|
|
|
|
পাঁশকুড়ায় অভিযুক্ত সিপিএম |
প্রধান শিক্ষিকাকে বাঁশে বেঁধে লাথি, ঝাঁটাপেটা |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
মিড-ডে মিলের টাকা চুরির অভিযোগে প্রাথমিক স্কুলের মহিলা প্রধান শিক্ষিকাকে খোলা মাঠে বাঁশের সঙ্গে দড়ি দিয়ে পিছমোড়া বেঁধে মারধর করল কিছু লোক। বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার প্রতাপপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আমড়াগোহাল পশ্চিম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। নিগৃহীত শিক্ষিকা ছায়া সামন্তের বক্তব্য, শৌচাগার তৈরির জন্য সর্বশিক্ষা মিশনের বরাদ্দ টাকা আত্মসাৎ করতে চেয়েছিল সিপিএম প্রভাবিত গ্রাম শিক্ষা কমিটি। তাতে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ তুলে নিগ্রহ করা হয়েছে তাঁকে। ওই দিনই ১১ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থকের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন ছায়াদেবী। পুলিশ এসে ওই শিক্ষিকাকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেও এখনও কাউকে ধরতে পারেনি।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার বিষয়টি জানেন না। খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বিষয়টি জানা নেই সিপিএম জেলা নেতৃত্বেরও। পাঁশকুড়ার সিপিএম নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি বলেন, “অনেক সময় প্রশাসনের উপর ভরসা হারিয়ে লোকে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। এটা অন্যায়। আমাদের দলের লোক এতে জড়িত থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
আমড়াগোহাল পশ্চিম প্রাথমিক বিদ্যালয়। |
পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলে ছিল। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের। সেই সূত্রে গ্রাম শিক্ষা কমিটি সিপিএম প্রভাবিত। সম্প্রতি শিক্ষা কমিটির সদস্য-সহ গ্রামের কিছু বাসিন্দা ছায়াদেবীর বিরুদ্ধে মিড-ডে মিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ জানিয়েছিলেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে। সেই মতো, সংসদ থেকে প্রধান-শিক্ষিকাকে শো-কজ করা হয়। মঙ্গলবার সংসদ অফিসে দু’পক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তমলুকে সংসদ অফিসে গ্রামের লোকেরা গেলেও প্রধান শিক্ষিকা না যাওয়ায় শুনানি হয়নি।
স্কুলে থেকে প্রায় দু’ কিলোমিটার দূরে আটবেড়িয়া গ্রামের বাড়িতে বসে বুধবারের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ছায়াদেবী। তাঁর কথায়, “১০-১২ জন গ্রামবাসী আমাকে স্কুলে ঢোকার মুখে পথ আটকে ফিরে যেতে বলেন। বাধা দিয়ে লাভ হবে না বুঝে আমি ফিরে যাই। কয়েকশো মিটার দূরে যেতেই ওঁরা ছুটে গিয়ে চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে ফের স্কুলের সামনে টেনে নিয়ে যান। মাঠে বাঁশের সঙ্গে আমাকে বেঁধে ঝাঁটা দিয়ে পেটাতে থাকেন। লাথি মারেন। মহিলা কয়েকজন শাড়ি ধরে টানাটানি করেন।” কিছুক্ষণ পরে ছায়াদেবীকে স্কুলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ঘরে তালা দিয়ে চলে যান ওই লোকেরা। এ দিকে ছায়াদেবীর স্বামী কমল সামন্ত ফোনে বিষয়টি জানতে পেরে পাঁশকুড়া থানায় জানান। দুপুর আড়াইটে নাগাদ পুলিশ এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায় ছায়াদেবীকে। থানায় গিয়ে ছায়াদেবী স্থানীয় প্রশান্ত পাঁজা, তপন মণ্ডল, পরিতোষ পাঁজা, রঞ্জিৎ সামন্ত-সহ সিপিএমের ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
নিগৃহীতা শিক্ষিকা
ছায়া সামন্ত। |
শুক্রবার সকালে আমড়াগোহাল পশ্চিম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খোঁজ করতে গিয়ে দেখা মিলল ওই দিনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত প্রশান্ত পাঁজা, গ্রাম শিক্ষা কমিটির সদস্য শশাঙ্ক নায়েকদের। স্কুলের পাশেই মুদি দোকান রয়েছে প্রশান্তর। নিজেকে সিপিএমের সদস্য হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্রশান্ত বলেন, “প্রায় সাত বছর আগে ওই শিক্ষিকা স্কুলে আসার পর থেকেই গ্রামবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। এর জন্য গ্রামের মানুষের রাগ ছিল। মিড-ডে মিলেও দুর্নীতি হয়েছে। গত কয়েকমাস স্কুলে মিড-ডে বন্ধ রয়েছে। উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্যই গ্রামের মহিলাদের দিয়ে আমরা রোদে বেঁধে রেখেছিলাম।” তাঁকে সমর্থন করে শশাঙ্কবাবু বলেন, “সংসদ অফিস আমাদের ব্যবস্থা নিতে বলেছিল।”
পূর্ব মেদিনীপুর প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি গোপাল সাহু অবশ্য বলেন, “শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল দু’পক্ষকে। প্রধান শিক্ষিকা না আসায় কথা হয়নি। গ্রামের লোকদের আমি বলি সামনেই নতুন শিক্ষা কমিটি তৈরি হবে। তখন নতুন করে বিষয়টি তুলতে।”
গ্রামের বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য তথা গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি হাসিবুল নায়েক ওই দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে দাবি করলেও প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মিড-ডে মিলের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ করেছে। ছায়াদেবীর অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, “স্কুলে শৌচাগার তৈরির জন্য সর্বশিক্ষা মিশন প্রায় ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিল। তা তুলতে চেয়েছিল গ্রাম শিক্ষা কমিটি। অরাজি হওয়ায় মিথ্যা অভিযোগে অত্যাচার করছে।”
|
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
|
|
|
|
|