|
|
|
|
নেতাদের তরজাতেই ঢাকা পড়ল ধামারাঘাট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ফের লাশের রাজনীতি। ফের দুর্ঘটনার দায় নিয়ে একে অন্যের দিকে আঙুল তোলার প্রতিযোগিতা আজ দেখা গেল বিহারের রেল দুর্ঘটনাকে ঘিরে। আর নেতাদের সেই তরজাই ফিকে করে দিল দুর্ঘটনার শোককে।
এমন ঘটনা অবশ্য এ দেশের রাজনীতিতে নতুন নয়। আজও ধামারাঘাটের রেল দুর্ঘটনার খবর আসা মাত্র রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তরজা চালু হয়ে যায়। তার পরে মৃতের সংখ্যা যত বেড়েছে, তত উত্তাপ বেড়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রায় সকলেই একে অপরকে দোষী সাব্যস্ত করে তা নিয়ে আসর সরগরম করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গুজরাত থেকে পটনা, সংসদ থেকে বহরমপুর অভিযোগের স্বর দ্রুত দৌড়েছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। |
 |
রেল দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন প্রিয়জনদের। সোমবার খগাড়িয়ায়। ছবি: পিটিআই |
রাজ্যরানি এক্সপ্রেসে পুণ্যার্থীদের পিষ্ট হওয়ার খবর জানাজানি হওয়ার পরেই আসরে নেমে পড়ে বিহারের সব দল। রাজ্য সরকার ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতেই বিরোধী নেতা লালুপ্রসাদ যাদব উদ্ধারকার্যে নীতীশ কুমারের সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হন। নীতীশ-বিরোধী আর এক নেতা রামবিলাস পাসোয়ান আবার এক ধাপ এগিয়ে উদ্ধারকার্যে ব্যর্থতা ও দুর্ঘটনার দায়িত্ব নিয়ে নীতীশের পদত্যাগ দাবি করেন। এনডিএ আমলে রেলমন্ত্রী থাকা রামবিলাস কোন যুক্তিতে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন, তা অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে স্পষ্ট করেননি।
দুর্ঘটনার দায়িত্ব কার, তা নিয়েও আজ তরজা চলেছে পূর্ণমাত্রায়। ঘটনার খবর আসতেই রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বহরমপুর থেকে জানিয়ে দেন, ওই সময়ে যে ওখানে অত ভিড় হবে, সে বিষয়ে রেলের কাছে কোনও তথ্য ছিল না। থাকলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিত রেল। সে ক্ষেত্রে গাড়ি আস্তে চালানো যেত। নীতীশের সাংবাদিক বৈঠকে এই বার্তা আসা মাত্রই পাল্টা আক্রমণে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্ঘটনার সব দায়িত্ব রেলের ঘাড়ে ঠেলে জানিয়ে দেন, রেল চালানোর দায়িত্ব রেল মন্ত্রকের। সেখানে রাজ্য সরকার কী করবে? একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এই দিনটিতে যে প্রচণ্ড ভিড় হয়, তা জানা সত্ত্বেও রেল ওখানে গতি নিয়ন্ত্রণের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কি না তা তদন্ত করে দেখা হোক।
অধীরের বক্তব্যকে পুঁজি করে কেন্দ্র ও নীতীশকে একযোগে আক্রমণ করে বিরোধী দল বিজেপি। দলের রাজ্যসভা সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ এক দিকে অধীরের অভিযোগ সঠিক বলে নীতীশ প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলতে কসুর করেননি। অন্য দিকে অধীর যে ভাবে রাজ্যের ঘাড়ে দায় ঠেলে দায়িত্ব এড়াতে চেয়েছেন, তারও সমালোচনা করতে ছাড়েননি তিনি। নরেন্দ্র মোদীও আজ বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন।
দুর্ঘটনা নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপের আঁচ এসে পড়েছে সংসদেও। দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে না গিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী কেন বহরমপুর থেকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বেশি ব্যগ্র, তা নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “উদ্ধারকার্যে রেল সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অধীর দাবি করেন, তিনি পূর্ব ভারতে রেলের দায়িত্ব রয়েছেন। কিন্তু তাঁর অপদার্থতার কারণে রেলের পরিষেবা, সুরক্ষা সব নষ্ট হতে বসেছে। ওই ব্যক্তির এখনই ইস্তফা দেওয়া উচিত।” অধীর শিবিরের দাবি, দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে দেখে রেল প্রতিমন্ত্রী দিল্লি আসার পরিবর্তে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। পাশাপাশি তৃণমূলের হাতে রেল মন্ত্রক থাকাকালীন জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার উদাহরণ তুলে অধীর শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, সে সময়ে মৃতদেহ শনাক্ত করে তা হাতে পেতে যে কত মাস লেগেছিল, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন।
দুর্ঘটনা নিয়ে বিতর্কের রেশ ছড়ায় রাজ্যসভাতেও। রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে রাজ্যসভাতে এটিকে ‘ঘটনা’ বলতেই তাঁকে চেপে ধরেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। কেন এটি ‘দুর্ঘটনা’ নয়, তার জবাব তিনি দাবি করেন রেলমন্ত্রীর কাছে। তখন খার্গে যথেষ্ট তির্যক ভাবে বলেন, “আমি তো ডেরেকের মতো ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী নই। তাই ভুল হয়ে গিয়েছে!” পরে রেলের ক্ষেত্রে ‘ঘটনা’ ও দুর্ঘটনার মধ্যে কী পার্থক্য, তা বুঝিয়ে দেন রেল যাত্রী পরিষেবা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডেরেক। তিনি বলেন, “ঘটনা হলে রেলকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। আর দুর্ঘটনা হলে দিতে হয়।”
আজ ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়েও রাজনীতি করতে ছাড়েননি নেতারা। বিহার সরকার মৃতদের দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও লালু তা বাড়িয়ে দশ লক্ষ করার দাবি জানান। সবাইকে ছাপিয়ে গিয়ে রামবিলাস দাবি করেন, মৃতদের কুড়ি লক্ষ টাকা করে দেওয়া উচিত। |
|
|
 |
|
|