সম্পাদকীয় ১...
ভীরুতার পরিণাম
জ্বর ব্যাধি নহে, ব্যাধির লক্ষণ। কিন্তু জ্বর বাড়িলে, প্রকৃত চিকিৎসার পাশাপাশি, উত্তাপ কমাইবার জন্য ঔষধ দিতে হয়। ভারতীয় অর্থনীতির যে রোগলক্ষণটি লইয়া সরকার ইদানীং বিশেষ উদ্বিগ্ন, তাহা টাকার ক্রমাগত মূল্যহ্রাস। এক কালে ডলার তথা বিদেশি মুদ্রার সাপেক্ষে টাকার দাম সরকারি নির্দেশে বাঁধা থাকিত, নিতান্ত প্রয়োজনে বিশেষ সরকারি ঘোষণায় টাকার দাম কমানো হইত, সেই ঘোষণা বড় খবর হইত ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক অবমূল্যায়নের প্রতিক্রিয়ায় সে কী কলরব, আজও অনেকের মনে আছে। সেই ভারত অতীত। ডলার এবং টাকার বিনিময় মূল্য এখন অনেকটাই বাজারের হাতে। সম্প্রতি বাজারে আগুন লাগিয়াছে, ডলারের দাম নিরন্তর ঊর্ধ্বগামী। ইহার কারণ: এক, আমদানি ও রফতানির ব্যবধান বাড়িতেছে, দুই, বিদেশি মূলধনের বিনিয়োগে ভাটার টান। ডলারের চাহিদা বেশি, জোগান কম। সুতরাং টাকা নামিতেছে, ডলার চড়িতেছে। তাপ কমানো চাই।
অর্থমন্ত্রী জ্বর কমাইবার ঔষধ দিয়াছেন। এক, সোনা-রুপার মতো মূল্যবান অলঙ্কার-পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক বাড়াইয়া দশ শতাংশ করিয়াছেন, যাহাতে আমদানি কমে। অচিরে আরও নানা বিলাসপণ্যের উপর আমদানি শুল্ক বাড়িবে। অর্থমন্ত্রী চলতি বছরে আমদানি-রফতানির ঘাটতিকে জিডিপি’র ৩.৭ শতাংশে সীমিত রাখিবার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করিয়াছেন, এখন অনুপাত ৪.৮ শতাংশ। কঠোর আমদানি নিয়ন্ত্রণ ভিন্ন অনুপাতটি কমাইবার উপায় আপাতত নাই। দুই, বিদেশি লগ্নি ও ঋণের পথ সুগম করিবার জন্যও নানা নীতি ঘোষিত হইয়াছে। তাহা ঘাটতি পূরণের পক্ষে আপাতত সহায়ক হইবে।
আগুন লাগিলে দমকল ডাকিতেই হয়। কিন্তু জ্বর কমিলেই ব্যাধির নিরাময় হইবে না। মূল ব্যাধি একটিই। আমদানির জন্য যত ব্যয়, রফতানি হইতে আয় তাহা অপেক্ষা কম, এবং ব্যবধান বাড়িয়া চলিয়াছে। বিশ্ব বাজারে মন্দা রফতানি সংকোচনের একটি বড় কারণ, কিন্তু ভারতীয় কৃষি, শিল্প ও পরিষেবার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ব্যর্থতাও এ জন্য দায়ী। এই সমস্যা নিরসনে সরকার কী করিয়াছে? শ্রম আইন সংস্কার বা পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো কাজগুলি বিশ বাঁও জলে। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে রফতানি বৃদ্ধির ভরসা কম। আমদানি ব্যয় কমানো জরুরি। পুরানো মতে আমদানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করিয়া নয়, নূতন মতে, বাজারকে কাজ করিতে দিয়া। বিশেষত, পেট্রোলিয়মের দাম বিশ্ববাজারের সহিত ওঠানামা করিতে দেওয়া উচিত ছিল, তাহা হইলে জ্বালানির আমদানি ও তাহার ব্যয় এই উচ্চতায় পৌঁছাইত না। কিন্তু দীর্ঘদিন তাহা হয় নাই, ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের দাম ভর্তুকির সাহায্যে কম রাখা হইয়াছে, মাসুল গনিয়াছে জাতীয় অর্থনীতি। শেষ পর্যন্ত চাপে পড়িয়া তেল ও গ্যাসের বাজারে কিছু বিনিয়ন্ত্রণ আসিয়াছে বটে, কিন্তু প্রকৃত মুক্তি অনেক দূরে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম স্বীকার করিয়াছেন, দীর্ঘদিন প্রয়োজনীয় কাজ না করিবার মাসুল গনিতে হইতেছে। এই ‘অক্রিয়তা’র দায় শেষ বিচারে যাঁহার উপর বর্তায়, তিনি মনমোহন সিংহ। প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ছিল সময় থাকিতে যথার্থ ঔষধ প্রয়োগ করা, বিশেষত তেলের দাম বাড়াইতে দেওয়া। প্রয়োজনে তিক্ত ঔষধ দিতে হয়, তাহা অর্থনীতিতে প্রশিক্ষিত মনমোহন সিংহের না-জানিবার কথা নহে। ১৯৯১ সালে তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। চালকের আসনে বসিয়া তিনি সেই সাহস দেখাইতে পারেন নাই। যথার্থ নেতৃত্ব কেবল প্রজ্ঞা দাবি করে না, বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানসিক সামর্থ্যও দাবি করে। তবে কি নব্বইয়ের সংস্কারের প্রকৃত যন্ত্রী ছিলেন নরসিংহ রাওই? মনমোহন সিংহ তাঁহার যন্ত্রমাত্র?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.