চেহারায় রাকুন, শুধু মুখটুকু যেন টেডি বিয়ার। তবু এত দিন এমন মুখের পরিচয় জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা!
জানা গেল সম্প্রতি। বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন স্তন্যপায়ী প্রাণীটি তাঁদের নয়া আবিষ্কার। নাম রাখা হয়েছে ‘ওলিংগুইতো’। বসবাস দক্ষিণ আমেরিকার বৃষ্টিঅরণ্যে। ‘জুকি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানীদের নয়া আবিষ্কার ।
ওয়াশিংটনের এক চিড়িয়াখানায় এমনই একটি প্রাণীর বাস ছিল বেশ কিছু দিন। তাকে ‘রিঙ্গার্ল’ নামে ডাকা হত। সকলে ভেবেছিল রাকুনের মতো দেখতে এই প্রাণীটি ‘ওলিংগো’ বা তার জাতভাই হবে। রাকুনকে অনেকটা আমাদের বেজির মতো দেখতে। আবার ওলিংগো নামক প্রাণীটিকে অনেকটা রাকুনের মতো দেখতে। কিন্তু পরোপুরি রাকুন নয়। |
রিঙ্গার্লের জাত নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তাই তার বংশরক্ষা করতে জাহাজে চাপিয়ে পাঠানো হয় এক চিড়িয়াখানা থেকে অন্য চিড়িয়াখানায়। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৬, টানা ন’বছর ধরে চলে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা-গবেষণা। কিন্তু বহু চেষ্টাতেও কোনও ওলিংগোকেই মনে ধরেনি রিঙ্গার্লের। তাই সে যাত্রা আর বংশরক্ষা হয়নি। কিন্তু একই সঙ্গে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কাই আরও জোরদার হয় রিঙ্গার্ল কোনও ওলিংগো নয়। প্রশ্ন জাগে, তবে কি এটি অন্য কোনও প্রাণী?
সেই উত্তরই মিলল এত দিনে। বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার হেলগেন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নিয়েই গবেষণা করেন। জানালেন, ওলিংগুইতো যে আলাদা প্রাণী, সে কথা তাঁর মাথায় আসে একটা জাদুঘরে গিয়ে। সেখানে ওলিংগো এবং রিঙ্গার্লের মতো প্রাণীর দেহাংশ, কঙ্কাল মিলিয়ে তাঁর সন্দেহটা আরও জোরদার হয় ‘রিঙ্গার্ল মোটেই ওলিংগোর জাতভাই নয়’। দেরি না করে প্রমাণ খুঁজতে তিনি রওনা হয়ে যান দক্ষিণ আমেরিকা।
সালটা ২০০৬। দক্ষিণ আমেরিকা সফরে ক্রিস্টোফারের সঙ্গী হয়েছিলেন রোল্যান্ড কেস। আর প্রথম রাতেই বাজিমাত। “জঙ্গলে খোঁজপর্ব শুরু করার প্রথম রাতেই দেখা হল তার সঙ্গে”, বললেন কেস। “মনে হচ্ছিল, আমাদের অপেক্ষাতেই ছিল।”
কেমন এই ওলিংগুইতো?
হেলগেন জানালেন, ছোটখাটো চেহারা। মুখখানা গোল, ছোট দু’টো কান। ঘন ছাই রঙের লোমশ স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে দেখলে মনে হবে যেন বিড়াল আর টেডি বিয়ারের সঙ্কর!
এদের পছন্দের খাবার বলতে ফল। খাদ্যের সন্ধানে গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায় ওলিংগুইতো। ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার পাহাড়ে ঘেরা বৃষ্টিঅরণ্যে এমন হাজারো ওলিংগুইতোর সন্ধান পেয়েছেন ক্রিস্টোফার ও রোল্যান্ড। তবে ভোজনে ফল পছন্দ হলেও, রাতের অন্ধকারই এরা ফল-শিকারে বের হয়। আর মিশে যায় জঙ্গলের ঘন কালো আঁধারে।
যে আঁধারে এত দিন ওলিংগুইতোকে নিয়ে লুকিয়ে ছিল অজানা বিজ্ঞান। |