ফোন ধরছে না প্রেমিক, চেন্নাই
থেকে পুরুলিয়া এল প্রেমিকা

মনও হয়!
চেন্নাইয়ের কাছে মারিপক্কমের বছর ষোলোর মেয়েটি দেখাল, প্রেমে এমনই হয়। সে টানে চেন্নাই মিলে যায় পুরুলিয়ার সঙ্গে! যেমন মিলে গিয়েছে নীলের সঙ্গে কাজুর জীবন।
খেলাচ্ছলে মালা পরিয়ে দেওয়া তরুণের খোঁজ করতে বাংলা মেগা ধারাবাহিক ‘জল নূপুর’-এর কাজু ট্রাকে চেপে ওড়িশা থেকে একাই পাড়ি দিয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। নীলকে খুঁজে এখন তার সঙ্গেই সংসার করছে কাজু। মারিপক্কমের মেয়েটি সেই ধারাবাহিক দেখেনি। কিন্তু, সে-ও তার প্রেমিককে খুঁজতে সুদূর চেন্নাই থেকে চলে এসেছে পুরুলিয়ায়। তামিল ছাড়া অন্য ভাষা জানা নেই। ভরসা বলতে প্রেমিকের ঠিকানা, কেন্দা থানার চিপিদা গ্রাম।
প্রেমিকের খোঁজ সে এখনও পায়নি। বরং একাকী পুরুলিয়া স্টেশনে নেমে বিপদের মুখেই পড়েছিল। রেল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের সৌজন্যে কিশোরীটির ঠাঁই আপাতত সরকারি হোমে। খবর পাঠানো হয়েছে তার মারিপক্কমের বাড়িতে। শুক্রবার পুরুলিয়ার সেই সরকারি হোমে বসে দক্ষিণ-পূর্ব রেল ক্যান্টিনের কর্মী তামিলভাষী লছমি তেওয়রের কাছে তার ঘর ছেড়ে আসার কথা বলছিল মেয়েটি। ছিপছিপে, শ্যামাঙ্গী চেহারা। কথা বলতে বার বার ঢোঁক গিলছিল। দোভাষী লছমির কাছ থেকেই জানা গেল, মেয়েটির কাহিনি। জানাল, মারিপক্কমের একটি মিনারেল ওয়াটার তৈরির কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে সে। বছর তিনেক আগে সেখানেই কাজ করতে গিয়েছিলেন চিপিদা গ্রামের এক যুবক। মেয়েটির কথায়, “আমরা একই পাড়ায় থাকতাম। এক সঙ্গেই কাজ করতাম। প্রথমে ওই ভাঙা তামিলে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আগে কেউ এমন ভাবে বলেনি। ও বেশ ভাল ছেলে। তাই রাজি হয়ে যাই।” শুকিয়ে যাওয়া মুখে হঠাৎ যেন খুশির ঝিলিক। বলে চলে, “বাবা রাজমিস্ত্রি। মা ছেলেবেলায় মারা গিয়েছিল। তাই অষ্টম শ্রেণির বেশি পড়তে পারিনি। কারখানায় কাজে ঢুকে যাই। বাবাও আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছিল। বলেছিল বিয়ে দেবে। এক সঙ্গে মারিপক্কমেই থাকব।”
কিন্তু মেগা ধারাবাহিকের মতোই ওদের সম্পর্কও সোজা পথে চলে নি। আত্মীয়ের বিয়ে বলে কিছু দিনের জন্য ছুটি নিয়ে যুবকটি বাড়ি ফিরে আসে। মাস তিনেক কেটে যাওয়ার পরেও তিনি ফিরে যাননি। দু’জনের যোগাযোগ অবশ্য ছিল, মোবাইল ফোনে। কিশোরী বলে, “ফোনে ও জানিয়েছিল কিছু কাজ রয়েছে। শেষ হলেই ফিরেবে যাবে। এমনিতেও ও বাড়িতে তেমন যেত না। কিন্তু হঠাৎ গত এক সপ্তাহ ধরে ও আমার ফোন ধরছিল না। মনের মধ্যে কত খারাপ চিন্তা চলে আসে। বাড়িতে কিছু না জানিয়েই জমিয়ে রাখা কয়েকশো টাকা নিয়ে ওর খোঁজে বেরিয়ে পড়ি।”
প্রেমিকের কাছে সে শুনেছিল, হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে পুরুলিয়ায় ট্রেনে যেতে হয়। সেখান থেকে কেন্দায় যাওয়া যায়। মঙ্গলবার রাতে পুরুলিয়া স্টেশনে এসে নামে। সকাল থেকে কিছু বদ ছেলে ঘুরঘুর করতে থাকে। রেলপুলিশের কর্মীরা মেয়েটিকে নিয়ে যান স্টেশন ম্যানেজার শ্যামাপ্রসাদ মজুমদারের অফিসে। তিনি খবর দেন চাইল্ড লাইন ও জেলা শিশুকল্যাণ সমিতিকে। তাদের মাধ্যমে মেয়েটিকে পাঠানো হয় হোমে। ফোন যায় বাড়িতে। শ্যামাপ্রসাদবাবু বলেন, “প্রেমিকের জন্য সর্বস্ব ছেড়ে, এতটা ঝুঁকি নিয়ে অত দূর থেকে কোনও মেয়েকে আসতে দেখেনি!’’
জেলা চাইন্ড লাইনের সংযোজক অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মেয়েটির বাবা শীঘ্রই পুরুলিয়ায় আসছেন। তবে, চাইল্ড লাইনের কর্মীরা চিপিদা গ্রামে গিয়ে ওই যুবকের খোঁজ পাননি। বাড়ির লোকেরা ওই মেয়েটির সঙ্গে তাঁদের ছেলের সম্পর্কের কথাও অস্বীকার করেছেন। জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র বলেন, “ওই কিশোরী চাইলে পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারবে।” ওই কিশোরীর কথায়, “আমার বিশ্বাস ও ফিরবে। আমাকেই বিয়ে করবে।” আর সেটা হলে ধারাবাহিকের কাজুর সঙ্গে কোথায় যেন মিলে যাবে এই মেয়েটির গল্পও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.