শনিবারের নিবন্ধ ১...
উত্তর=দক্ষিণ
মার জন্ম হয়ে আধা যৌবন কেটেছে মধ্য কলকাতায়। তাই উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার প্যাঁচাপ্যাঁচি, তর্কে আমার রেফারি বনার অসুবিধে নেই।
উত্তরের হেদুয়া আর দক্ষিণের লেকের মধ্যে সেন্ট্রাল ক্যালকাটার আমরা কদাচ কোনও ভেদ করিনি। সবটাই নির্ভর করেছে সঙ্গিনীটি কোন মাঠে বসে নিশ্চিন্তে চিনেবাদাম ছাড়াতে পারবে, থেকে থেকে বলে উঠবে না “ওই দ্যাখো ন’কাকা টেরিয়ে টেরিয়ে দেখতে দেখতে গেল।” কিংবা “এই সেরেছে, গানের ক্লাসের ফটিক স্যার এ দিকেই আসছেন। মাথা ঝোঁকাও, মাথা ঝোঁকাও।” নতুবা ভাঁড়ের চায়ের পয়সা মিটিয়ে বলতে হবে না তাকে, “অ্যাই ছেলে, এদিকে আর এসো না। আমরা কিচ্ছু করছি না।”
ঠিক হিন্দুস্থান-পাকিস্তান কেস না হলেও আশির দশকের গোড়া অবধি কলকাতা কিন্তু দেদার ভাগ হয়েছিল উত্তরে আর দক্ষিণে। সাউথ ক্যালকাটার মেয়ে বললে এক জিনিস, বাদুড়বাগান-শ্যামবাজারের কন্যে বললে আরেক। ছেলেদের বেলায়ও প্রায় এক ব্যাপার। তা নিয়ে কম আড়াআড়ি হয়নি এই আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় পাতায় আট দশকের মাঝামাঝি।
দক্ষিণের হয়ে লড়ে গেলেন উত্তরেই যৌবন বিতোনো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আর উত্তরের হয়ে মামলা ধরলেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
সুনীলের অবস্থাটা বুঝি। লেখালিখিতে নামডাক হয়ে বছর আঠারো-কুড়ি হল দক্ষিণের গ্ল্যামারাস গড়িয়াহাট অঞ্চলে নিবাস করছেন। অথচ ইস্কুল, কলেজ, কফি হাউজ, লিটল ম্যাগাজিন, বন্ধুবান্ধব, হুল্লোড়, মদ্যপান, রাতশাসন সবই পড়ে আছে উত্তরে।
আবার উনিই সেই উত্তুরে প্রজন্ম যাঁরা অবস্থা ভাল হয়ে আধুনিক জীবনের খোঁজে পরিযান করেছেন সাউথ ক্যালকাটায়। তবু দিব্যি ওঁর রোম্যাণ্টিক স্টাইলে দক্ষিণের হয়ে কলম চালালেন। আর সঞ্জীব?
সঞ্জীব বললেন, উত্তরে মানুষ তো খুল্লম খুল্লা। কর্তা-গিন্নির তানাজা ঘর ডিঙিয়ে বারান্দা টপকে নীচের রোয়াকে, রাস্তায় ঝরছে। নো কেয়ার। আর দক্ষিণে? বৌ পেটাতে হলে ফ্ল্যাটের দরজা-জানলা আঁটসাঁট করে লাগাও। আর ঠেঙানির সঙ্গে ধমকে যাও, ‘অ্যাই চোপ!’ কাকপক্ষীও যেন টের না পায়। বারুদের উপর বুদ্ধ হয়ে বসে সুখের হাসি হেসে যাও।
আজ বললে কী রকম নারদ-নারদ শোনাবে তবু না বলে উপায় নেই যে, উত্তর-দক্ষিণের এই সব ‘আমায় দেখ’, ‘আমায় দেখ’ ডিবেট মধ্য কলকাতার আমরা আজন্ম উপভোগ করেছি। উত্তরের রয়্যালের চাঁপ, গোলবাড়ির কষা মাংস, গিরীশ নকুড়ের সন্দেশ, চাচার কবিরাজি, অ্যালেনের কাটলেটেও আছি, আবার নাহুমের কেক, সোনোরিনায় (এখন নেই) সাড়ে সাত টাকায় দু’টো কফি, দু’টো স্যান্ডুইচ ও বান্ধবী নিয়ে বসা, সিরাজের বিরিয়ানি, নিজামের রোল, র্যালির লস্যি, কল্পতরুতে (কোথায় আর!) জুক বক্সে চার আনা ফেলে রফি চালিয়ে শিঙাড়া, মেট্রোয় ছবি দেখে পাশেই কাফে-ডি-মনিকোয় দল বেঁধে বসে সিগ্রেট ফোঁকাতেও আছি।
এ রকম এক বৈঠকে আমার আর্গুমেন্টেটিভ উত্তুরে বন্ধু দিলা দক্ষিণীদের শাসিয়ে বলেছিল, ‘খবরদার! চৌরঙ্গিকে সাউথ ক্যালকাটা বলে ক্লেম করবি না। চাইলে আমরাও জানবাজার অবধি আসতে পারি, ইতিহাস আমাদের ফেভারে।’বলা বাহুল্য, এই সব কোচল, খিচমিচ কোনও দিন চোকেনি, আর এখন, হায় কালী কলকাত্তাওয়ালি, এই প্রশ্ন আর ওঠেও না।
নর্থ ক্যালকাটা তো আজ মধ্যমগ্রাম ছাড়িয়েছে, সাউথ এখন আপ টু সোনারপুর। আর যদ্দুরেই যান, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, মানব-মানবীর ড্রেসবেশ দেখে ঠাওরানোর জো আছে আপনি শহরের কোন তল্লাটের!
ইউনিভার্সিটির গার্লফ্রেন্ডকে ‘কফি হাউজ যাই চলো’ বললে নাক সিঁটকোবে, ‘আমার তো বাড়ির পাশেই কাফে কফি ডে। আই’ম স্পয়েল্ট।’ বাড়ি কোথায়, না, বারাসত। কী বুঝবেন?
আশির দশকের মাঝামাঝি কেব্ল টিভি এসে এই উপকারটি করেছে গোটা ভারতবর্ষের। কলকাতা কা কথা। এই অনুযোগ এখনকার পঞ্চাশোর্ধ্ব গার্জেন ক্লাসের। যেমন, ডাক্তার গিন্নি শুভলক্ষ্মী, তুখড় ক্রিকেটারের শ্বশুর সঞ্জীব বা আরসিডিসি-তে নিয়মিত গল্ফ খেলা দম্পতি জলি ও মৌ মিটার মনে করেন, নর্থ এখন সাউথেরই রেপ্লিকা। শুধু কয়েকটা গল্ফ ক্লাব কি ক্রিকেট ক্লাবই নেই।
জলির প্রশ্ন, “ওয়াট এলস্ টু চ্যুজ, যেটা সাউথে আছে, নর্থে নেই। কারণ, কেবল টিভির দৌলতে ইন্ডিয়ার নর্থ অ্যান্ড সাউথও এক হয়ে গেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলতে পারবেন না, কোন ছেলেটা বা কোন মেয়েটা নর্থ বা সাউথ থেকে। ইনফ্যাক্ট দিল্লিতে দাঁড়িয়েও বলতে পারবেন না, কোন ছেলেটা মুম্বইয়ের, কোনটা দিল্লির বা কোনটা কলকাতার।
এখনকার সিনেমাও যেরকম, ধরা যাক চেন্নাই এক্সপ্রেস, নর্থ আর সাউথকে তো ভিড়িয়ে এক করে দিয়েছে। এগ্রি?”
এককালে উত্তর কলকাতা যখন ম’ ম’ করছে কান্তা বা কনক সেন্টে, হিমালয় বুকে ট্যালকম আর আফগান স্নোয়ে তখন সমাজ আরোহণে উদ্যোগী দক্ষিণ পাড়ার বাবুবিবিরা ঢুঁ মারছেন নিউ মার্কেটে আট টাকায় ছোট্ট শিশির ইভনিং ইন প্যারিস, তিন টাকায় ইংলিশ লেদার সাবান বা বড় জোর আঠারো টাকায় ম্যাক্স ফ্যাক্টর মেকআপের তল্লাশে। এ গেল ষাট দশকের গোড়ায় গোড়ায়। আর আট দশকের শেষে, নব্বইয়ের গোড়ায়? কলকাতা বিশারদ রাধাপ্রসাদ গুপ্ত যাকে বলবেন, ‘দ্য গ্রেট লেভেলিং’, সেই একস্তরীকরণ দেশ জুড়ে ঘটিয়ে ফেলেছে টেলিভিশন। নতুন প্রজন্ম, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে, এক ভাষায় কথা বলে, মুখ চোখ ও শরীরের ভাষা এক, তারা ‘ব্যাপক’ খায়, কোনও ফিল্ম দেখে তাদের ‘বিশাল’ ভাল বা ‘বিশাল’ খারাপ লাগে, আর কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে ‘বেকার বেকার’ সময় নষ্ট করে ফেলে। এদেরই চেহারা-চরিত্র, সাজপোশাক, চাওয়া-পাওয়াতে ভর করে শহরের দক্ষিণ ও উত্তর পল্লিগুলো ক্রমশ এক হয়ে গেল।
কালে কালে শেষ কামড় দিতে এসে পড়ল শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স ও ইন্টারনেট। গোটা শহরটাই ইদানীং কেমন যেন একটা বিগ বাজার, নর্থ সাউথ ডায়ালগেরও কোনও অবকাশ নেই, সবাই সবাইকে চিনে গেছে।
আশির দশকের মাঝামাঝি তাঁর দ্বিতীয় ‘ক্যালকাটা’ বইয়ের জন্য শহরে ছবি তুলতে বেরিয়েছেন বিখ্যাত আলোকচিত্রী রঘুবীর সিংহ। ওঁর সঙ্গে পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি জান কী তুলতে চাও?’ রঘুবীর বললেন, ‘না। শুধু জানি কোথায় তুলতে চাই’।
আজ রঘুবীর ফিরে এলে হয়তো ঠাওরাতে পারতেন না কোথায় তুলতে চান, ইংরেজদের ফেলে যাওয়া কিছু প্রসিদ্ধ ইমারত বাদে বাকি শহরটা মেজে ঘষে এক হয়ে গেছে। এক কিঞ্চিৎ আঁচও কি ছিল না রঘুবীরের সেদিনের একটা কথায়? যখন বললেন, ‘সত্তর দশকের গোড়ায় ছবি তুলতে তুলতে টের পেয়েছি শহরটা ফুঁসছে, ’৬৮-র প্যারিসের মতো। এখন সেটা থিতিয়ে গেছে।’
রঘুবীর মূলত উত্তর ও মধ্য কলকাতা তুলতেন, কারণ ওটাকেই ওঁর আসল কলকাতা মনে হত। সারা বিশ্বের কাছে ওটাই আইকনিক কলকাতা। মধ্য কলকাতায় আমার ছেলেবেলার রোয়াকের মেজাজ উনি পেতে চেয়েছিলেন। নিয়েও গেলাম, কিন্তু কোথায় সে সব রোয়াক, যেখানে বসে এককালে আমার বন্ধুরা উল্টো দিকের বারান্দা বা ছাদে দাঁড়ানো সুন্দরীদের উদ্দেশে হেমন্ত, শ্যামল, মানবেন্দ্রর গান ধরত। হু হু করে শুধু গাড়িই চলছে, পুরো পাড়া তার সময় হারিয়ে ফেলে নিপাট, ফিটফাট।
এই যে কলকাতার উত্তর ও দক্ষিণ ক্রমশ ঘেঁটে গেল তা হয়তো ভবিতব্যই ছিল, টেলিভিশন সেটা রকেট স্পিডে ত্বরান্বিত করল। না হলে শ্যামবাজারের কমার্শিয়াল হাব ঢিমিয়ে গিয়ে সব নাটকের পালা বসল কেন অ্যাকাডেমি, রবীন্দ্র সদন চত্বরে? নন্দন প্রেক্ষাগৃহ যে ভাল ছবির মহল তৈরি ছাড়াও নবীন জমানার নন্দন কানন হল এতেও বড় অবদান জেন-এক্সের সদ্য অবস্থিত স্বাধীনতা। ইতিমধ্যে উত্তর-দক্ষিণকে সতেরো মিনিটে এসপার-ওসপার করা শুরু করল মেট্রো রেল। ছেলেমেয়ের হাতে এসে গেল মোবাইল ফোন। তাতে দশ মিনিটে অ্যাপো করে উঠল বাই তো নন্দন যাই।
একদিন মেট্রোয় যেতে যেতে এক অদ্ভুত ডায়ালগ কানে এল। এক যুবক বলছে যুবতীকে, ‘তুই শালি কখনও টাইম রাখতে শিখলি না। বিশ-বাইশ মিনিট দাঁড় করাবিই!’ ট্রামের ঘন্টির মতো কথাটা বাজল মাথায় আমার। বিশ-বাইশেই এত ক্ষোভ? প্রেমিকার চিঠির প্রতীক্ষায় কত বেলা-অবেলা-কালবেলা কেটে গেছে আমাদের। সুনীলের সেই আক্ষেপই স্তোক তখন আমার যৌবন কাটে র্যাশনের লাইনে লাইনে।
যাকে বলে আড্ডা তার ইস্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি লেভেল ছিল। মাইরি বলছি, ইস্কুলকালে রোয়াকে বসে যে আড্ডা পেয়েছি তা প্যারিসের কাফেতে কবি-দার্শনিকদের আড্ডাকেও হার মানায়। সেখানে কোনও একদিন কেউ রামকৃষ্ণদেবের মতো কিছু একটা বলে বসল। কেউ একটা সন্ধের অন্ধকারে ছাদে দাঁড়ানো সদ্য তরুণীকে দেখে গেয়ে দিল, ‘ও আমার চন্দ্রমল্লিকা বুঝি চন্দ্র দেখেছে/ যেন কোন শুক্লা পঞ্চমীর চোখে স্বপ্ন এঁকেছে।’ আবার প্রেমে-পড়া কেউ একদিন বুকপকেটে প্রেমিকার চিঠি নিয়ে এসে হাউহাউ করে কেঁদে বলল, ‘লালী লিখেছে আমাকে ওর খুব ভাল লাগে, কিন্তু ভাল বাসে না। কী উত্তর দেব বল তোরা?’ শোনামাত্র সবাই আমরা ওর প্রাইভেট কাউন্সেল হয়ে গেলাম। আমার ওপর দায়িত্ব বর্তাল ওর হয়ে চিঠির জবাব লিখে দেওয়ার (কাজ হয়নি)।
আজ কলকাতার আড্ডা বাস্তবিকই উদ্বাস্তু। তার সত্যি কোনও ঠিকানা আছে কি? যদি জিজ্ঞেস করেন করেন আজকের জমানার আনন্দী, রসমি, রাজশ্রী বা ঈপ্সিতাকে, তাহলে উত্তর পাবেন “ইরেসপেকটিভ অব নর্থ-সাউথ, ব্যারিস্তা কফি বার, নেম এনি স্ন্যাকেটেরিয়া ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি যে কোনও চাইনিজ অর মুসলিম রেস্তোরাঁ, সবই আমাদের আড্ডার জায়গা। তবে সঙ্গে থাকতেই হবে মোবাইল আর ল্যাপটপ।” রাহুল বলবে, “এখন আড্ডার কোনও নর্থ-সাউথ নেই। কোনও ইস্ট-ওয়েস্ট নেই। কোনও দেশদেশান্তর নেই। আমাদের ভাষা, না-বাংলা না-ইংরেজি, না-সাউদি, না শ্যামবাজার, নাথিং অ্যাট অল। আমরা আমাদের ভাষাই বলি।
এরকমই এক কলকেতে লেডি চ্যাটারলি একদিন আমাকে তাজ্জব করে দিয়ে বলল, ‘তোমরা কি ভাবো প্রেমের কোনও ভাষা হয়? রং। আমার সুইডিশ বয়ফ্রেন্ডকে আমি ইংরেজিতে চিঠি লিখি ইন্টারনেটে। ও লেখে সুইডিশে। কেউ কারও কথা বুঝি না, কিন্তু মানুষটাকে বুঝি। এর কিছু দিন পর নিজের মতটা প্রমাণ করেই যেন মেয়েটি ওদের নর্থ-সাউথ ডায়লগ থামিয়ে ছেলেটিকে বিয়ে করে চলে গেল সুইডেন। আজকের চ্যাট-য়ে আড্ডা মারা ছেলেমেয়েদের কাছে ও একটা আইকন হতেই পারে।
তবু যেমন বলা হয়, বাংলা ভাগ হলেও ভাগ হননি নজরুল, তেমনি উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা ভাগ করতে পারেনি উত্তম-সুচিত্রাকে। যেমন ছিলেন বাংলার সেরা জুটি তেমনই রয়ে গেলেন জোড়ে কাজ করার অর্ধশতক পরেও।
শুধু একটা জিনিস নজর করে গেলাম বরাবর। যে-উত্তমকে প্রাণে ধরেছিল উত্তরে, তিনি সাদা অথবা ডোরাকাটা হাফ শার্ট পরা লাজুক, অভিমানী উত্তম, গাইছেন ‘সুরের আকাশে তুমি যে গো শুকতারা’। দক্ষিণের প্রিয় উত্তম প্রবল রোম্যান্টিক, স্টাইলিনা উত্তম, চাঁদের আলোয় সুচিত্রাকে শোনাচ্ছেন, ‘যদি ভাব এ তো খেলা নয়, ভুল সে তো শুরুতেই।’
উত্তরের পক্ষপাতিত্ব ছিল দুঃখকষ্ট পাওয়া, সরল, আটপৌরে কিন্তু অভিমানী সুচিত্রার প্রতি। ধরা যাক, ‘হারানো সুর’-য়ের সুচিত্রা। উত্তরের মা-মাসি-দিদিরা কেঁদে কেঁদে ছবি দেখতে ভালবাসতেন। দক্ষিণে তারিফ কুড়োতো সুচিত্রার চোখের কোণের চাউনি, বাঁকা হাসি, শানানো সংলাপ। অর্থাৎ অবস্থাপন্ন পাহাড়ী সান্যাল, কমল মিত্রদের দুহিতা সুচিত্রা। তবে উত্তর-দক্ষিণকে এক বিন্দুতে এনে ফেলেছিলেন ‘শাপমোচন’-য়ে উত্তমের গালে চড় কষানো সুচিত্রা। প্রেমের ওই অগ্ন্যুৎপাত বাঙালি তো আগে দেখেনি। আজকের কলকাতায় ছেলেমেয়েরা কলকাতার এই চারিত্রিক বিভাজন কল্পনাতেও আনতে পারবে না। স্মৃতি না থাকার যে স্বাধীনতা সেই স্বাধীনতা নিয়ে ওরা বড় হয়েছে। যে-স্মৃতিকে ওরা বলবে ‘ব্যাগেজ’, ওজন। সে জন্যই দক্ষিণের, কী উত্তরের সবাই কী অবলীলায় আমে-দুধে মিশে, লাখে লাখে জড়ো হয় রাজারহাটে (দ্য নিউ সাউথ?) ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-য়ের প্রমোশনে আসা শাহরুখ খানের ধামাকা আসরে।

সমরেশ মজুমদার: এখন আর ফারাকটা প্রায় নেই। তবে পঞ্চাশ পেরিয়েও এক-এক মহিলার যেমন পুরনো সৌন্দর্যের ঝলকটা থাকে, তেমন উত্তরের মানুষ এখনও কিছুটা গোঁড়া, ট্র্যাডিশনাল। তাঁদের রান্নাঘরে আজও সাবেকিয়ানার গন্ধটা পাওয়া যায়। দক্ষিণের ওঁরা সেই স্বাদ নিতে নামী রেস্তোরাঁয় ছোটেন।
রূপা গঙ্গোপাধ্যায়: গাড়িতে যেতে আসতে যেটুকু দেখি, তাতে বলতে পারি, এখনও কিন্তু তফাতটা বেশ আছে। বাড়িঘর, মানুষজনের চেহারা...। উত্তরের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশ সস্তা। দক্ষিণ অনেক ঝাঁ-চকচকে, কিন্তু আমার মনে হয়, বাড়িঘর যদি ঠিকঠাক মেনটেন্ড হত, উত্তরকে কিন্তু অনেক বেশি সুন্দর লাগত।
দেবশঙ্কর হালদার; এখনও কিন্তু তফাতটা আছে। আজন্ম উত্তরের বাসিন্দা হয়ে এটা কিন্তু আমার বেশ মনে হয়। গলিঘুঁজি, রাত অবধি আড্ডা, লুঙ্গি পরে রোয়াকে বসা, ছোট ছোট জলসা, তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর আরাধনা, এ বাড়ির রান্না নিয়ে ও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া, কাঁধে করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া...সবেতেই। লোপামুদ্রা মিত্র: তফাত তো আছেই। সারাজীবনই সেটা থাকবে। মানসিকতা, পছন্দ সব কিছুতেই বিস্তর ফারাক। দক্ষিণের লোকেদের মধ্যে একটা নাক-উঁচু ভাব আছে। আমি নিজে দক্ষিণ কলকাতায় বেড়ে উঠেছি। তাই আমার মধ্যেও আছে। উত্তরের লোকেরা সেখানে অনেক ইনোসেন্ট।

মডেল: নুসরত
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.