম দিকে নাম ছিল না পারভেজের। পরে সিগালের ই-মেলের কথা জানাজানি হতে খুনের মামলায় জড়িয়ে যায় তাঁর নাম। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ভুট্টো খুনে অভিযুক্ত আরও সাত জন।
প্রায় চার বছর আত্মগোপন করে থাকার পর এ বছরই ভোটে লড়তে দেশে ফিরেছেন জেনারেল মুশারফ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় তাঁর। উপরন্তু একাধিক মামলায় ফেঁসে গিয়ে নিজের খামারবাড়িতেই গত চার মাস ধরে নজরবন্দি হয়ে রয়েছেন তিনি।
তবে চার্জ গঠন হলেও এই মামলায় ইতিমধ্যেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন পাকিস্তানের এই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। তালিবানি হানায় প্রাণসংশয় থাকায় আদালতে শুনানির সময় নিত্য দিন হাজিরা দেওয়া থেকেও মিলছে অব্যাহতি। শেষ পর্যন্ত অপরাধ প্রমাণ হলেও তাঁর শাস্তি হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নিরাপত্তা বিশারদ ইমতিয়াজ গুল যেমন মনে করেন, মুশারফের সাজা ভোগের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাঁর কথায়, দীর্ঘ দিন ধরে এখন এই মামলা চলবে। বেনজির ভুট্টো হত্যায় তাঁর সরাসরি যোগসাজশের প্রমাণ মেলাও ভার। গুলের আশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত না মুশারফ আবার আত্মগোপন করে ফেলেন।
১৯৯৯ সালে মসনদ থেকে নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিলেন পারভেজ মুশারফ। এক টানা ন’বছর ছিলেন ক্ষমতায়। এত দিন পর আবার হারানো গদি ফিরে পেয়েছেন নওয়াজ শরিফ। পুরনো শত্রুতা ঝালিয়ে নেওয়ার এমন সুযোগ শরিফ ছাড়বেন কি না, সেই প্রশ্নও অবশ্য তুলছেন কেউ কেউ। ২০০৭ সালে বিচারবিভাগের শীর্ষ পদাধিকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বিচারপতিদেরও বিরাগভজন হয়েছিলেন মুশারফ। সেনাপ্রধানকে সাজা দিয়ে বিচারপতিরা এ বার নয়া নজির গড়ার পথে হাঁটবেন কি না, সময়ই তা বলবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.