|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
প্রতিটি ছবিতেই অনুভব করা যায় সময়ের হৃদ্স্পন্দন |
স্টুডিয়ো ২১-এ অনুষ্ঠিত হল একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ |
সাম্প্রতিক চিত্রকলার পরিমণ্ডলে অনেক তরুণ/ তরুণী শিল্পী নিমগ্ন ভাবে কাজ করছেন। একবিংশ শতকের প্রথম দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বা আর একটু পরে, দ্বিতীয় দশকের গোড়া থেকে যাঁরা শুরু করেছেন, তাঁদের অনেকের কাজেই এক ধরনের চঞ্চলতা বা অভিমুখহীনতা লক্ষ করা যায়। আর্ট কলেজে অধ্যয়নের সময় তাঁরা ঐতিহ্য দেখেছেন, আবার ঐতিহ্যকে অতিক্রম করে বিশ্ব জুড়ে রূপ বা আঙ্গিক নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখেছেন। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত তাঁরা অনুভব করছেন এই সময়ের দিশাহীনতা। হিংসা ও সন্ত্রাসের নানা রূপ প্রতিনিয়ত তাঁদের বিহ্বল করছে। সুস্থ বাঁচার কোনও দৃঢ় মূল্যবোধ কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। এ রকম নানাবিধ সমস্যা তাঁদের ব্যক্তিসত্তা ও শিল্পী চেতনাকে আলোড়িত করছে। কোনও বিশ্বাসে তাঁরা স্থির হতে পারছেন না। এর প্রতিফলন পড়ছে তাঁদের কাজে।
স্টুডিয়ো ২১-এ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ‘মনসুন মিক্স’ শিরোনামে বর্ষাকালীন প্রদর্শনী। ১১ জন অতি-তরুণী/তরুণ শিল্পীর ছবি দেখার সুযোগ হল সেখানে। এক কথায় বলতে গেলে পূর্বোক্ত অভিমুখহীনতাই এই প্রদর্শনীর প্রধান সুর। প্রদর্শনীর উপস্থাপনায় সুচিন্তিত পরিকল্পনার অভাব আছে। শিল্পী বা তাঁর কাজ নির্বাচনের কোনও নির্দিষ্ট নিরিখ নেই। ‘ডকুমেন্টেশন’ বা তথ্য পঞ্জীকরণও অসম্পূর্ণ। এ সমস্ত সত্ত্বেও বিচ্ছিন্ন এই ছবিগুলো যখন আমরা পরপর দেখে যাই, তখন এই সময়ের হৃদস্পন্দন কিছুটা অনুভব করতে পারি। এক কথায় তাকে বলা যায় অভিমুখহীনতা বা দর্শনের দারিদ্র।
সুকান্ত হাজরার ছবির আঙ্গিক গড়ে উঠেছে উত্তর-প্রতিচ্ছায়াবাদ ও অভিব্যক্তিবাদ মিলিয়ে। ‘ট্যুরিস্ট’ শীর্ষক মিশ্র মাধ্যমটিতে এক মধ্যবয়সী মহিলাকে দেখা যাচ্ছে ডাব হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে। |
|
প্রদর্শনীর একটি ছবি |
দ্বিতীয় ছবিটিতে তিনি বিশ্বের শীর্ষে বসে থাকা এক মানুষকে রূপায়িত করতে চেয়েছেন। তির্যক প্রতিবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে এই ছবিতে। সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায় ‘বার্ন অল’ শীর্ষক ছবিতে প্রচলিত রূপরীতিকে অতিক্রম করার চেষ্টা করেছেন। একটি পুরু বোর্ডকে কেটে বের করে এনেছেন জটিল ও কিমাকার এক মুখাবয়ব। চন্দনা মুখোপাধ্যায়ের কল্পরূপাত্মক উপস্থাপনা দিশাহীন উত্তপ্ত নগর জীবনের আলেখ্য রচনা করেছে। ‘মি ইন মাইসেল্ফ’ শীর্ষক তেলরঙের ক্যানভাসে একটি ট্যাক্সিকে দুমড়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তুলি ও প্যালেট হাতে শূন্যে উড়ছে একটি ডানা-ওয়ালা মেয়ে।
মৃণাল দেববর্মার ছবি কার্টুনধর্মী। কিন্তু স্বকীয় কোনও আঙ্গিক গড়ে ওঠেনি। আশিস চক্রবর্তীর ‘স্টোলেন কিস’ শীর্ষক অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটি সহজ ও স্বচ্ছন্দ। দু’টি কালো ছাগলের মুখ দু’পাশ থেকে এসে চুম্বনের ভঙ্গিতে মিলিত হতে চেষ্টা করছে। তিমির ব্রহ্মের ‘হানি ম্যান’ শীর্ষক অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটিও কার্টুনধর্মী এবং পপ আর্ট অনুপ্রাণিত। অভিমুখহীনতার অন্যতম দৃষ্টান্ত অরুণিমা সান্যালের তিনটি ছোট অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাস। তার একটিতে যেমন গভীর বর্ণের সমতল প্রেক্ষাপট।
তার উপর একটি চশমা পড়ে আছে। দেবস্মিতা সামন্তর অ্যাক্রিলিক, কোলাজ ও সেরিগ্রাফে করা তিনটি ছবির শিরোনাম ‘মাই হিরো’। খানিকটা আলোকচিত্রধর্মী উপস্থাপনা।
অপু দাশগুপ্তের জলরঙের ড্রয়িংগুলিতে অবয়বী প্রতিমাকল্প আছে। কিন্তু আখ্যান তৈরির প্রবণতা নেই। অনির্বাণ ঘোষের পাঁচটি ছাপচিত্রধর্মী রচনার শিরোনাম ‘জাঙ্ক ইয়ার্ড’। খুবই সাংকেতিক ভাষায় তিনি প্রযুক্তি অধ্যুষিত বিমানবিক পরিস্থিতির সমালোচনা করেছেন। শান্তনু মিত্রের চারটি জলরঙের ছবিতে উঠে এসেছে চারপাশের হিংসার পরিমণ্ডল। যেমন একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে পিস্তল ধরা হাত বিশিষ্ট একটি অবয়ব চিত্রক্ষেত্রের নীচ থেকে উপরে উঠে গেছে। একই অবয়ব পুনরাবৃত্ত হচ্ছে।
একই হিংসা পুনরাবৃত্ত হচ্ছে। আশিস চক্রবর্তীর কাগজের উপর অ্যাক্রিলিকে আঁকা দুটি ছবির শিরোনাম ‘ব্যাচেলার বেড’। শূন্য ঘর। শূন্য বিছানা। বিছানার উপর তোশক, বালিশ ইত্যাদি। তারই পাশে একই শয্যায় অধিষ্ঠিত শঙ্কা উদ্রেককারী যন্ত্র। সংক্ষিপ্ত কথোপকথন।
তবু নির্মম ট্র্যাজেডির আভাসবাহী। তা সত্ত্বেও বলতে হয়, আরও কি গভীরে যাওয়ার, ব্যাপ্ত হওয়ার প্রয়োজন ছিল না তাঁর। তাঁর তৃতীয় ছবিটি অনামা। একটি ছাগলকে যন্ত্রবদ্ধ করার আলেখ্য। এ রকম অল্পস্বল্প সাফল্যকণা। তবু যেন অধরা থাকে সামগ্রিক পরিপূর্ণতা। |
|
|
|
|
|