সম্পাদকীয় ২...
অধিকার ও কর্তব্য
তিহাস অনেক সময়েই এক জন ব্যক্তি হইতে শুরু হয়। দুর্গাশক্তি নাগপাল তেমনই ব্যক্তিবিশেষ। কিন্তু অন্যান্য বহু দৃষ্টান্তের মতোই এ ক্ষেত্রেও ব্যক্তি উপলক্ষ বা অনুঘটক, ইতিহাসের প্রকৃত পরিপ্রেক্ষিত দীর্ঘ দিন যাবৎ তৈয়ারি হইয়া উঠিতেছিল। ইতিহাসটি দুর্নীতির। উত্তরপ্রদেশে এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে ঠিক কী ঘটিয়াছে, তাহা এখনও তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু যে বালি খনন লইয়া এই ঘটনা, সাধারণ ভাবে তাহা এ দেশে দুর্নীতিকণ্টকিত, বিভিন্ন রাজ্যেই নদীখাত হইতে বেআইনি বালি তুলিবার অভিযোগ প্রবল এবং ব্যাপক। ইতিমধ্যেই আরও কয়েকটি অঞ্চলে এই ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করিতে গিয়া একাধিক আধিকারিক বিপন্ন বা বিব্রত হইয়াছেন। একের পর এক ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে দেশ জুড়িয়া আলোড়ন তুলিবার ফলে সমগ্র বিষয়টির মোকাবিলার প্রতি অভিভাবকদের দৃষ্টি পড়িয়াছে। ইহা সুলক্ষণ। আরও সুলক্ষণ ইহাই যে, এই ঘটনাগুলির সূত্রে বালি খননের মূল নীতি ও বন্দোবস্তটি সংস্কারের একটি উদ্যোগ শুরু হইয়াছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বালি খননের ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের উন্নততর নীতি প্রণয়ন ও তদারকির চেষ্টা চলিতেছে। জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল বলিয়াছে, পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র না থাকিলে কোনও স্থানে বালি তুলিতে দেওয়া চলিবে না। কেরলে সমুদ্রতীরের বালি তুলিবার উপরেও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ হইয়াছে।
সমস্যার মূল রহিয়াছে চাহিদা ও জোগানের টানাপড়েনে। সিমেন্ট তৈয়ারি এবং অন্য নানা প্রয়োজনে বালির চাহিদা বাড়িয়া চলিয়াছে। যেহেতু নদীখাত হইতে, এবং অংশত হ্রদ বা সমুদ্রতীর হইতে, বালি তুলিয়া বিক্রয় করা সহজ কাজ, যেহেতু তাহার উপর তদারকি চালানো কঠিন, সুতরাং এক একটি অঞ্চলে যথেচ্ছ খননের কারবার বিস্তৃত হইয়াছে। দুর্গাশক্তি নাগপালের ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটি যেমন। এই সব অঞ্চলে যে পরিমাণ বালি তোলা হইতেছে, নদীখাতে নূতন বালি জমা পড়িতেছে তাহার অনেক কম। কেরলের একটি এলাকায় নূতন বালি তৈয়ারির হার যত, বালি-খননের হার তাহার চল্লিশ গুণ। ইহার ফলে নদীখাতের ভূ-গঠন পরিবর্তিত হয়। তাহা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হইতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়াছিল, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণী বিধান মানিয়া বালি খনন নিয়ন্ত্রণ করিতে হইবে। সেই নিয়ন্ত্রণ কার্যকর হইতেছে, এমন প্রমাণ বিশেষ মেলে নাই।
সুপ্রিম কোর্ট এবং ট্রাইবুনালের নির্দেশের একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। বালি এই দেশের আইনে ‘মাইনর মিনারেল’ বা অ-প্রধান খনিজ হিসাবে নির্ধারিত, তাহার খনন নিয়ন্ত্রণের অধিকার রাজ্যের হাতে। কয়লা বা লোহার মতো ‘প্রধান খনিজ’-এর ক্ষেত্রে সেই অধিকার কেন্দ্রের। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যের অধিকার গুরুত্বপূর্ণ। খননের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশ অবশ্যমান্য বলিয়া গণ্য হইলে তাহা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল। তবে বহু রাজ্যের সরকারি কর্তারা পরিবেশ রক্ষায় সচেতন ও তৎপর হয় না, বরং তাহাদের ছত্রছায়ায় নানা দুর্নীতির কারবার প্রসারিত হয়, সেই কারণেই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের যুক্তি তৈয়ারি হয়। বালি-খননের ক্ষেত্রে তাহাই হইতেছে। অধিকার থাকিলে কর্তব্যও থাকে, এই প্রাথমিক কথাটি অখিলেশ যাদবদের মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কেবল নিজের সরকার বা রাজ্যের স্বার্থে নয়, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.