|
|
|
|
বক্তৃতা বিতর্কে দলেরই অস্বস্তি বাড়ালেন আডবাণী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
লালন কলেজে নরেন্দ্র মোদী।
দু’জনেই বক্তৃতা দিয়েছেন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে। এই বক্তৃতা-পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই একটি মন্তব্য করেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। সেই দু’টি বক্তৃতা আর একটি মন্তব্য ঘিরেই জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। যে বিতর্ক আখেরে বেশ অস্বস্তিতেই ফেলেছে বিজেপিকে।
স্বাধীনতা দিবসের সকালে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠেছে উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সব প্রসঙ্গই। এই বক্তৃতার কিছু পরে গুজরাতের ভুজ-এর লালন কলেজে গিয়ে মোদী কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মনমোহনকে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার খুঁটিনাটি তুলে তাঁকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মোদী। প্রকারান্তরে বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের অরাজক পরিস্থিতিতে আমূল বদল আনবেন।
মোদীর এই বক্তৃতা নিয়ে বিতর্ক ভাল করে শুরু হওয়ার আগেই প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী একটি মন্তব্য করলেন। মোদীর বক্তৃতা শেষের কিছু পরে নিজের বাসভবনে আডবাণী বললেন, “সমালোচনা করার দিন আজ নয়।”
আডবাণীর এই মন্তব্যই গোটা পরিস্থিতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। মোদী যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন, তাতে বেজায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতৃত্ব। আডবাণীর মন্তব্য তাঁদের হাতে বাড়তি অস্ত্র দিয়েছে। যা নিয়ে একের পর এক কংগ্রেস নেতা মোদীকে নিশানা করতে নেমে পড়েছেন। তাঁরা কার্যত আডবাণীকে সমর্থন করে মোদীকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “আমরা আডবাণীর বক্তব্যকে সমর্থন করি। মোদীর ক্ষমতার খিদের কোনও শেষ নেই!” কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার কথায়, “মোদী বিজেপির সম্পদ হলেও গোটা দেশের জন্য বিড়ম্বনার কারণ!” নরেন্দ্র মোদীকে ‘কুয়োর ব্যাঙ’ বলতেও ছাড়েননি বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। |
|
আডবাণীর মন্তব্যের পরে বিতর্কের তির তাঁর দিকেই এ ভাবে ঘুরে যাওয়ায় বেজায় চটেছেন মোদী। বেশ অস্বস্তিতেই পড়েছে বিজেপি। গতকালই বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের কাছে মোদী অভিযোগ করেছেন, যখন দেশ জুড়ে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া তোলার চেষ্টা হচ্ছে, তখন আডবাণীর মন্তব্য সেই সম্ভাবনাকেই নষ্ট করার চেষ্টা। অরুণ জেটলির সঙ্গেও গত কাল কথা হয় মোদীর। অরুণও মোদীকে সমর্থন করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রাজনাথের সঙ্গে। ঠিক হয়, দল আনুষ্ঠানিক ভাবে মোদীর পাশেই থাকবে। এর পরেই আজ বিজেপি মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন বলেন, “বিরোধী দলের কাজই হল সরকারের সমালোচনা করা। আর তা তো দিনক্ষণ দেখে করা সম্ভব নয়!” অরুণের যুক্তি, আমেরিকা-সহ পৃথিবীর একাধিক সভ্য তথা গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় নীতি নিয়ে বিতর্ক হয়। সেখানে একটি রাজ্যের গভর্নর প্রয়োজনে প্রেসিডেন্টেরও সমালোচনা করতে পারেন।
আনুষ্ঠনিক ভাবে আডবাণী দলকে জানিয়েছেন, মোদী ভুজে কী বলেছেন, তার ভিত্তিতে তিনি বক্তব্য রাখেননি। ঘনিষ্ঠ মহলেও প্রবীণ এই নেতা জানিয়েছেন, মোদী কী বলেছেন, তা তিনি জানতেনই না। কারণ স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় বক্তৃতা দিয়েছেন সকাল সাতটায়। মোদী ভুজে বক্তব্য রেখেছেন সকাল ন’টায়। আর আডবাণী লালকেল্লার অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে সকাল দশটা নাগাদ ওই মন্তব্য করেছেন। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে আডবাণী এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, স্বাধীনতা দিবসে মোদী যে ভাবে বক্তৃতা দিয়েছেন, তা জানার পরে তাকে তিনি সমর্থন করছেন না। তাঁর বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় একজন মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি অঙ্গরাজ্যের প্রধান। সাংবিধানিক সম্পর্কের প্রতি মর্যাদা রেখে ১৫ অগস্টের দিনে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করাটা অশোভন।
এ নিয়ে কার্যত দু’ভাগ বিজেপি নেতৃত্বও। আডবাণী-পন্থীদের কথায়, “মোদী নিঃসন্দেহে বিজেপির জনপ্রিয়তম বক্তা। বক্তৃতায় তিনি যে কোনও দিন মনমোহনকে দশ গোল দেবেন। কিন্তু এটাও ঠিক, লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ স্বাধীনতা দিবসে যথার্থ রাজনীতিক হওয়ার সুযোগ হারালেন মোদী। কারণ, কোনও নির্বাচনী জনসভায় নয়, একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি।” মোদী-পন্থীদের পাল্টা মন্তব্য, “প্রতিটি বক্তৃতাই রাজনৈতিক। মনমোহন গতকাল যখন খাদ্য সুরক্ষাকে সরকারের প্রধান কর্মসূচি হিসেবে তুলে ধরেন, তখন তা আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা থাকে না। তা প্রাক্ নির্বাচনী রাজনৈতিক বক্তৃতায় পরিণত হয়। তাই মোদী যদি ১৫ অগস্টের মঞ্চকে ব্যবহার করে কংগ্রেস বিরোধিতার তাস খেলতে চান, তা হলে কী অন্যায় করেছেন!”
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আগামিকাল দিল্লিতে অনুষ্ঠান করবেন মোদী। বিজেপি কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করার পাশাপাশি দলের মুখপাত্রদের নিয়েও বৈঠক করার কথা তাঁর। এখনও পর্যন্ত সাংবাদিক বৈঠক করার কর্মসূচি না থাকলেও চলতি বিতর্কের আবহে তিনি কিছু বলেন কি না, সে দিকেই তাকিয়ে সব পক্ষ। |
|
|
|
|
|