শহরের মুখ
দুর্গম পাস
প্রায়ান্ধকার পথ। ছোট-বড় গর্তে ভরা। দুলে দুলে গাড়ি চলে। চার পাশে ছড়িয়ে আছে আবর্জনা। দুর্গন্ধে টেকা দায়। এ ছবি হাওড়া সেতুর কাছে তিনটি আন্ডারপাসের।
হাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতামুখী ট্যাক্সি ও ছোট গাড়ি এই তিনটি আন্ডারপাস দিয়ে রবীন্দ্র সেতুতে ওঠে। লরি বা বাস এই আন্ডারপাস ব্যবহার করে না। ফুটপাথ না থাকলেও অনেকে এই পথ ধরে হেঁটে যাতায়াত করেন। প্রায় ২০ ফুট উঁচু, ১০ ফুট চওড়া ও ১০০ মিটার দীর্ঘ তিনটি আন্ডারপাসের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেএমডিএ-র। গঙ্গার দিক থেকে প্রথমটিতে প্রায় সব সময়েই জল ও নোংরা জমে থাকে। ওই জায়গাটি কার্যত গণশৌচাগারে পরিণত হয়েছে। ফলে হেঁটে যাওয়া যায় না। মাঝের আন্ডারপাসটির মুখেই রয়েছে আবর্জনার স্তূপ। ভিতরে গর্তে ভরা। পুরো আন্ডারপাস কাদাজলে ভরা। কুকুর, বিড়াল ও ইঁদুর ঘুরে বেড়ায়।
তৃতীয় আন্ডারপাসটি কিছুটা উঁচু। কিন্তু এই আন্ডারপাসটিও গর্তে ভরা এবং সঙ্কীর্ণ। রাস্তায় জল জমলে গর্ত বোঝা যায় না। ফলে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়।
তিনটি আন্ডারপাসের ভিতরেই দু’টি করে আলো। কিন্তু এই আলোয় পথ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় না। গাড়ির আলোই ভরসা। নিকাশি বুজে গিয়েছে। সেখানে অনেক ভবঘুরে শুয়ে থাকে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই অঞ্চলে মাঝেমধ্যে চুরি-ছিনতাই ঘটে। অনেকেই এ জন্য আন্ডারপাস এড়িয়ে যান। ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে যাতায়াত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজছাত্রী বললেন, “ডবসন রোডে যাওয়ার জন্য কিছু দিন আগে ওই আন্ডারপাস দিয়ে যেতে হয়েছিল। ভাবতেই পারিনি এমন ভয়ানক জায়গা। অন্ধকার, নোংরা, দুর্গন্ধে হাঁটাই দায়। ইঁদুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুজে যাওয়া নিকাশির উপরে অনেকে শুয়ে আছেন। একাই ছিলাম। ভয়ে ভয়ে পেরিয়ে গিয়েছি। আর ওখান দিয়ে যাব না।” পুলিশ সূত্রে খবর, আন্ডারপাস থেকে চুরি-ছিনতাইয়ের কোনও অভিযোগ আসেনি। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “আন্ডারপাসে জোরালো আলো এবং সিসিটিভি লাগানোর জন্য কেএমডিএ-কে জানানো হয়েছে।”
হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি ও জঞ্জাল) দেবাশিস ঘোষ বলেন, “ওই অংশে নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার করা হয়। কোনও কারণে এ বার দেরি হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই সমস্ত জঞ্জাল সরিয়ে ফেলা হবে।” যদিও বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “সব সময় ওই চত্বরে নোংরা জমে থাকে। পুরসভা নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার করে না।” এই বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের অশোক ঘোষ বলেন, “বহু আগেই কেএমডিএ-কে চিঠি দিয়ে অবস্থার কথা জানিয়ে ছিলাম। আবারও জানাব।”
কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, “আন্ডারপাস ও সংলগ্ন লোয়ার রোড সংস্কারের জন্য ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দরপত্রও ডাকা হয়ে গিয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই কাজ চালু হবে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.