সম্পাদকীয় ১...
ভলতেয়ার বলেন নাই
ম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বলিয়াছে, (ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি) সোশাল মিডিয়া বা সমাজ-মাধ্যমে মতপ্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা মঞ্জুর করা চলে না, কারণ তাহা হইলে সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক বিষয়ে গুজব ছড়াইয়া দেশে সর্বনাশ ঘটানোর রাস্তা খোলা থাকে। তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা দেশের আইনে রাখা হইয়াছে, তাহা মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করিতেছে, এই অভিযোগ জানাইয়া সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করা হইয়াছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আদালতের এই নির্দেশ। নির্দেশটিকে সরাসরি ‘উদার গণতন্ত্রের পরিপন্থী’ বলিয়া গালি দিলে অন্যায় হইবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা উঠিলেই ফরাসি পণ্ডিত ভলতেয়ারের একটি মন্তব্য পুনরুচ্চারিত হয়: আমি তোমার মত মানি না, কিন্তু তুমি যাহাতে তোমার মত অবাধে বলিতে পারো, তাহার জন্য আমি নিজের প্রাণ অবধি বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। উদার গণতান্ত্রিক আদর্শ হিসাবে সত্যই এই বাক্যের তুলনা নাই। কিন্তু ভলতেয়ার এই কথা বলেন নাই যে, ‘তুমি যাহাতে তোমার মত অবাধে বলিতে পারো, তাহার জন্য আমি অন্যের প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।’ যে মত প্রকাশের ফলে অনেকের অনেক ক্ষতি হইবার আশঙ্কা, তাহা অবাধে প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত কি? প্রশ্নটিকে মতপ্রকাশের সম্ভাব্য পরিণাম হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখিবার কোনও উপায় নাই। নিরঙ্কুশ বা নিঃশর্ত স্বাধীনতার ধারণাটি, অন্তত সমাজের পরিমণ্ডলে, প্রয়োগসাধ্য নহে।
‘সম্ভাব্য’ কুপরিণামের আশঙ্কায় তথ্যপ্রযুক্তি চালিত সমাজ-মাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ জারির সুযোগ রাখিলে তাহার অপব্যবহার হইবে না কি? সোশাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের আইন প্রয়োগ করিয়া ক্ষমতাবানরা কী ভাবে প্রতিবাদ দমন করিতে তৎপর হইয়া থাকেন, তাহার বিস্তর নমুনা ভারতে দেখা গিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গ সেই ভারতের বাহিরে নয়। ভিন্নমত দমনের এই ধরনের চেষ্টা অবশ্যই গর্হিত। সমাজকে অবশ্যই এমন চেষ্টা প্রতিহত করিবার জন্য সজাগ ও তৎপর থাকিতে হইবে। নিয়ন্ত্রণী আইন যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা হইবে, ইহাই উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দাবি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের কোনও বিধানই রাখা চলিবে না এই দাবি চরিত্রে স্বতন্ত্র।
তাহার পরেও প্রশ্ন উঠিতে পারে, সোশাল মিডিয়ার জন্য স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন কী? ইহার উত্তর নিহিত আছে এই মিডিয়ার নিজস্ব চরিত্র ও ব্যবহারবিধিতেই। তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণের ফলে এই দুনিয়ায় অতি সহজেই একটি তথ্য বা মত দেশ-মহাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করিয়া বিদ্যুৎবেগে অগণিত মানুষের নাগালে পৌঁছাইয়া যায়, ফলে বিপজ্জনক তথ্য বা মতের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হইতে পারে। সম্প্রতি মায়ানমারের ঘটনাবলি সম্পর্কে প্রচারিত বিবিধ ‘সংবাদ’-এর কী ক্ষতিকর প্রভাব উত্তর-পূর্ব ভারতের উপর পড়িয়াছিল, সুপ্রিম কোর্ট তাহা উল্লেখ করিয়াছে। লক্ষণীয়, পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে, এমনকী টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও এই ধরনের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা চরিত্রেই অনেকটা সীমিত, কারণ সেখানে তথ্য বা মতামত প্রচারের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে। সোশাল মিডিয়ায় সেই নিয়ন্ত্রণ নাই। সেখানে ব্যক্তি সার্বভৌম। সেখানেই এই মাধ্যমগুলির বিপুল ক্ষমতা। সেখানেই তাহাদের বিপুল দায়িত্বও। ক্ষমতা থাকিলেই দায়িত্ব থাকে। অতি দ্রুত সমাজে অতি ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ও সামর্থ্য আছে বলিয়াই ফেসবুক-টুইটারের মতো মাধ্যমগুলিকে সেই সুযোগ ও সামর্থ্য ব্যবহারে সতর্ক থাকিতে হইবে। সতর্ক থাকিতে হইবে সেই মাধ্যমের শরিক প্রত্যেক ব্যক্তি-নাগরিককেও। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ যত কম প্রয়োগ করিতে হয়, ততই মঙ্গল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীনতার স্বার্থেই দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। দ্বিগুণ জরুরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.