চিন্নাস্বামীর বুকে আজ ক্রিকেট মহাসম্মেলন
ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ একজন কথাটা বলল। সম্ভবত চাঁদু বোরডে বললেন। “বেঙ্গালুরুর ওয়েদারটা প্রসন্নর লুপের মতো। ফ্লাইট দেখে মনে হয় বল নেমে গেছে। পরে বোঝা যায় বল তখনও শূন্যে। এটাও সে রকম। মনে হয় ঠান্ডা নয়, কিন্তু বেশ ঠান্ডা।”
যাঁর সম্পর্কে বলা, সেই এরাপল্লি প্রসন্ন পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই অগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একটা ফুলহাতা সোয়েটার পরে। শহরের আরও অনেকের মতোই তাঁকেও অ্যালেগ্রা ১৮০ খেতে হচ্ছে।
নতুন পর্যটকের কাছে ওয়েদারটা অ্যালেগ্রা ১৮০-ই। একটু অসতর্ক হলে ঠান্ডা লেগে যাবে। বেঙ্গালুরু ক্রিকেটে কিন্তু কোনও ঠান্ডা লাগার ব্যাপার নেই। তারায়-তারায় যাকে বলে সরগরম। শনিবার বিকেলে কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার পঁচাত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে, তার চেয়ে ক্রিকেটীয় তারায় ভরা অনুষ্ঠান ভারতবর্ষের কোনও মাঠে কখনও হয়েছে কি না সন্দেহ। কে কে থাকছেন, তার চেয়ে বলা সহজ কে কে থাকছেন না। সুনীল গাওস্কর থাকতে পারছেন না। রবি শাস্ত্রী আসছেন না। দিলীপ বেঙ্গসরকরের বাড়িতে পুজো। সহবাগ আটকে গিয়েছেন। এ ছাড়া সচিন থেকে সৌরভ, রাহুল থেকে লক্ষ্মণ, চন্দ্রশেখর থেকে বেদী সবাই হাজির। বিদেশ থেকে তিন জনকে উড়িয়ে এনেছে কুম্বলের পরিচালিত সংস্থা। চন্দ্রশেখর গত মাস চারেক ছিলেন সানফ্রানসিস্কোয়। ব্রিসবেন থেকে ফ্লাইট ধরানো হয়েছে প্রাক্তন কর্নাটক ক্যাপ্টেন সুব্রহ্মণমকে। সুব্রহ্মণম সম্পর্কে এ দিন কুম্বলে মুগ্ধ বিস্ময়ে বলছিলেন, “উনি ভারতের হয়ে টেস্ট খেলেছেন এটা প্রধান বিবেচ্য ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম ওঁকে বাদ দিয়ে কর্নাটক ক্রিকেট সম্পূর্ণ নয়। ভারতীয় ক্রিকেটে টাইগার পটৌডির যা অবদান, কর্নাটক ক্রিকেটে সুব্রহ্মণমের তাই অবদান। সত্তরের দশকে পুরো কর্নাটকের ক্রিকেট দর্শনটাই উনি বদলে দেন।”
তৃতীয় জন অবশ্যই রিচার্ড হ্যাডলি। শনিবারের সেরা আকর্ষণ স্যর রিচার্ডই। পঁচিশ বছর আগে এই মাঠেই তাঁর বিশ্বরেকর্ড ছিল। ফ্ল্যাশব্যাকে সেই স্মৃতিটা ফিরিয়ে আনতে চান কুম্বলে। এমনকী ভিভ রিচার্ডসকেও ফোন করেছিলেন কুম্বলে। যেহেতু চিন্নাস্বামীতেই ভিভের ক্রিকেট অভিষেক ঘটেছিল। কিন্তু ভিভ অ্যান্টিগার স্থানীয় ক্রিকেট লিগ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি।
চারমূর্তি

বেদী-চন্দ্র-প্রসন্নর সঙ্গে এক ফ্রেমে ধরা দিলেন কুম্বলে। শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে। ছবি: উৎপল সরকার
অনুষ্ঠানের জৌলুস অবশ্য তাতে কমছে না। এই প্রথম কাল এক মঞ্চে বসবেন সর্বকালের সেরা চার স্পিনার। বেদী-প্রসন্ন-চন্দ্র-কুম্বলে। এঁদের নিয়ে চ্যাট শো হবে। বরাবরের লাজুক চন্দ্রশেখর থাকতে চাইছিলেন না। তাঁকে কুম্বলে বলেছেন, কোনও কথা শুনব না। একটা আড্ডা হবে ক্যাপ্টেনদের। যেখানে এক মঞ্চে বহু দিন বাদে আজহার-সচিনকে দেখা যেতে পারে। সংগঠকেরা বললেন, আজহার তো আসবে বলে কথা দিয়েছে। ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আর একটা আড্ডা হওয়ার সম্ভাবনা। সেখানে রাহুল, সৌরভ, লক্ষ্মণ তিন জনের থাকার কথা। হ্যাডলির মঞ্চে ওঠার কথা কপিল দেবের সঙ্গে। কপিল এসে পড়তেন শুক্রবারই। কিন্তু দেশপ্রেম আজাদের মৃত্যুতে পরিকল্পনা বদলান। সংগঠকদের ধারণা তিনি চণ্ডীগড় গিয়ে আবার ফ্লাইট বদলে-টদলে চলে আসবেন অনুষ্ঠানের আগে।
কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থা স্থাপিত হয়ে ১৯৩৪-এ। সেই হিসেবে সংস্থার এটা ৭৯তম বছর। তা হলে সাড়ম্বরে প্ল্যাটিনাম জুবিলি পালিত হচ্ছে কেন? কেএসসিএ সচিব জাভাগল শ্রীনাথ বললেন, “৭৫ বছরের সময় যারা ছিল তারা কিছু করেনি। তাই আমরা করে যাচ্ছি।” ক্রিকেটমহলে কারও কারও মনে হচ্ছে আসন্ন ডিসেম্বরে সংস্থায় ভোটের আগে একটা ইমপ্রেস করার সুচতুর স্ট্র্যাটেজিও হতে পারে।
ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে হয় না তা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা থাকবে বলে। তাদের প্রথম মনে হবে এই রকম সমাবেশ কেউ কখনও করতে পারেনি। প্রাক্তন আর বর্তমান তারকাদের মিলেমিশে এ রকম আড্ডাও কেউ কখনও দেখেনি। এক দিকে হ্যাডলি সুইং বোলিংয়ের টিপস দিচ্ছেন বিনয় কুমারকে, তো অন্য দিকে বেদী জড়িয়ে ধরছেন রাহুল দ্রাবিড়কে। রাহুলের দেখা গেল শরীর আরও ছিপছিপে হয়েছে। কেউ একটা সেটা বলায় রাহুল বললেন, “আমি জানি ঠিক কোন শার্টগুলো বাছলে আমার ভুঁড়িটা দেখা যাবে না।” একই সঙ্গে বললেন, “আর ঠিক দুটো মাস। তার পর বাবা ক্রিকেটকে চিরবিদায়।” ৬ অক্টোবর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। সতেরো বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা দ্রাবিড় জেনে গিয়েছেন, ওটাই শেষ। “অনেক শান্তি বাবা। আর চাপ-টাপ নেই,” বললেন তিনি।
ও দিকে তখন ওয়াড়েকর খোঁজ করছেন, বিশ্বনাথ কেন আসছেন না? কেএসসিএ-র এক সদস্য বললেন, ভিশি গল্ফ খেলছেন। ওয়াড়েকর বললেন, “গল্ফ? পৃথিবীর কোন গল্ফ টুর্নামেন্ট রাতে হয়?” বিশ্বনাথ কিছু পরে ঢুকে বললেন, “ক্যাপ্টেন তুমি আর বদলালে না। আর সবাইকে ছেড়ে সব সময় আমার ঘরের দিকে নজর।” রজার বিনির সঙ্গে ততক্ষণে গুজগুজ করছেন প্রসন্ন। কেউ একটা ওয়াড়েকরকে এসে বলল, “প্রাস এখনও ১৯৭১ সিরিজে আপনার ওকে না খেলানোর দুঃখটা ভুলতে পারে না।” ওয়াড়েকর বললেন, “অদ্ভুত লোক। মন দিয়ে মাল খাচ্ছে। তার মধ্যে কিনা বেয়াল্লিশ বছরের পুরনো দুঃখ ফিরে আসছে?”
ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছেন ভগবত চন্দ্রশেখর। বহু দিন পর চন্দ্র জনসমক্ষে এলেন। তাঁকে দেখে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে লেটেস্ট মোবাইল নম্বরটা নেওয়ার জন্য। একমাত্র ওয়াড়েকরের কাছে দেখা গেল নম্বরটা রয়েছে। কিন্তু যে ভাবে সেভ আছে নম্বরটা, তাতে বেদীর তীব্র আপত্তি। লেখা রয়েছে ‘চন্দ্রইংল্যান্ড’। বেদী বললেন, “এটার মানেটা কী? এ ভাবে যদি সেভ করতেই হয় তা হলে লেখো চন্দ্রওভাল।” ও দিকে শ্রীনাথ তখন জনে জনে বোঝাচ্ছেন, ডিআরএস নিয়ে অপব্যাখ্যা হচ্ছে। প্রযুক্তির আলো মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। ফটোগ্রাফাররা জোর হুড়োতাড়া শুরু করলেন হ্যাডলি আর দ্রাবিড়কে একসঙ্গে আনা যায় কি না। তার মধ্যেই কে খবর দিল, আজহার একটু পরে ঢুকছেন।
এই প্রথম যেন খুনসুটি আর নির্মল আড্ডার মেজাজটা খানিক উধাও। কিছু পরে আবার তা ফেরত এল। আর চিন্নাস্বামীতে হয়তো বহাল থাকবে সেই প্রশান্তিই। আজহার আসুন বা না আসুন।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.