সম্পাদকীয় ১...
জনতার নামে
পার্বত্য দার্জিলিঙে বন্ধকে আগেই বেআইনি ঘোষণা করিয়াছিল কলিকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। সেখানে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য বন্ধ-আহ্বায়ক গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং বন্ধ ব্যর্থ করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাজ্য সরকার, উভয়কেই হাইকোর্ট সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়াছিল। মোর্চা নেতৃত্ব সেই নির্দেশ শুনিয়া বন্ধ-এর পরিবর্তে ‘জনতা-কার্ফু’ জারি করে। পরিণাম একই। পাহাড়ের জনজীবন আগের মতোই স্তব্ধ। ‘কার্ফু’ শব্দটির মধ্যেই জোর করিয়া চাপাইবার দ্যোতনা রহিয়াছে। জোর না খাটিলে গুলি চালাইয়া সন্ত্রস্ত করারও। তবে সেটা আইনশৃঙ্খলার সমূহ অবনতি রুখিতে প্রশাসন জারি করে। মোর্চা নেতৃত্ব তাহা করার অধিকারী নয়। হাইকোর্টের বিচারপতিগণ তাই যৎপরোনাস্তি অসন্তুষ্ট। তাঁহারা এই তথাকথিত ‘জনতা-কার্ফু’কেও বেআইনি ঘোষণা করিয়াছেন। ইহা যে বন্ধ-এরই নামান্তর, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সে কথা জানাইয়া দেওয়া হইয়াছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে ইহা অচলাবস্থা ঘুচাইতে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণের সুবর্ণসুযোগ।
আদালতের এই সমালোচনা প্রত্যাশিতই ছিল। মোর্চা নেতৃত্ব জনতা-কার্ফুকে ‘স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের প্রকাশ’ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছে। যাহারাই জনজীবন অচল করিয়া নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করে, তাহারাই বরাবর এমন অজুহাত দিয়া থাকে। জনসাধারণ চাহিতেছে বলিয়াই যেন বন্ধ-অবরোধ! সংগঠিত রাজনৈতিক দলগুলি বরাবর নিজেদের কর্মসূচি একতরফা ভাবে, উপর হইতে জনসাধারণের উপর চাপাইয়া দেয়। কার্যত এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দল যে জনসাধারণকে ঘরে আটক থাকিতে, দোকানপাট না খুলিতে, যানবাহন না চালাইতে মানুষকে বাধ্য করে, দেশবাসীর অভিজ্ঞতা বহু বার তাহার সাক্ষী। গায়ের জোরে, ভয় দেখাইয়া, সংঘশক্তির চাপে ব্যক্তি-মানুষের উপর আরোপিত সেই বন্ধ কিংবা কার্ফুকে অতঃপর ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ বলিয়া চালানো হয়। আদালতের বক্তব্য: সংগঠিত রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে স্কুল বন্ধ রাখিয়া ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার, যানবাহন চালাইতে না দিয়া রোগীদের চিকিৎসিত হওয়ার অধিকার কিংবা জনজীবন স্তব্ধ করিয়া দরিদ্র শ্রমজীবীদের এক দিনের রুজি উপার্জনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করার অধিকার সংবিধান দেয় নাই। মোর্চা নেতৃত্ব জনতা-কার্ফুর নামে সেই অনধিকারই অনুশীলন করিতেছে। ইহা অন্যায়। বস্তুত, বেআইনি। বস্তুত, এই সমগ্র ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ আন্দোলনটি যে ভীতি-প্রদর্শন ও জবরদস্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, আদৌ জনসাধারণের আগাম অনুমোদন-সাপেক্ষ নয়, এ বিষয়ে কোনও পর্যায়েই কোনও সংশয় ছিল না। অচলাবস্থা আবাহনের যে রাজনীতি ইদানীং সব রাজনৈতিক দলই কম-বেশি অনুশীলন করে, তাহার মধ্যে এ জন্যই কোনও নৈতিকতা থাকে না, মহাত্মা গাঁধীর অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে যাহা থাকিত।
জনসাধারণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্বের দাবি মোর্চা নেতৃত্ব কিংবা অন্যান্য অচলাবস্থার পুজারিদের মানায় না। এমন ‘আন্দোলনে’ সাধারণ মানুষের কার্যত বিশেষ কিছু করার থাকে না, নিষ্ক্রিয় দর্শক রূপে তাঁহারা নেতাদের যথেচ্ছাচার সহ্য করিয়া যান। পশ্চিমবঙ্গের বন্ধ-সংস্কৃতিতে দীর্ঘ কাল ধরিয়া এমন অনাচার বিনা প্রতিবাদে চলিয়া আসিয়াছে। পার্বত্য দার্জিলিঙেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বন্ধক রাখিয়া গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনকারীরা অতীতে সুবাস ঘিসিংয়ের জি এন এল এফের, বর্তমানে বিমল গুরুঙ্গের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার স্বেচ্ছাচারকে নিরুপায় পাহাড়বাসীর উপর চাপাইয়া দিয়া তাহাকে স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলনের বৈধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে চাহিতেছে। কলিকাতা হাইকোর্ট সঙ্গত ভাবেই এই অপপ্রয়াসের নিহিত প্রতারণাটি উন্মোচন করিয়া দিয়াছে। অতঃপর আন্দোলনজনিত ক্ষয়ক্ষতির পূরণের দায় নির্দিষ্ট করার পালা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.